জুমবাংলা ডেস্ক : শুরু হয়েছে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুটকি মৌসুম। বনবিভাগের কাছ থেকে পাস নিয়ে দুবলার চরে যেয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন জেলেরা। দুবলায় পৌঁছানোর সাথে সাথে জেলেদের এক গ্রুপ চরে ঘর বাঁধতে শুরু করেন। আর অপর গ্রুপ সাগরে মাছ ধরতে নেমে পড়েন। জেলেদের ফেলা জালের প্রথম খেপের মাছও চলে এসেছে চরে। সেগুলো বেছে চরে শুকাতেও দিয়েছেন জেলেরা। তাদের এই কর্মযজ্ঞ চলবে পাঁচ মাস।
এর আগে উপকূলের জেলেরা শুটকি মৌসুমকে ঘিরে নিজ নিজ এলাকায় তাদের জাল, নৌকা মেরামত ও সকল সরঞ্জামাদি প্রস্তুত করেন। এরপর বিভিন্ন এলাকার জেলেরা দুবলার উদ্দেশ্যে বৃহস্পতিবার থেকে জড়ো হন মোংলায়। পরে শুক্রবার গভীর রাতে এ সকল জেলেরা বনবিভাগের কাছ থেকে পাসপারমিট নিয়ে দুবলার চরে যাত্রা শুরু করেন।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব জানান, ৩ নভেম্বর (শুক্রবার) থেকে বঙ্গোপসাগর পাড়ে সুন্দরবনের দুবলার চরে শুরু হয়েছে শুটকি মৌসুম। এ শুটকি মৌসুম চলবে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত। টানা পাঁচ মাস ধরে সেখানকার চরে থাকতে হবে হাজার হাজার জেলেদের। সাগর পাড়ের এ চরে তাদের থাকতে গড়তে হবে অস্থায়ী কাঁচা থাকার ঘর, মাছ শুকানো চাতাল ও মাচা। আর সেসব স্থাপনা নির্মাণে কোন প্রকার ব্যবহার করা যাবেনা সুন্দরবনের কোন গাছপালা।
তাই বনবিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী দুবলার চরে যাওয়া জেলেরা সঙ্গেই নিয়ে যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী।
আলোরকোল অস্থায়ী ক্যাম্প ও দুবলা জেলে পল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দীলিপ মজুমদার জানান, উপকূলের বিভিন্ন এলাকার জেলেরা শুক্রবার গভীর রাতে রওনা হয়ে এসে ভোর রাতেই পৌঁছে যান দুবলার চরে। আগত জেলেরা চরে ঘর বাঁধতে শুরু করেছেন। জেলেদের এ থাকার ঘর বাঁধতে সময় লাগবে দুই-তিনদিন। এদিকে চরে এসেই ঘর, মাচা ও চাতাল তৈরিসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নামিয়ে রেখে জাল এবং নৌকা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে নেমেছেন জেলেরা। জালের প্রথম খেপের মাছও দুপুরে চলে এসেছে চরে। চরে সেই মাছ বাঁচাই করে শুকাতেও দিয়েছেন জেলেরা।
দুবলার চরের মনোহারী দোকান ব্যবসায়ী মোঃ ফারুক বলেন, বৃহস্পতিবার উপকূলের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা জেলেরা প্রথমে মোংলার মোংলা নদী ও পশুর নদীতে অবস্থান নেন। পরে বনবিভাগের কাছ থেকে পাস নিয়ে শুক্রবার গভীর রাতে দুবলায় যেতে শুরু করেন। কেউ কেউ শুক্রবার গভীর রাতে গেছেন, কেউ শুক্রবার ভোরে, আবার কেউ দুপুরে গেছেন দুবলার উদ্দেশ্যে।
সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগ জানায়, এবারের শুটকি মৌসুমকে ঘিরে উপকূলের বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩০ হাজার জেলে সমবেত হবেন দুবলার চরে। দুবলার চরের ওই সকল জেলেরা প্রায় দেড় হাজার ট্রলার নিয়ে মাছ ধরবেন গভীর সাগরে। সাগর থেকে আহরিত বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বাছাই করে শুটকি করবেন তারা। এরপর সেই শুটকি বিভিন্ন মোকামে চালান করবেন তারা।
এ বছর চরে জেলেদের থাকা ও শুটকি সংরক্ষণের জন্য ১ হাজার ১শ’ ৮টি জেলে ঘর ও ৭৮টি ডিপো স্থাপনের অনুমতি দিয়েছেন বনবিভাগ। গত শুটকির মৌসুমে দুবলার চর থেকে বনবিভাগের রাজস্ব আদায় হয়েছিল ছয় কোটি টাকা। আর এবার টার্গেট ধরা হয়েছে সাত কোটি টাকা।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মত প্রাকৃতিক দুযোর্গে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা মাথা নিয়েই পরিবার পরিজন রেখে ৫ মাস ধরে দুবলার চরে শুটকি তৈরিতে ব্যস্ত থাকবেন হাজার হাজার জেলে। আর মৌসুম শেষেই লাভ-লোকসানে হিসেব কষেই ফের বাড়িতে ফিরবেন এ সকল জেলে-মহাজনেরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।