জুমবাংলা ডেস্ক : রংপুরে তিস্তা নদীর চরে উৎপাদিত হাইব্রিড জাতের মিষ্টিকুমড়া রপ্তানি হচ্ছে মালয়েশিয়ায়। চরের খেত থেকে রপ্তানিকারকেরা এগুলো সরাসরি সংগ্রহ করে দেশের বাইরে পাঠান। খেতে বসে ভালো দামে ফসল বিক্রি করতে পেরে কৃষকেরাও খুশি।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, রংপুরের তিনটি উপজেলা গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছার চরাঞ্চলে হাইব্রিড জাতের মিষ্টিকুমড়ার চাষ হয়েছে। এ বছর ৩৭০ হেক্টর জমিতে মিষ্টিকুমড়ার আবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। তবে ৩৮৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টিকুমড়ার আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ২২ থেকে ২৫ মেট্রিক টন করে ৭ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, উৎপাদন হবে এর চেয়ে বেশি। কৃষি বিভাগের দিকনির্দেশনা ও এমফোরসি প্রকল্পের সহায়তায় কৃষকদের খেত থেকে সরাসরি মিষ্টিকুমড়া কিনে প্যাকেটজাত করে পাঠানো হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, খেত থেকে মিষ্টিকুমড়া ওঠানো হয়েছে। দুটি রপ্তানিকারণ প্রতিষ্ঠানের লোকজন সেখান থেকে সেগুলো কিনে নিচ্ছেন।
গঙ্গাচড়া উপজেলার ছালাপাক চরের বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব কৃষক চান মিয়াকে লড়তে হয় বন্যা ও নদী ভাঙনের সঙ্গে। এবার চরের জমিতে মিষ্টিকুমড়ার ভালো ফলন ও দাম ভালো পেয়ে তিনি খুশি। তিনি এবার ৮০ শতাংশ জমিতে মিষ্টিকুমড়া আবাদ করেছেন। বীজ, সার, জমি তৈরি ও সেচ দেওয়াসহ আবাদে তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে রপ্তানিকারকেরা তাঁর খেত থেকে ১৯ টাকা কেজি মূল্যে কিছু মিষ্টিকুমড়া কিনে নিয়েছেন। এবার তাঁর ৫০ হাজার টাকা লাভ হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি।
চান মিয়ার মতো তিস্তার বালুচরে মিষ্টিকুমড়ার চাষাবাদ করে আসছেন লিটন মিয়া, মকসুদ আলী, এনামুল ও মজিবর রহমানের মতো অনেক কৃষক। ছালাপাক গ্রামের তিন হাজার বাসিন্দার ৮৫ ভাগই কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। নিম্ন আয়ের এসব পরিবার এখন চরজুড়ে মিষ্টিকুমড়া, আলু, ভুট্টা, বাদাম, পেঁয়াজ ও ধান চাষাবাদ করেন। গেল কয়েক বছর ধরে লাভ বেশি হওয়ায় মিষ্টিকুমড়া চাষের দিকে ঝুঁকেছেন তাঁরা।
ছালাপাক গ্রামের বুলবুলি বেগম বলেন, এসব মিষ্টিকুমড়ার একেকটির ওজন চার থেকে পাঁচ কেজি হয়। তবে চাহিদা বেশি তিন কেজি ওজনের মিষ্টিকুমড়ার। তিনি ১৬ থেকে ১৯ টাকা কেজি দরে মিষ্টিকুমড়া বিক্রি করছেন। রপ্তানি শুরু হওয়াতে আপাতত দাম কমার আশঙ্কা নেই। এখন পর্যন্ত তিনি ৫০ হাজার টাকার মিষ্টিকুমড়া বিক্রি করেছেন। আরও মিষ্টিকুমড়া বিক্রি করা হবে বলে তিনি জানালেন।
সরাসরি কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ করে খেত থেকে মিষ্টিকুমড়া কিনে নিয়ে গঙ্গাচড়ার মতলেব বাজার ও সদর উপজেলার ফতেপুর বাজারে সংরক্ষণ গুদাম ঘরে রাখছেন রপ্তানিকারকেরা। সেখানেই প্যাকেটজাত করা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, দুই বছর ধরে রংপুর জেলার চরের বাজারব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ করছে চর বাজার উন্নয়ন প্রকল্প ‘মেকিং মার্কেট ওয়ার্কস ফর দ্য চর’ (এমফোরসি)। এমফোরসি প্রকল্পের উদ্যোগ ও সহায়তায় গত কয়েক বছর ধরে ভূমিহীনরা চর এলাকায় মিষ্টিকুমড়া চাষ করছেন।
মিষ্টিকুমড়া রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রংপুর এগ্রোর কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, তাঁরা কৃষকদের খেত থেকে সরাসরি ১৭ থেকে ১৯ টাকা কেজি দরে মিষ্টিকুমড়া কিনছেন। এরপর প্যাকেটজাত করে বস্তায় ভরে ট্রাকে করে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছেন। মালয়েশিয়ায় চরাঞ্চলের মিষ্টিকুমড়ার চাহিদা আছে। ইতিমধ্যে এই মিষ্টিকুমড়া বিদেশে পাঠানো শুরু হয়েছে। ১০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের মিষ্টিকুমড়া রপ্তানির সম্ভাবনা আছে বলে তিনি জানান।
ঢাকার থিংস টু সাপ্লাই নামে একটি প্রতিষ্ঠানও মালয়েশিয়ায় মিষ্টিকুমড়া রপ্তানি শুরু করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী জিয়াউল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘এ বছরই শুরু করলাম। ইতিমধ্যে ১০০ মেট্রিক টন মিষ্টিকুমড়া রপ্তানি করেছি।’
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, তিস্তার চরের এই মিষ্টিকুমড়া চাষে কীটনাশক ও কোনো ধরনের ক্ষতিকারক ওষুধ ব্যবহার করা হয় না। ফলে দেশ ও বিদেশের বাজারে এসব কুমড়ার চাহিদা বেশি। সূত্র : প্রথম আলো
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।