সুয়েব রানা, সিলেট : সিলেট জৈন্তাপুর’র হরিপুরের স্বনামধন্য প্রয়াত হুজুর সিলেটের মাটিও মানুষের হৃদয়ে গাঁথা শেখ আব্দুল্লাহকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক তথা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিত্তিহীন বানোয়াট কুরুচিপূর্ণ লেখার প্রতিবাদে দ্বিতীয়বারের মতো সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১ ঘটিকায় হরিপুর বাজার মাদরাসা মাঠে বৃহত্তর হরিপুর পরগণার জরুরি বৈঠক ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিগত কয়েকদিন ধরে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে সিলেট হরিপুরে। আলেম-ওলামাদের নিয়ে কটূক্তি ও মিথ্যা বানোয়াট লেখনীর প্রতিবাদে উত্তাল জৈন্তাপুরের তথা সিলেটের সকল আলেম সমাজ ও তৌহিদী জনতা।
আলেমদেরকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুষ্কৃতিকারীরা একের পর এক মিথ্যা বানোয়াট উস্কানিমূলক কটুক্তিকর স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছে। এই বিষয়গুলোকে কিভাবে সমাধান করা যায় এ নিয়ে এলাকাবাসী সহ সবাই মিলে গত শুক্রবারে জরুরী বৈঠকে বসেন। বৈঠকে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিলেন, কটুক্তিকারী ব্যাক্তি যেন সোমবারে সকালের মধ্যে হরিপুরের মানুষের কাছে উপস্থিত থেকে ক্ষমা চায়।
কিন্তু সময় চলে যায়, কটুক্তিকারী সহ তার সাপোর্টাররা কেউই হরিপুরে উপস্থিত হয় নাই। যেহেতু এই দিনে হরিপুর প্রাঙ্গণে আপামর জনতা উপস্থিত ছিলেন, সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক নতুন করে পুনরায় আবার বৃহস্পতিবারের মধ্যে ক্ষমা চাওয়ার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ক্ষমা না চাইলে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে বৃহত্তর জৈন্তাপুরে তামাবিল মহাসড়ক অবরোধ করা হবে বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
উক্ত বিষয়টির অভিযোগের তীর জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের দিকে। এত অভিযোগের পরেও জামায়াতের উচ্চ পর্যায়ে নীতিনির্ধারক থেকে এখন পর্যন্ত কোন সান্তনার বাণী আসেনি।
ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ৩০শে ডিসেম্বর। হঠাৎ ফেইসবুকে জামাতের কর্মী পরিচয়কারী ব্যক্তি গাছবাড়ি বড়দেশ উত্তর এলাকার বাসিন্দা জামাল হুসাইন ফেইসবুকে শেখ আব্দুল্লাহ (রহ.) হরিপুরীকে নিয়ে মিথ্যা বানোয়াট কটূক্তিমূলক স্ট্যাটাস মন্তব্য লিখে।
উক্ত ফেসবুকের লেখনীতে তিনি তার শ্বশুর প্রিন্সিপাল শফিকুল হক বুলবুলকে নিয়ে মন্তব্য করায় কড়া সমালোচনা করেন।
এমনকি তিনি এই পোস্টে সিলেটের প্রখ্যাত সুনামধন্য আলেম আল্লামা আব্দুল্লাহ হরিপুরী (রহ.) ও তার বড় ছেলে হরিপুর মাদ্রাসার বর্তমান প্রিন্সিপাল মাওলানা হেলাল আহমদকে নিয়ে গালি গালাজ সহ মিথ্যা বানোয়াট কটাক্ষ করেন।
উপস্থিত লোক মুখে জানা যায়, গত ২৯শে ডিসেম্বর দারুল উলুম কানাইঘাট মাদ্রাসার একটি ইসলামি ওয়াজ মাহফিল ছিল, এই মাহফিলে হরিপুর মাদ্রাসার বর্তমান প্রিন্সিপাল মাওলানা হেলাল আহমদ নাম বিহীন জৈনিক ব্যক্তি হুদ নামক মাওলানা’ উল্লেখ করে, অতীতের কিছু কর্মকাণ্ডের ইতিহাস বলেছিলেন।
জামাল হোসেনের বানোয়াট ও মিথ্যা মন্তব্যের পরে ক্ষোভে কেঁপে ওঠে সিলেট হরিপুর জৈন্তাপুরের সকল তৌহিদী জনতা। সাথে সাথে ফেসইবুকের স্ট্যাটাসের প্রতিবাদস্বরূপ হরিপুরের আলেম-ওলামারাসহ স্থানীয় জনতা মিলে রাতেই সিলেট-তামাবিল মহা সড়ক অবরোধ করেছিলেন। কটূক্তিকারী ব্যক্তি যেন দারুল উলুম কানাইঘাট মাদ্রাসায় গিয়ে আলেম-ওলামাদের কাছে ক্ষমা চায়, এই নিঃশর্ত দাবি তুলেছিলেন।
এ প্রতিবাদের বিষয়টি চারদিকে জানাজানি হলে হরিপুর মাদ্রাসা ও দারুল উলুম কানাইঘাট মাদ্রাসার আলেম-ওলামাদের উদ্দেশ্য করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে কে বা কারা বিভিন্ন আইডি থেকে উস্কানিমূলক বিভিন্ন বানোয়াট স্ট্যাটাস দিতে থাকে। এ বিষয়টি দেখলে আলেম-ওলামাদের মধ্যে আরো ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এই ক্ষোভের অংশ হিসেবে কয়েক দফা হরিপুর মাদ্রাসায় বৈঠক হয়।
উক্ত বৈঠকে সিলেট জৈন্তাপুরের সকল আলেম-ওলামারা অংশ নেন। তারা ফেইসবুকে বানোয়াট কুরুচিপূর্ণ লেখনীর ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে এসে আলেম-ওলামাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার শান্তিপূর্ণ আহ্বান জানান।
এই শান্তিপূর্ণ আহ্বান এর পরেও, দুষ্কৃতিকারীরা থেমে থাকে নাই, আলেম-ওলামাদের নিয়ে নানান ভাবে একের পর এক মিথ্যা বানোয়াট কুরুচিপূর্ণ লেখনীর মাধ্যমে ফেসবুকে আরও উত্তাল পরিবেশ করে তোলে।
যে বা যারা আলিম উলামাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে উস্কানিমূলক পোস্ট করেই যাচ্ছেন তারা কোনো না কোনোভাবে জামায়াতের রাজনৈতিক ধারার ব্যক্তি বলে জানিয়েছেন আপামর জনতা। এই বিভ্রান্তির বিষয়টি জামায়াত নেতারা অবগত থাকলেও এখন পর্যন্ত নীরব রয়েছেন।।
এদিকে- হরিপুরসহ কয়েকটি মাদ্রাসা কয়েক হাজার ছাত্র-শিক্ষক রোববার দুপুরে দারুল উলুম কানাইঘাট মাদ্রাসায় যান। মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে আলেম-ওলামারা সমাবেশ করেন।
এমন কি হরিপুরসহ সিলেটের কয়েকটি মাদ্রাসার কয়েক হাজার শিক্ষক ও ছাত্র মিলে গত রোববার সকালের দিকে দারুল উলুম কানাইঘাট মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে গিয়ে দুপুরে এই কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের বিষয়টি নিয়ে আলেম-উলামা ও তৌহিদী জনতা মিলে যৌথ পরামর্শ সমাবেশ করেন।
সমাবেশে এই সিদ্ধান্তে ঘোষিত হয়, কটুক্তিকারী নিজের ভূল বুঝতে পেরে বা সকালের মধ্যে হরিপুর মাদ্রাসায় স্ব শরীরে এসে প্রকাশ্য সবার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা না করলে আন্দোলনের মহা কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
তাদের এমন কঠিন আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরেও টনক নড়েনি দুষ্কৃতিকারীর। উল্টো তার সহযোগীরা আরো বিভ্রান্তিকর পোস্ট করতে থাকে। ততক্ষণে সোমবার সকালের দিকে সিলেট জেলার কয়েকটি মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আপামর তাওহীদি জনতা মিলে মিছিল সহকারে হরিপুর মাদ্রাসা এসে হাজির হন।
সমাবেশে আসা আপামর জনতারা কটূক্তিকারীদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামের ইন্ধন রয়েছে দাবি করে স্লোগানও দেন।
সকাল ১১ ঘটিকায় সমাবেশে হরিপুর বাজার মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা জয়নাল আবেদীনের পরিচালনায় ও শায়খ ইসমাইল আলী শ্যামপুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকে বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কানাইঘাট মাদরাসার শায়খুল হাদিস শায়েখ আলীম উদ্দিন দুর্লভপুরী, জামিয়া ইসলামিয়া আয়েশা সিদ্দিকা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মোখলেছুর রহমান রাজাগঞ্জী, বন্দর বাজার জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মুস্তাক আহমেদ খান, হরিপুর বাজার মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা শায়েখ হিলাল আহমেদ, মুফতি নুরুল হক জকিগঞ্জী, চতুল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা আবুল হোসেন চতুলী, জৈন্তাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ফখরুল ইসলাম, লামনী গ্রাম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল জব্বার, হেমু মাদরাসার মুহতামিম মুফতি জিল্লুর রহমান কাসেমী প্রমুখ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও ৫নং ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মতিন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মহিবুল হক মুহিব, ৫নং ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক আহমেদ, ইউপি সদস্য ইলিয়াস আলী সাজু, রফিক আহমেদ, আব্দুল মতিন, ফারুক আহমেদ, মতিউর রহমান, মুরব্বি আলহাজ্ব আলাউদ্দিন, আব্দুল হক মেম্বার, নুরুল ইসলাম কলাই, আব্দুর রহিম, আনোয়ার হোসেন, জাকারিয়া, হরিপুর বাজার ব্যাবসায়ী কমিটির সাবেক সভাপতি হেলাল আহমেদ, মো. আব্দুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মুতলিব, যুবদল নেতা আলী হায়দার সায়মন, ব্যবসায়ী আজিজুর রহমান, লোকমান আহমেদ প্রমুখ।
উক্ত সমাবেশে আসা বক্তারা বলেন, আগের সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও কটূক্তিকারী ব্যক্তি আলেম-ওলামাদের সামনে এসে হাজির হয়ে ক্ষমা চায়নি।
এ বিষয়টি সিলেট জেলার পুলিশ সুপারের দৃষ্টিগোচর হলে হরিপুর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা হেলাল আহমদকে তার অফিসে ডেকেছেন। এতে পুলিশ সুপার ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন বলে জানান তারা।
পরিশেষে সবাই মিলে এটাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় যে, আগামী বৃহস্পতিবার দুষ্কৃতিকারীর শেষ সময়, এই সময়ের ভেতরে আলেম-ওলামাদের কাছে এসে ক্ষমা না চাইলে, বৃহস্পতিবার থেকে বৃহত্তর জৈন্তা রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হবে।
এই মহাসমাবেশে খবর পেয়ে সিলেট থেকে ছুটে আসা সাবেক মেয়র ও বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, এই বিষয়গুলো আমি শুনেছি, সত্যিই এটা দুঃখজনক, সিলেটের মাটি আলিম উলামার ঘাটি। সিলেটে কখনো আলিম উলামাদের কটাক্ষ করার সাহস কখনো কারো ছিল না আজও নেই, কেউ করলে সিলেটের মানুষ কড়া জবাব দিবে বলে তিনি আলেম- ওলামাদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন।
সেই সাথে তিনি সিলেটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি একটি সুন্দর পরিবেশের সৃষ্টি করবেন, এমন কি এ নিয়ে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। প্রশাসনের সাথে সার্বিক সহযোগিতায় তিনি সবসময় সাথে থাকবেন।
এ ব্যাপারে জৈন্তাপুরের হরিপুর মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা হেলাল আহমদ বলেন, আলেম-ওলামাদের নিয়ে কটূক্তি করার পরে ও আমরা প্রথম থেকে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়ে তাদের মিথ্যা বানোয়াট মন্তব্যের কারণে আমাদের কাছে এসে তাদের ভূলের ক্ষমা না চাওয়ায় আলেম-ওলামারাসহ বৃহত্তর জৈন্তার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়েছে।
যদি কটুক্তিকারী হরিপুর মাদ্রাসায় আলিম উলামা আপামর জনতার কাছে এসে ক্ষমা ও তওবা প্রার্থনা না করে, তাহলে আমাদের ঘোষিত আন্দোলন ও কর্মসূচি চলমান থাকবে।
এই বিষয়টির ব্যাপারে জানতে চাইলে জুমবাংলার সাংবাদিক কে সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন বলেন, ঘটনাটির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর কোন সম্পর্ক নেই। এমনকি জামায়াতের কেউ মন্তব্য করছে না, স্ট্যাটাসও দিচ্ছে না। এ কারণে ঘটনাটি নিয়ে সিলেট জামায়াতে ইসলামী প্রতিক্রিয়া নেই নীরব রয়েছে।
Optical Illusion: শত শত কচ্ছপের মাঝে লুকিয়ে থাকা সাপটি খুঁজে বের করুন!
উক্ত ঘটনাটি নিয়ে জৈন্তাপুর থানার ওসি আবুল বাশার মো. বদিউজ্জামানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন এ ঘটনায় পুলিশের কাছে কেউ এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে যথাযথভাবে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তবে আইন-শৃঙ্খলা যেন বিঘ্ন না ঘটে সেদিকে তার নজর রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।