এক-দুই বল নয়, ২৭ বল হাতে রেখে বাংলাদেশ জিতেছে ৭ উইকেটের পর্বতসমান ব্যবধানে। যা দেশটির বিপক্ষে টাইগারদের রেকর্ড গড়া জয়। মিরপুরে ৩ ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন দুমড়েমুচড়ে দিয়েছে বাংলাদেশের পেসাররা। টাইগার বোলাররা পুরোপুরি উইকেটের সহায়তা আদায় করে নিয়েছেন। বড় ব্যবধানে হেরে উইকেটের সমালোচনা করেছেন পাকিস্তানের কোচ মাইক হেসন। মিরপুরের উইকেটকে কোনোভাবেই ভালো ক্রিকেটের জন্য উপযুক্ত নয় বলেন এ কোচ, ‘এমন উইকেটে এশিয়া কাপ ও টি-২০ বিশ্বকাপের ভালো প্রস্তুতি নেওয়ার কোনো সুুযোগ নেই।
আমি মনে করি এমন উইকেট কোনোভাবেই বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশকে ভালোর খেলার প্রস্তুতি দেবে না।’ এ কিউই উইকেটের সমালোচনা করলেও ম্যাচসেরা ক্রিকেটার পারভেজ হোসেন ইমন সেটা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
৩৯ বলে ৩ চার ও ৫ ছক্কায় ৫৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলা পারভেজ বলেন, ‘উইকেট বাজে, এমন কিছু মনে হয়নি। আমরা ১১০ রান করছি ১৬ ওভারে। আমরা ২০ ওভার খেললে ১৬০ রান করতে পারতাম। হতে পারে ওরা (পাকিস্তান) উইকেটে মানিয়ে নিতে পারেনি।’ বাংলাদেশের রেকর্ড গড়া জয়ের আলোচনায় ছিল উইকেট।
ম্যাচের পুরোটাজুড়েই ছিল উইকেট। আলোচনা, সমালোচনার উইকেটেই রেকর্ড গড়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। টি-২০ ক্রিকেটে টাইগার ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে কম রান খরচের রেকর্ড গড়েছেন তিনি। পাকিস্তানের ইনিংস শেষে তার স্পেল ৪-০-৬-২।
মুস্তাফিজের রেকর্ড গড়া ম্যাচে বাংলাদেশ আবার পাকিস্তানকে সর্বনিম্ন রানে অলআউটের রেকর্ডও করেছে। দুই দলের ২৩ ম্যাচের পরিসংখ্যানে পাকিস্তানে গতকাল ১৯.৩ ওভারে ১১০ রানে অলআউট হয়েছে। আগের রেকর্ড ছিল ৭ উইকেটে ১২৯।
টি-২০ ক্রিকেটে পাকিস্তানের সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড অবশ্য অস্ট্র্রেলিয়ার বিপক্ষে ৭৪। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে ৪টি। সবগুলোই রান তাড়া করে। ২০২৩ সালে হ্যাংঝুতে জিতেছিল এশিয়ান গেমসের ব্রোঞ্জ নির্ধারণী ম্যাচে। বাকি ৩টি মিরপুরে।
২০১৫ সালের এক ম্যাচের টি-২০ সিরিজটি বাংলাদেশ জিতেছিল ৭ উইকেটে ২২ বল হাতে রেখে। এতদিন পাকিস্তানের বিপক্ষে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। গতকাল সেই রেকর্ড ভেঙে দেয় লিটন বাহিনী।
মুস্তাফিজের রেকর্ডের ম্যাচে সবচেয়ে কম রানের অলআউটের ম্যাচটি টাইগাররা জিতেছে ৭ উইকেটে ২৭ বল হাতে রেখে। ২০১৬ সালে এশিয়া কাপে জিতেছিল ৫ উইকেটে।
এক দশক আগে মিরপুর স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে মুস্তাফিজের টি-২০ অভিষেক। ১০ বছর পর একই মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে নতুন এক রেকর্ড গড়েন কাটার মাস্টার। সেবার তার বোলিং স্পেল ছির ৪-০-২০-২। ওই ম্যাচেই ইঙ্গিত রেখেছিলেন উজ্জ্বল ভবিষ্যতের।
এখন তিনি টি-২০ ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা বোলার। গতকাল মিরপুরে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানের বিপক্ষে মিতব্যয়ী বোলিং করেন। আগের রেকর্ড ছিল মুস্তাফিজ, তানজিম সাকিব ও রিশাদ হোসেনের।
তিনজনেই ৪ ওভারের স্পেলে দিয়েছিলেন ৭ রান। টি-২০ ক্রিকেটে অবশ্য ঈর্ষণীয় বোলিং স্পেল নিউজিল্যান্ডের লুকি ফার্গুসনের। ২০২৪ সালের টি-২০ বিশ্বকাপে কিউই ফাস্ট বোলারের স্পেল ছিল ৪-৪-০-৩।
২০২৬ সালের টি-২০ বিশ্বকাপ পর্যন্ত নতুন করে দায়িত্ব পান লিটন। নতুন নেতৃত্ব পেয়ে চতুর্থ সিরিজ খেলছেন। আগের তিন সিরিজে ম্যাচ খেলেছেন ৯টি। ৯ ম্যাচেই টানা টস হেরেছেন। গতকাল ১০ নম্বর ম্যাচে টস জিতেছেন। টস জিতেই উইকেটের সুবিধা আদায়ে ফিল্ডিং নেন টাইগার অধিনায়ক।
কলম্বোর রানাসিংহে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টাইগারদের ঐতিহাসিক জয়ের নায়ক শেখ মেহেদি হাসান গতকাল বোলিং ওপেন করেন। প্রথম আঘাত হানেন ডান হাতি ফাস্ট বোলার তাসকিন। টাইগার বোলারদের বোলিং আক্রমণে ১৯.৩ ওভারে ১১০ রান করে পাকিস্তান।
টাইগার বোলারদের মধ্যে মুস্তাফিজ উইকেটের সহায়তা আদায় করে নেন শতভাগ। ২৪ বলের স্পেলে ৬ রান দিয়ে ডট নেন ১৮টি! টাইগার বোলাররা এতটাই মিতব্যয়ী ছিলেন যে, পাকিস্তানের ১১৭ বলের ইনিংসে ডট বল করেন ৭০টি! ছক্কা খেয়েছেন ৫টি এবং বাউন্ডারি ৯টি।
তাসকিন এক ম্যাচের বিরতি শেষে নেমেই দারুণ বোলিং করেন। ৩.৩ ওভারের স্পেলে ২২ রানের খরচে নেন ৩ উইকেট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইতিহাস গড়া ম্যাচে খেলেননি তাসকিন। পাকিস্তানকে ১১০ রানে আটকে জয়ের অবস্থান তৈরি করে নেন বোলাররা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।