জুমবাংলা ডেস্ক: বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি মাসেই বাজারে এনেছে দশ টাকার নতুন নোট এবং এর যুক্তি হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছিলো যে গ্রাহক চাহিদার কথা বিবেচনা করে এ নতুন নোট আনা হচ্ছে। বিবিসি বাংলা প্রতিবেদক রাকিব হাসনাত-এর একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
বাজারে প্রচলিত দশ টাকার নোটের সামনের দিকে একটি অসমতল ছাপ ছিলো যা নতুন দশ টাকার নোটে নেই।
আবার নোটের সামনের দিকে উপরের বাম কোণায় মুদ্রিত ‘১০’ ও মাঝখানে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ লেখাটি ‘লালচে’ রঙের পরিবর্তে ‘সাদা’ এবং গভর্নরের স্বাক্ষর কালো রঙের পরিবর্তে লালচে-খয়েরি রঙে মুদ্রিত হয়েছে।
অর্থাৎ নতুন নোটটির ডিজাইনে পরিবর্তন আনা হয়েছে। সাধারণত নতুন করে যে কোন অংকের নোট ছাপানোর সময়েই এ ধরণের পরিবর্তন করা হয়।
এর আগে গত বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের অংশ হিসেবে বাজারে আনা হয়েছিলো বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সংবলিত ৫০ টাকার নোট।
নোটগুলোর ডিজাইন চূড়ান্ত হয় কীভাবে
নতুন নতুন ডিজাইনে বাজারে আসা ব্যাংক নোটের প্রতি অনেকেরই আগ্রহ থাকে। আবার অনেকে ঈদ বা এ ধরণের উৎসব পার্বণে ছোটদের নতুন নোট উপহার দিয়ে থাকেন। এ ধরণের নানা কারণে নতুন নোট সংগ্রহ করেন অনেকেই। আবার কেউ কেউ শুধু সংগ্রহ করার জন্য নতুন ডিজাইনের নোটের জন্য অপেক্ষা করেন।
ডেইজি আক্তার তেমনি একজন।ডেইজি বলেন “আমি নানা ডিজাইনের নোট সংগ্রহ করতে পছন্দ করি। তাই যখনই পত্রিকায় দেখি যে নতুন নোট বাজারে এসেছে সঙ্গে সঙ্গে তা সংগ্রহ করে রাখি” আবার বেসরকারি চাকুরীজীবী নাজমুন নাহার স্বর্ণা বলেন, যে ঈদের আগে তিনি নতুন নোট সংগ্রহ করে পরিবারের ছোট সদস্যদের উপহার দেয়ার জন্য। তিনি আরও বলেন “ভাগ্নে ভাতিজি, ভাতিজারা নতুন নোট পেলে খুশি হয়। তাই ওদের জন্য ঈদের আগে সংগ্রহ করি নতুন নোট।”
আর নতুন নতুন ডিজাইনের ব্যাংক নোট বাজারে আনার কাজটি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট (মুদ্রা ব্যবস্থাপনা) বিভাগ। তারাই মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ইস্যু করা সব নোটের ডিজাইন থেকে শুরু করে ছাপানো ও বাজারে আনার দায়িত্ব পালন করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, টাকার নোটের ডিজাইন চূড়ান্ত করতে ‘স্বনামধন্য ডিজাইনারদের’ সমন্বয়ে একটি কমিটি আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংক যখন কোন নতুন নোট আনার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি তারা কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মাধ্যমে ওই কমিটি জানিয়ে দেয়।
ওই কমিটি ডিজাইনারদের কাছ থেকে সম্ভাব্য ডিজাইনগুলো সংগ্রহ করে তার মধ্যে কয়েকটি বাছাই করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠায়।পরে গভর্নরের চূড়ান্ত অনুমোদনের মাধ্যমে ঠিক হওয়া ডিজাইনটি ছাপার জন্য টাকশালে পাঠানো হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরও বলেন “এটিই ব্যাংক নোট ডিজাইন করার একমাত্র নিয়ম। বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নোটের ডিজাইন এভাবেই করে থাকে।”প্রতিটি নোট নতুন ডিজাইনে বাজারে ছাড়ার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নোটটিতে আনা পরিবর্তন ও নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনসাধারণকে অবহিত করে থাকে।
বাংলাদেশের প্রথম নোট, ডিজাইন করেছিলেন কারা
রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের প্রথম নোটটি ছিলো এক টাকার নোট। উনিশশো বাহাত্তর সালের ৪ঠা মার্চ এ নোটের মাধ্যমেই স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম নিজস্ব কাগুজে মুদ্রা চালু হয়েছিলো। সেই নোটে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত ছিলো এবং এতে তখনকার অর্থসচিব কে এ জামানের স্বাক্ষর সংযুক্ত ছিলো।
আর যেদিন এ নোট বাজারে ছাড়া হয় সেদিনই আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের মুদ্রার নাম দেয়া হয় টাকা। তবে এটি ছাপা হয়েছিলো ভারতীয় সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসে।
এর পরের সিরিজের টাকা ছাপানো হয়েছিলো যুক্তরাজ্য থেকে। তখনই একটি উপদেষ্টা পরিষদ করা হয়েছিলো যাতে ছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পটুয়া কামরুল হাসান ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী।
পরে এ কমিটি এক টাকার নতুন নকশা করে। তখন বিদেশ থেকে নোট ছাপিয়ে আনা হতো। পরে অবশ্য বাংলাদেশেই টাকশাল হওয়ার পর টাকা ছাপানোর কাজ শুরু হয়।
কত ধরণের নোট এখন প্রচলিত আছে
বাংলা সিরিয়াল নম্বর দিয়ে নোট চালু হয় ১৯৭৩ সালে। এর আগেই অবশ্য ইংরেজি সিরিয়াল দিয়ে ৫, ১০ ও ১০০ টাকার নোট ইস্যু করেছিলো বাংলাদেশে। এরপর দেশে দুই টাকার নোট চালু হয় ১৯৮৮ সালে, পঞ্চাশ ও পাঁচশ টাকার নোট প্রচলন করা হয় ১৯৭৬ সালে। আর কুড়ি টাকার নোট প্রথম বাজারে আসে ১৯৭৯ সালে।
দুই হাজার নয় সালের ১৭ই জুলাই বাজারে আনা হয় এক হাজার টাকার নোট এবং এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানের ব্যাংকনোট। সর্বশেষ ২০২০ সালে বাজারে আসে দুশো টাকার নোট। অর্থাৎ এ মূহুর্তে বাংলাদেশে এক, দুই, পাঁচ, দশ, বিশ, পঞ্চাশ, একশ, দুশো, পাঁচশ ও এক হাজার টাকার কাগুজে নোট প্রচলিত আছে।
এর মধ্যে এক টাকার নোট নতুন ছাপা হয় না বলে নোটটি বিলুপ্ত প্রায়। কিন্তু এই নোটকে এখনো বাতিল ঘোষণা করা হয়নি। আর এর বাইরে বেশ কিছু ধাতব মুদ্রাও বাজারে আছে।
সরকারি নোট ও ব্যাংক নোট
বাংলাদেশের ব্যাংক বলছে দেশে দুই ধরণের কাগুজে মুদ্রা বা নোট আছে। এগুলো হলো সরকারি নোট ও ব্যাংক নোট। সরকারি নোট হলো সরকার কর্তৃক প্রচলিত মুদ্রা যা অর্থ মন্ত্রণালয় ইস্যু করে।
এ ধরণের নোটে অর্থ সচিবের স্বাক্ষর থাকে। এ মুহূর্তে সরকারি নোট হিসেবে ১ ও ২ টাকার নোট প্রচলিত আছে। অন্যদিকে ব্যাংক নোট ইস্যু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাতে গভর্নরের স্বাক্ষর থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।