জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের ওপর সক্রিয় লঘুচাপের কারণে সৃষ্টি হয়েছে একটি বিশাল বৃষ্টিবলয়, যার প্রভাবে প্রায় পুরো দেশজুড়েই চলছে একটানা বৃষ্টি। আকাশে জমে থাকা কালো মেঘ থেকে কখনো হালকা, আবার কখনো মুষলধারে ঝরছে বৃষ্টি। এমন টানা বৃষ্টির ফলে জনমনে এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—এই বৃষ্টি কবে থামবে?
Table of Contents
সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে নোয়াখালীতে
শুক্রবার (৩০ মে) বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে নোয়াখালীর মাইজদীকোর্টে। জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি লঘুচাপ ধীরে ধীরে ঘনীভূত হয়ে প্রথমে নিম্নচাপ এবং পরে গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। এর ফলেই বর্ষা মৌসুমের পূর্বেই এমন টানা বৃষ্টির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
নিম্নচাপের গতিপথ ও বর্তমান অবস্থান
গভীর নিম্নচাপটি বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করে স্থলভাগে উঠে এসে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে নিম্নচাপটি টাঙ্গাইল ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে দুর্বল হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়।
বৃষ্টির প্রভাব ও পূর্বাভাস
স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় অঞ্চলে মেঘের উপস্থিতি বেড়েছে এবং কোথাও কোথাও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আজও বৃষ্টির প্রবণতা বজায় থাকবে। তবে এর মাত্রায় তারতম্য থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশের আটটি বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ ঘটতে পারে।
বৃষ্টি কতদিন থাকবে?
ড. মল্লিক জানিয়েছেন, রোববার পর্যন্ত এ পরিস্থিতি মোটামুটি অপরিবর্তিত থাকবে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমতে পারে। তিনি আরও বলেন, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আসন্ন বর্ষাকালের বৃষ্টিও এই আবহাওয়ার সঙ্গে মিশে যাবে, ফলে আগামী পুরো সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে।
উপকূলীয় সতর্ক সংকেত ও সমুদ্রবন্দরের পরিস্থিতি
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়াও, উপকূলীয় এলাকার অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দুই নম্বর এবং অন্যান্য স্থানের জন্য এক নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রসহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব অঞ্চলের নদীবন্দরগুলোকে দুই নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই এসব অঞ্চলে এক নম্বর সতর্ক সংকেত প্রদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভূমিধস ও জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা
অতি ভারী বর্ষণের ফলে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। একইসঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর কিছু অংশে অস্থায়ী জলাবদ্ধতার সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ইতোমধ্যেই টানা বৃষ্টিতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে, যার ফলে সাধারণ মানুষকে নানান দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
ছয় জেলায় বন্যার আশঙ্কা: বিপৎসীমা ছাড়াতে পারে নদীর পানি
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, দেশের ছয়টি জেলা—ফেনী, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনা—বন্যার সম্ভাবনার মধ্যে রয়েছে। ফেনী বাদে বাকি পাঁচ জেলা হাওর অঞ্চল।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বুলেটিনে বলা হয়, ফেনীর মুহুরী নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে আগামী দুই দিন বন্যা পরিস্থিতির ঝুঁকি রয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী ও ফেনী নদীর পানি বাড়ছে এবং মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
হাওর অঞ্চলে নদী ফুলে উঠতে পারে
সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের নদীগুলো—সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী—এর পানি আগামী তিন দিন বাড়তে পারে এবং বিপৎসীমা ছাড়াতে পারে। ফলে এসব এলাকার নিম্নাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
উত্তরের নদীগুলোর অবস্থাও উদ্বেগজনক
রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদী তিন দিনের মধ্যে ফুলে উঠতে পারে এবং তিস্তা নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। পাশাপাশি বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতায় জোয়ার হতে পারে।
এছাড়া সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বর্তমানে কমলেও, আগামী তিন দিন আবার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে বিপৎসীমার নিচে থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
পদ্মা-গঙ্গা-যমুনার অবস্থা
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি কমলেও আগামী চার দিনে আবার বাড়তে পারে, তবে তা বিপৎসীমার নিচেই থাকবে। গঙ্গা নদীর পানি স্থিতিশীল এবং পদ্মা নদীর পানি বাড়ছে। তবে দুটির পানিই আগামী পাঁচ দিনে বিপৎসীমার নিচে থাকার সম্ভাবনা বেশি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।