বিশ্ব ব্যাংক এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বাংলাদেশে তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকায় গত বছর অন্তত ২৫ কোটি কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ১৩৩ কোটি থেকে ১৭৮ কোটি ডলার বা অন্তত ২১ হাজার কোটি টাকা। যা দেশের মোট জিডিপির শূন্য দশমিক ৩ থেকে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের ‘অ্যান আনসাসটেইনেবল লাইফ: দ্য ইমপ্যাক্ট অব হিট অন হেলথ অ্যান্ড দ্য ইকোনমি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
১৯৭৬ থেকে ২০২৩ সালের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার তথ্য বিশ্লেষণ এবং ২০২৪ সালে ১৬ হাজার মানুষকে নিয়ে করা দুই দফা জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৮০ সালের পর থেকে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে অনভূত তাপমাত্রা বেড়েছে ৪.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর ফলে ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, অবসাদসহ নানা শারীরিক অসুস্থতা দেখা দিচ্ছে। পাশাপাশি বিষন্নতা ও উদ্বেগের মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাও বাড়ছে।
তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ১৯৮০ সালের পর থেকে দেশের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর এ সময়ে ঢাকায় বেড়েছে ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ, ঢাকার তাপমাত্রা জাতীয় গড়ের চেয়ে প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাড়তে থাকা তাপমাত্রা এখন আর কোনো তাত্ত্বিক বিষয় নয়। এটি এখন বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের বাস্তব অভিজ্ঞতা। তাপমাত্রা বৃদ্ধি একটি বৈশ্বিক ঘটনা হলেও এর প্রভাব বাংলাদেশে অনেক বেশি তীব্র, যা আমাদের জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে।
তিনি বলেন, কেবল গবেষণা প্রতিবেদনে সীমাবদ্ধ না থেকে সুপারিশগুলোকে সময়সীমাবদ্ধ কর্মপরিকল্পনায় রূপ দিতে হবে। প্রতিটি সংস্থাকে নিজ নিজ ভূমিকা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করতে হবে এবং জাতীয় পর্যায়ের অংশীদারদের দায়িত্ব নিতে হবে যাতে সুপারিশগুলো কার্যকর পদক্ষেপে পরিণত হয়।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের ডিভিশন ডিরেক্টর জ্যাঁ পেসমে বলেন, তীব্র গরম শুধু মৌসুমি সমস্যা নয়। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। আমরা বাংলাদেশে দেখছি, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা আমাদের স্বাস্থ্য, উৎপাদনশীলতা এবং দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে। সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে তাপপ্রবাহের প্রভাব মোকাবিলা সম্ভব।
বর্তমানে উচ্চ তাপমাত্রার ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। রাজধানী ঢাকা তাপের সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত শহর, যেখানে তাপসূচক জাতীয় গড়ের তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি বেড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রীষ্মকালে ডায়রিয়া ও দীর্ঘস্থায়ী কাশির ঘটনা শীতকালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়। নারীরা তাপজনিত অসুস্থতায় বেশি ভোগেন। গরমের মাসগুলোতে বিষণ্নতা ও উদ্বেগ বাড়ে, যা বয়সের সঙ্গে বেড়ে চলে। ৫০-৬৫ বছর বয়সীদের মধ্যে তাপজনিত সমস্যা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
এসব শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে শীতকালের তুলনায় গ্রীষ্মকালে আর্থিক ক্ষতি বেশি হয়। বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস অফিসার ও প্রতিবেদনের সহ-লেখক ইফফাত মাহমুদ বলেন, গরমে স্বাস্থ্য সমস্যা ও উৎপাদনশীলতা কমার মধ্যে সুস্পষ্ট যোগসূত্র দেখা গেছে।
বিশ্বব্যাংক তাপপ্রবাহ থেকে জীবন-জীবিকা ও অর্থনীতিকে রক্ষা করার জন্য জরুরি ও সমন্বিত পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে। প্রতিবেদনে তাপপ্রবাহ ব্যবস্থাপনার জন্য বহু-খাতভিত্তিক জাতীয় প্রস্তুতি বাড়ানো, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে সজ্জিত করা এবং শহরাঞ্চলে সবুজায়ন বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের এই আয়োজনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস অফিসার ইফফাত মাহমুদ এবং সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট ওয়ামেক এ. রাজা।
সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের ডিভিশনাল ডিরেক্টর জাঁ পেসমে, সাউথ এশিয়া হেলথ নিউট্রিশন অ্যান্ড পপুলেশন প্র্যাকটিস ম্যানেজার ড. ফেং ঝাও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।