ধর্ম ডেস্ক : রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত তারাবি নামাজ। এ নামাজ দেহ ও মনে প্রশান্তি এনে দেয় এবং গুনাহ মাফের সুযোগ করে দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশা নিয়ে রমজানে তারাবি নামাজ পড়বে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৬)
তারাবি নামাজের গুরুত্ব
রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা রোজাকে তোমাদের ওপর ফরজ করেছেন এবং আমি তোমাদের জন্য তারাবি নামাজকে সুন্নত করেছি। যে ব্যক্তি রমজানে ইমান এবং সওয়াবের আশায় রোজা রাখবে ও তারাবি নামাজ পড়বে, সে তার সব গুনাহ থেকে মুক্ত হবে, যেভাবে একটি শিশু নিষ্পাপ অবস্থায় জন্মায়।’ (সুনানে নাসায়ি, পৃষ্ঠা: ২৩৯)
তারাবি নামাজের অর্থ ও পরিচিতি
আরবি ‘তারবিহাহ’ থেকে ‘তারাবি’ শব্দটি এসেছে, যার অর্থ বিশ্রাম নেওয়া। এশার নামাজের পর সুন্নত হিসেবে তারাবি নামাজ আদায় করা হয়। চার রাকাত পর পর বিরতি নেওয়ার মাধ্যমে এটি দেহ ও মনকে প্রশান্তি দেয়। তাই একে ‘তারাবিহ’ বা প্রশান্তির নামাজ বলা হয়। (কামুসুল ফিকহ)
নারী ও পুরুষের জন্য তারাবির বিধান
নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য তারাবি নামাজ সুন্নতে মুয়াক্কাদা। পুরুষদের জন্য মসজিদে জামাতে তারাবি নামাজ পড়া সুন্নত। তবে প্রয়োজনীয় অসুবিধার কারণে জামাতে অংশগ্রহণ সম্ভব না হলে একাকি পড়া যাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে কয়েক রাত জামাতে পড়িয়েছেন, তবে ফরজ হওয়ার আশঙ্কায় নিয়মিত করেননি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০১২)
তারাবি নামাজের নিয়ত
নামাজের নিয়ত মূলত মনের ইচ্ছা। যখন আমরা তারাবির জন্য দাঁড়াই, তখন আমাদের মনে থাকে যে, আমরা তারাবি নামাজ আদায় করছি। তবুও নিয়ত এভাবে করা যেতে পারে:
বাংলা: আমি কেবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তারাবির সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করছি। আল্লাহু আকবার।
আরবি: نَوَيْتُ أَنْ أُصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى، رَكْعَتَيْ صَلاَةِ التَّرَاوِيحِ سُنَّةَ رَسُولِ اللَّهِ تَعَالَى، مُتَوَجِّهًا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ، اللَّهُ أَكْبَرُ।
তারাবি নামাজের নিয়ম
তারাবি নামাজ এশার পর এবং বিতর নামাজের আগে পড়তে হয়। এটি দুই রাকাত করে পড়তে হয় এবং প্রত্যেক দুই রাকাতের পর সালাম ফেরানো হয়। চার রাকাত পর একটু বিশ্রাম নেওয়া হয়, যা ‘তারবিহাহ’ নামে পরিচিত। এভাবে বিশ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়।
তারাবির দোয়া
চার রাকাত নামাজের পর বিশ্রামের সময় প্রচলিত একটি দোয়া রয়েছে:
বাংলা উচ্চারণ: সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইজ্জাতি, ওয়াল আজমাতি, ওয়াল হায়বাতি, ওয়াল কুদরাতি, ওয়াল কিবরিয়ায়ি, ওয়াল জাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়িল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রব্বুনা ওয়া রব্বুল মালায়িকাতি ওয়ার রুহ।
তারাবি নামাজের মোনাজাত
তারাবি নামাজের পর প্রচলিত দোয়া:
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাস আলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিকাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহ মাতিকা ইয়া আজিজু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া জাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার। আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান নার। ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজির। বিরাহ মাতিকা ইয়া আরহামার রহিমিন।
উল্লেখ্য: এই দোয়াগুলো তারাবি নামাজের জন্য নির্দিষ্ট নয়, তবে পড়লে সওয়াব পাওয়া যাবে।
রমজান মাসে তারাবি নামাজ আদায় করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ নেওয়া উচিত। এটি দেহ ও মনের প্রশান্তি আনে এবং গুনাহ থেকে মুক্তির অন্যতম উপায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।