জুমবাংলা ডেস্ক : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন দাবি করেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাকে আওয়ামী লীগ সরকার সারা বছর ব্যবহার করেছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণোদিতভাবে। তারা চেয়েছিল তারেক রহমানকে মামলা দিয়ে চিরজীবন বাইরে রাখবেন। এমনকি, তাকে মৃত্যুদণ্ডও দিতে চেয়েছিল।
রবিবার (১ নভেম্বর) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় করা মামলায় আপিলে তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দেন।
রায়ের পর সাংবাদিকদের কাছে উপরোক্ত দাবি করেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘‘ওই সময় আওয়ামী লীগকে তৎকালীন বিএনপি সরকার পাশের একটি ময়দানে সমাবেশের পারমিশন দিয়েছিল। তবে সরকারকে না জানিয়ে পরবর্তীতে তারা স্থান পরিবর্তন করে রাস্তার মধ্যে সমাবেশ নিয়ে আসেন। এটা ছিল তার (শেখ হাসিনা) উদ্দেশ্য প্রণোদিত। সরকারি দলকে বেকায়দায় ফেলানোর জন্য তিনি একাজ করেন। সেজন্য এই যে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল, আমাদের বিশ্বাস, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ এ হামলা হয়। এ ঘটনায় করা মামলার প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় চার্জশিটে তারেক রহমানের নাম ছিল না। চতুর্থ চার্জশিটে আব্দুল কাহার আকন্দ তারেক রহমানকে মামলায় সম্পৃক্ত করেন এবং সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘আদালত সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ, বিচার-বিশ্লেষণ করেছেন, দেখেছেন যে; সাক্ষীর উদ্দেশ্যে যে চার্জশিটের উদ্দেশ্যে তাদের সাজা দেওয়া হয়েছে, এমনকি মৃত্যুদণ্ডও যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে, যা টিকতে পারে না। আদালত মনে করেছে, যারা আপিল করেছে এবং যারা আপিল করতে পারেননি, প্রত্যেককে খালাস দেওয়া প্রয়োজন।’’
সিনিয়র এ আইনজীবী বলেন, ‘‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাকে আওয়ামী লীগ সরকার সারা বছর ব্যবহার করেছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে। তারা চেয়েছিল তারেক রহমানকে মামলা দিয়ে চিরজীবন বাইরে রাখবেন। এমনকি, তাকে মৃত্যুদণ্ডও দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আদালত এরকম কোনো অ্যাভিডেন্স পায়নি যে, তারেক রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দেবেন। যাইহোক, শেষ পর্যন্ত বাবর আর পিন্টুকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। আজকে এ জাজমেন্টের মাধ্যমে তাদের সেই মৃত্যুদণ্ডও থাকল না। আদালত সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা সরকারের মূল উদ্দেশ্যে ছিল দুইটা। একটা তো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিলই। আরেকটি ছিল, জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে বিদায় করে দেওয়া। সেজন্য খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল। পরে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে তিনটি চার্জশিটের পর ৪র্থ চার্জশিটে নাম এনে মৃত্যুদণ্ড দিতে চেয়েছিল। অর্থাৎ, জিয়া পরিবারকে রাজনীতি থেকে চিরবিদায়ের উদ্দেশ্যে ছিল। ওই সরকার (আওয়ামী লীগ) ছিল প্রতিশোধপরায়ণ। তারা এটাকে ব্যবহার করেছে। ২১ আগস্ট মামলাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে।’’
আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘‘মুফতি হান্নানকে দিয়ে দ্বিতীয়বার ১৬৪ করিয়ে মামলায় তারেক রহমানের নাম এনেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা। রাজনৈতিকভাবে মামলার বিচার করেছে।’’
এদিন বেলা ১১টায় রায় ঘোষণা শুরু হয়। ১১টা ৪৫ মিনিটে রায় পড়া শেষ হয়। রায়ের মূল অংশ পাঠ করেন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান।
রায়ে আদালত বলেছেন, ‘‘একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার ছিল অবৈধ। আইনে এটা টেকে না। যে চার্জশিটের ভিত্তিতে নিম্ন আদালত বিচার করেছিলেন, তা আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল না। সাক্ষীরা ঘটনার বর্ণনা করেছেন, কিন্তু কে গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছেন, তা কোনো সাক্ষী বলেননি। এছাড়া, ২১ আগস্টে কে গ্রেনেড সরবরাহ করেছে, তা চার্জশিটে উল্লেখ করেননি কোনো তদন্ত কর্মকর্তা।’’
আদালতে আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল প্রমুখ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।