জুমবাংলা ডেস্ক : ইন্টারনেট সার্ভিস ও ডিশ ক্যাবল অপারেটরদের তারের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে রাজধানী ঢাকা। নগরজুড়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে অগোছালোভাবে ঝুলছে ক্যাবল অপারেটরদের তার। মালবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের সঙ্গে লেগে তার ছিঁড়েও যাচ্ছে। এই তার সরাতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন উদ্যোগ নিলেও ব্যর্থ হয়েছেন মেয়ররা। এখন কোনো তৎপরতাই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। নগরবাসীর অভিযোগ, একটি দৃষ্টিনন্দন আধুনিক নগরী গড়ার ক্ষেত্রে ঝুলন্ত তার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। নগরজুড়ে যখন উন্নয়নের ছোঁয়া সেখানে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলতে থাকা এসব তার বড়ই দৃষ্টিকটু। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব তার অপসারণে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার।
জানা যায়, ২০২০ সালের মে মাসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) শেখ ফজলে নূর তাপস ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) আতিকুল ইসলাম মেয়র হিসেবে যোগ দেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর ওই বছরের ৫ আগস্ট থেকে ধারাবাহিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে শান্তিনগর, ধানমন্ডি, সিটি কলেজ, নগর ভবনের চারপাশ, ওয়ারী, মুগদা এলাকার সব ইন্টারনেট ও ডিশ লাইনের তার অপসারণ করে ডিএসসিসি। অভিযানের পর প্রতিদিন তিন ঘণ্টা করে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানায় দেশের ইন্টারনেট সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। তখন ক্যাবল অপারেটরদের চাপের মুখে ঢাকায় ঝুলে থাকা তারের জঞ্জাল কেটে ফেলার অভিযান স্থগিত করে ডিএসসিসি। দুই পক্ষের সমঝোতা বৈঠকের পর পাইলট প্রকল্প হিসেবে ধানমন্ডির ঝুলন্ত তার মাটির নিচে সরিয়ে নিতে রাজি হন ক্যাবল অপারেটররা। সে অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয় করে ধানমন্ডি এলাকার তার মাটির নিচে নিয়ে যান আইএসপিএবিসহ অন্য কেবল অপারেটররা।
অন্যদিকে ২০২০ সালের আগস্ট থেকে সড়কে ঝুলে থাকা তার অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছিল ডিএনসিসি। কিন্তু ওই সময় ডিএসসিসির উচ্ছেদের প্রতিবাদে আইএসপিএবির প্রতিবাদ দেখে কিছুটা সময় নেয় ডিএনসিসি। তখন পরিকল্পিতভাবে ঝুলন্ত তার মাটির নিচে স্থানান্তরের লক্ষ্যে নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন), আইএসপিএবি ও ক্যাবল অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করে উত্তর সিটি। তাদের ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ঝুলন্ত তার সরিয়ে নিতে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই উদ্যোগ আর এগোয়নি।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর মতিঝিল, সেগুনবাগিচা, কাকরাইল, কারওয়ান বাজার, মহাখালী, কুড়িল এলাকায় ঝুলে থাকা তার অনেক বেশি। এ ছাড়া মোহাম্মদপুর, মিরপুর, ফার্মগেট, শাহবাগ, আজিমপুর এবং পুরান ঢাকার অনেক এলাকাতেই কু লী পাকানো এমন তার ঝুলে থাকতে দেখা গেছে। দীর্ঘদিন সেগুনবাগিচায় থাকেন সাদ্দাম হোসেন। রাস্তায় ঝুলে থাকা তারের ভোগান্তি নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, খুঁটিতে বিদ্যুতের বাতি নষ্ট হওয়ায় অন্ধকারে থাকে সড়ক। চারপাশে ভবন থেকে আলোর ছায়া আসে। সেই নিবু নিবু আলোতে অফিস শেষে সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরছি। পথে পায়ে কিছু একটা আটকে ছিটকে পড়ি সড়কের ওপর। হাঁটুসহ শরীরের কয়েকটি স্থানে আঘাত পাই। পরে মোবাইলের ফ্লাশ লাইট জ্বালিয়ে দেখি ইন্টারনেটের কাটা তারের অংশ। তার অভিযোগ, কর্তাব্যক্তিরা শহরে কনক্রিটের দালান তৈরি বা অনুমোদন দিতে যতটা মনোযোগী, নগরীর পরিবেশ বা সৌন্দর্য ফেরানো নিয়ে ঠিক ততটাই বেখেয়াল।
জানতে চাইলে আইএসপিএবির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল করিম ভূঁইয়া বলেন, আমরা ধানমন্ডি-২-এ থেকে ১৫-এ পর্যন্ত ক্যাবলগুলো আন্ডারগ্রাউন্ডে নিয়ে গেছি। সেখানে পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। এখানে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে। এখন নতুন করে সারা দেশে আন্ডারগ্রাউন্ডে নেওয়ার জন্য বিটিআরসি বরাবর চিঠি দিয়েছি। বিটিআরসি সেই চিঠির অনুমোদন দেয়নি।
একই সঙ্গে দুই সিটি করপোরেশনেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারাও অনুমোদন দেয়নি। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, সাবেক মেয়রের সময়ে ঝুলন্ত তারের বিষয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সরকারের পট পরিবর্তনে এখন কোনো উদ্যোগ আমরা নিচ্ছি না। আমাদের পর্যাপ্ত জনবল থাকলেও এরকম কাজ বাস্তবায়নে সেরকম কোনো পরিবেশন নেই।
হাসান ইমন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।