দীর্ঘ ১৮ বছর নির্বাসন শেষে দেশে ফিরে লাখো মানুষের সামনে তারেক রহমান মার্কিন নাগরিক অধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের আদলে নিজের নতুন রাজনৈতিক দর্শনের জানান দিয়েছেন। কিংয়ের অহিংস আন্দোলন ও সাম্যের দর্শনের সাথে সংহতি জানিয়ে তিনি আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে তার সুনির্দিষ্ট ‘প্ল্যান’ বা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন, যা উপস্থিত জনমনে ব্যাপক উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। তার ঐতিহাসিক বক্তব্যের অনুকরণে তিনি বলেন, ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান।’

দেশবাসীর উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘প্রিয় ভাই-বোনেরা, মার্টিন লুথার কিং—নাম শুনেছেন তো আপনারা? তার একটি বিখ্যাত বক্তব্য আছে— ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’।’ এসময় তিনি মার্টিন লুথার কিংয়ের বিখ্যাত উক্তি সুরে বলেন, ‘আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান, ফর দ্য পিপল অভ দ্য কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি।’
কে এই মার্টিন লুথার কিং
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রখ্যাত আফ্রিকান-আমেরিকান নাগরিক অধিকার নেতা, ধর্মযাজক ও মানবাধিকার কর্মী। খ্রিস্টীয় ধর্মবিশ্বাস এবং ভারতের মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবৈষম্য ও সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন।
তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৯ সালের ১৫ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের আটলান্টা শহরে। তার বাবা মাইকেল কিং সিনিয়র এবং মাতা আলবার্টা উইলিয়ামস কিং। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। ১৯৫৫ সালে বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ধর্মতত্ত্বে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।
নাগরিক অধিকার আন্দোলনে ভূমিকা
১৯৫০-এর দশক থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মার্টিন লুথার কিং ছিলেন আমেরিকান সিভিল রাইটস মুভমেন্টের অন্যতম প্রধান নেতা। কৃষ্ণাঙ্গদের সমান অধিকার, ভোটাধিকার ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি অহিংস আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
১৯৫৫ সালে আলাবামার মন্টগোমারিতে রোসা পার্কসের গ্রেপ্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া ঐতিহাসিক বাস বয়কট আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরে তিনি সাউদার্ন ক্রিশ্চিয়ান লিডারশিপ কনফারেন্স (SCLC) প্রতিষ্ঠা করেন।
কিং একসময় আটলান্টার এবেনিজার ব্যাপটিস্ট চার্চের সহ-যাজক হিসাবে বাবার সঙ্গে যোগ দেন। বর্ণগত বিচ্ছিন্নকরণ ও আইনি বৈষম্যের অবসান ঘটাতে নিজের বাগ্মিতার দক্ষতা কাজে লাগাতে থাকেন তিনি। ১৯৬০ এর দশক জুড়ে অ্যালাবামা, ফ্লোরিডা এবং জর্জিয়াতে অহিংস প্রতিবাদের সময় বারবার গ্রেপ্তার হন কিং জুনিয়র। এইরকম একটি গ্রেপ্তারের ঘটনার পরে বার্মিংহাম সিটি জেলে বন্দী থাকা অবস্থায় তিনি নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নৈতিক ভিত্তি তুলে ধরে এক ঐতিহাসিক চিঠিও লেখেন।
‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’
সেটা ১৯৬৩ সালের ঘটনা। সে বছরেরই ২৮ আগস্ট আগস্টে তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে লিংকন মেমোরিয়ালের সামনে আয়োজিত সমাবেশে সমবেত দুইলাখের বেশি মানুষের উদ্দেশে তার বিখ্যাত ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ বক্তৃতা দেন। সেই ঐতিহাসিক ভাষণ ‘I Have a Dream’ তাকে বিশ্বজুড়ে পরিচিত করে তোলে। ওই ভাষণে তিনি বলেন— ‘মানুষকে তাদের গায়ের রঙ দিয়ে নয়, তাদের চরিত্রের গুণ দিয়ে বিচার করা উচিত।’
অর্জন ও স্বীকৃতি
নাগরিক অধিকার আন্দোলনে অসামান্য অবদানের জন্য মার্টিন লুথার কিং ১৯৬৪ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। সে সময় তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ নোবেল শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি। তার আন্দোলনের ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬৪ সালের নাগরিক অধিকার আইন এবং ১৯৬৫ সালের ভোটাধিকার আইন পাস হয়, যা বর্ণভিত্তিক বৈষম্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মৃত্যু ও উত্তরাধিকার
১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল টেনেসি অঙ্গরাজ্যের মেমফিস শহরে এক আততায়ীর গুলিতে মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র নিহত হন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল মাত্র ৩৯ বছর। তার মৃত্যুর পরও অহিংস প্রতিবাদ, মানবাধিকার ও সমতার যে দর্শন তিনি রেখে গেছেন, তা আজও বিশ্বজুড়ে মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।
স্মরণ ও সম্মান
যুক্তরাষ্ট্রে জানুয়ারি মাসের তৃতীয় সোমবার মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র দিবস হিসেবে পালিত হয়। দিনটি ‘ছুটির দিন’ নয়, বরং ‘সেবার দিন’ হিসেবে উদযাপনের আহ্বান জানানো হয়। ওয়াশিংটন ডিসিতে লিংকন মেমোরিয়ালের পাশে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং আটলান্টার কিং সেন্টার তার জীবন ও আদর্শকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



