জুমবাংলা ডেস্ক : স্বপ্ন পূরণে ২০১০ সালে পঞ্চগড়ে নিজের সাত বিঘা জমিতে সমতলের চা-বাগান গড়েছিলেন চাষি শাহজালাল। দীর্ঘ ১৩ বছর অতিক্রম করলে লোকসানের মুখে পড়ে সেই স্বপ্ন উপড়ে ফেললেন তিনি নিজেই। একইসঙ্গে চা বাগান করাকে পাপ অবহিত করে প্রায় ১০ লিটার দুধ দিয়ে গোসলও করেছেন তিনি। এ সময় তার শ্রমিক ও স্থানীয়রাও বিস্ময় নিয়ে দেখেন এই দৃশ্য।
ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার (২০ ডিসেম্বর) পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার তেপুকুরিয়া এলাকায়। শাহজালাল পঞ্চগড় পৌরসভার উত্তর জালাসী এলাকার বাসিন্দা। এমন কাণ্ড কেন ঘটালেন সে প্রশ্ন করা হয় চা-চাষি শাহজালালকে।
তিনি বলেন, ২০১০ সালে পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার তেপুকুরিয়া এলাকায় নিজের কেনা ৭ বিঘা জমিতে চা বাগান করি। এই বাগান করতে অনেক ব্যয় হয়েছে আমার। শুরুতে লাভ হলেও এরপর চলে পালাক্রমে লোকসান। আর এই লোকসানের মূল কারণ চায়ে সিন্ডিকেট। এ পর্যন্ত আমার প্রায় ২০ লাখ টাকার লোকসান হয়েছে।
সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে এই লোকসান হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন শাহজালাল। এ চা-চাষি বলেন, কারখানা মালিকরা সিন্ডিকেট করে চা-চাষিদের জিম্মি করে রেখেছেন। দিন দিন তাদের ব্যবসা ও পরিধি বাড়লেও চাষিরা গুণছেন লোকসান। প্রতি কেজি চা-পাতা উৎপাদন করতে গিয়ে আমাদের খরচ হয় প্রায় ১৮ টাকা।
কিন্তু সেই চা-পাতা বিক্রি করে আমরা পাচ্ছি মাত্র ৮ থেকে ১০ টাকা। তার মধ্য থেকেও আবার ওজন থেকে কখনও ২০ কখনো ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাদ দিয়ে দেওয়া হয় দাম। এভাবে আমরা আর টিকতে পারছি না। প্রশাসন ও চা বোর্ড কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। তাই চা কারখানা মালিকদের দৌরাত্ম্য থেকে মুক্ত হতেই চা বাগান উপড়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেই। তার এই বাগান করার পাপ হিসেবে দুধ দিয়ে গোসল করলাম।
ন্যায্য মূল্য না পেয়ে শাহজালালের মতো অনেক চাষি নিজেদের গড়া চা-বাগান উপড়ে ফেলেছেন বলে জানালেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন বলেন, পঞ্চগড়ের চায়ের গুণগত মান উন্নয়নে তারা কাজ করছেন। ইতোমধ্যে চাষিদের মধ্যে প্ল্যাকিং মেশিন বিতরণ করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে চাষিরা কারখানায় ছোট পাতা সরবরাহ করতে পারবেন এবং কারখানাগুলো ভালো মানের চা উৎপাদন করতে পারবে।
তিনি জানান, প্রত্যাশা, দ্রুতই সমতলের চায়ের সুদিন ফিরে আসবে। এ জন্য চাষিদের নানা প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তবে বাগান উপড়ে না ফেলতে চাষিদের প্রতি অনুরোধ জানান চা-বোর্ডের এই কর্মকর্তা। সকল সমস্যা কাটিয়ে সবুজ চায়ের আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।