আমাদের জীবনে চা ও কফি দু’টোই যেন অভ্যাসের অংশ। সকালের শুরু থেকে অফিসের আড্ডা কিংবা বিকেলের ক্লান্তি কাটাতে—সবখানেই এই দুটি পানীয়র জনপ্রিয়তা অপরিসীম। তবে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন থেকে গেছে—চা না কফি, কোনটি শরীরের জন্য বেশি উপকারী?
মানুষ চা ও কফি পান করে আসছে হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে। তবে আধুনিক যুগে স্বাস্থ্যসচেতনতার কারণে এ নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা বেড়েছে। কখনও কফিকে বেশি উপকারী বলা হয়, আবার কখনও চায়ের গুণাগুণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ দ্বিধার কারণ হলো—উভয় পানীয়তেই রয়েছে ক্যাফেইন ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট, যা শরীরকে নানা দিক থেকে প্রভাবিত করে। ঠিক কোনটি বেশি ভালো, সেটি জানতেই গবেষণা চলছে এবং সেখান থেকেই এ প্রশ্ন সামনে এসেছে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত চা বা কফি পান করেন, তারা কিছুটা বেশি স্বাস্থ্যবান হতে পারেন। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায় না যে শুধুমাত্র চা বা কফি পান করাই তাদের স্বাস্থ্য ভালো করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে ক্যাফেইন।
ক্যাফেইন শরীরকে সতেজ রাখে, মনোযোগ বাড়ায়, ক্লান্তি কমায় এবং মুড ভালো রাখতে সাহায্য করে। কফিতে প্রতি আউন্সে চায়ের তুলনায় বেশি ক্যাফেইন থাকে। সাধারণত ৮ আউন্স কফিতে ৮০–১০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে। অন্যদিকে, চায়ের ক্যাফেইনের পরিমাণ নির্ভর করে এর প্রকারভেদে। উদাহরণস্বরূপ, গ্রিন টিতে প্রতি ৮ আউন্সে ৪০–৭০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইন থাকে, আর অন্যান্য চায়ে তুলনামূলকভাবে কম। হার্বাল চায়ে তো প্রায় ক্যাফেইনই থাকে না।
একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ৪০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত ক্যাফেইন গ্রহণ নিরাপদ। বেশিরভাগ গবেষণা বলছে, প্রতিদিন ৩০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইনই স্বাস্থ্যকর। তবে মনে রাখতে হবে, কিছু মানুষের ক্ষেত্রে সামান্য ক্যাফেইনও দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা বা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
চা ও কফি উভয়ই অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টে ভরপুর। এর মধ্যে রয়েছে পলিফেনল, যা শরীরের কোষকে সুরক্ষা দেয়, দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ কমায় এবং বার্ধক্যজনিত নানা রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। গ্রিন ও ব্ল্যাক টিতে পলিফেনলের মাত্রা বেশি, যা কফির অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের কাছাকাছি।
কফি নিয়ে যেসব গবেষণা হয়েছে, তাতে দেখা গেছে—নিয়মিত কফি পান করলে হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার, বিষণ্ণতা এবং স্নায়বিক রোগের ঝুঁকি কমে। এমনকি দীর্ঘায়ুর সঙ্গেও কফি পান জড়িত বলে ধারণা করা হয়। চা সম্পর্কিত গবেষণা তুলনামূলকভাবে কম হলেও, এর উপকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে দ্য জার্নাল অফ ক্লিনিকাল এন্ডোক্রিনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম-এ প্রকাশিত একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় বলা হয়েছে—দৈনিক ২০০–৩০০ মিলিগ্রাম ক্যাফেইনযুক্ত চা বা কফি পান করলে ডায়াবেটিস, হৃদয়ের ধমনীজনিত সমস্যা ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, চা ও কফি দু’টোই শরীরের জন্য উপকারী, তবে পরিমিত মাত্রায়। কফি বেশি চাঙা করে, আর চা তুলনায় কোমলভাবে শরীরকে সতেজ রাখে। তাই স্বাস্থ্য ভালো রাখতে চাইলে সীমিত পরিমাণে চা বা কফি পান করতে পারেন, তবে ব্যক্তিগত সহনশীলতা ও শারীরিক অবস্থার কথা মাথায় রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।তথ্যসূত্র : হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।