স্পোর্টস ডেস্ক : এখন পর্যন্ত অলিম্পিকে পদক জেতেননি কোনো বাংলাদেশি। পদক তো দূরের বিষয়, অলিম্পিকে অংশগ্রহণের জন্য ওয়াইল্ড কার্ডে নির্ভর করতে হয় বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের। বাছাইপর্ব পেরিয়ে বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টে লাল-সবুজের হয়ে অংশগ্রহণের ঘটনা বিরল।
এবার সেই বিরল ঘটনাই ঘটিয়েছেন চা বিক্রেতা মায়ের ছেলে সাগর ইসলাম। আগামী ২৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় প্যারিস অলিম্পিকে সরাসরি খেলার সুযোগ করে নিয়েছেন তরুণ এই আর্চার।
তুরস্কের আনাতালিয়ায় ওয়ার্ল্ড কোটা টুর্নামেন্ট থেকে প্যারিস অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন লাল-সবুজের এই আর্চার। রিকার্ভ ইভেন্টের সেমিফাইনাল নিশ্চিত করার পরই তার অলিম্পিকের টিকিট নিশ্চিত হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত ফাইনাল মাতানো হয়নি তার। সেমিতে উজবেকিস্তানের সাদিকোভ আমিখনের সঙ্গে ৬-০ সেটে হেরে গেছেন বিকেএসপির দশম শ্রেণির এই শিক্ষার্থী।
এদিকে সাগরের তীরন্দাজ হয়ে ওঠার পেছনে একজন বিধবা মায়ের সংগ্রামের গল্পও মিশে আছে। রাজশাহী শহরের বঙ্গবন্ধু কলেজের সামনে টং দোকানে চা বিক্রি করেন সেলিনা। তার ৪ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট সাগরই এবার অলিম্পিকের বিশ্বমঞ্চে লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করবে।
সংগ্রামী মাকে নিয়ে সাগর জানালেন, ‘আমাকে তিন বছরের রেখে বাবা মারা যান। বাবা ছিলেন টেম্পো মেকানিক। তিনি মারা যাওয়ার পর আমাদের চার ভাই-বোনকে নিয়ে ভীষণ বিপদে পড়ে যান মা। জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে রাস্তার পাশের খুলে বসেন চায়ের দোকান। গেল ১৫ বছর দেখেছি, মা কী সংগ্রাম করে আমাদের বড় করেছেন। তিনি অনেক সাহসী মানুষ। কখনো হার মানেন না। তীর-ধনুক যখন হাতে নিই, তখন কেবল মায়ের মুখটাই চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তিনিই আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।’
আর্থিক টানাপড়েনেও ছেলের স্বপ্নকে প্রশ্রয় দেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন চা বিক্রেতা সেলিনা। সাগরের ছোটবেলার স্মৃতিও গল্পের ছলে শোনালেন। তার ভাষ্যমতে, ‘ওর বাবা মারা গেছেন ১৫ বছর আগে। ওর বড় দুটি বোন আর একটি ভাই আছে। তিনজনকেই পড়ালেখা করিয়েছি এবং বিয়ে দিয়েছি। আমার চায়ের দোকানের সামনেই আছে একটি আর্চারি ক্লাব। ছোটবেলায় সাগর আমার সঙ্গে দোকানে এলেই দৌড়ে গিয়ে আর্চারি খেলার মাঠে বসে থাকত ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
ওর আগ্রহ দেখে, সেই ক্লাবেই ওকে ভর্তি করে দেই। পরে ক্লাস সেভেনে ভর্তি করাই সাভার বিকেএসপিতে। ওকে (সাগর) আরচারি খেলতে দেওয়ায় অনেকেই অনেক কটু কথা বলেছে। তবে আমি চেয়েছি ও এই খেলা দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হোক। আমার ছেলে দেশের জন্য এত বড় সম্মান বয়ে এনেছে, ভাবতেই চোখে পানি চলে আসছে। আপনারা সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন যাতে ও অলিম্পিকে আরও বড় কিছু জিতে আনতে পারে।’
সাগরের সাফল্য নিয়ে মায়ের ভাষ্য, ‘খুবই ভালো। তুরস্কের টুর্নামেন্টের রিকার্ভ এককে অলিম্পিকে সরাসরি খেলার কোটা ছিল পাঁচটি। বাংলাদেশ থেকে ইভেন্টটিতে আমি, হাকিম ও রামকৃষ্ণ ছিলাম। আমি সবার ছোট। কিন্তু দিন শেষে আমি লক্ষ্য পূরণ করে ফাইনালেও পৌঁছাই।’
এর আগে, ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে প্রথমবারের মতো গলফার সিদ্দিকুর রহমান যোগ্যতা দিয়ে খেলেছিলেন। এরপর টোকিও অলিম্পিকে আর্চার রোমান সানাও যোগ্যতা দিয়ে খেলেছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।