শিরিন আক্তার : সঞ্চয় প্রবণতা অভ্যাসের ফসল। যে পরিবার সব প্রয়োজন মিটিয়ে যত বেশি সঞ্চয় করতে পারে, ভবিষ্যতে তত বেশি নির্ভার থাকতে পারে। শিশুকে ছোট থেকেই টাকা পয়সা সঞ্চয় এসবের সঙ্গে পরিচিত করে তুলতে হবে। এতে বড় হয়ে ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে পারবে।
যেভাবে সঞ্চয় প্রবণতা শেখাবেন: ছোটদের বলা যেতে পারে তুমি প্রতিদিন একটি কৌটায় দুটি করে চকলেট জমাও। সপ্তাহ শেষে দেখবে সেখানে অনেক চকলেট জমেছে। তখন মন খুশিতে ভরে উঠবে। এভাবে তাকে সঞ্চয়ের প্রতি আগ্রহী করে তোলা যায়।
শিশুদের সঙ্গে টাকার পরিচয় করিয়ে দেওয়ার উত্তম উপায় হলো পকেটমানি দেওয়া। এই পকেটমানি সে কীভাবে খরচ করবে, কীভাবে সঞ্চয় করবে তাকে প্রাথমিক ধারণা দিন। টাকা খরচ করতে গিয়ে সন্তান বাজেট তৈরি করবে। কোন জিনিসটি তার আগে প্রয়োজন, তা বুঝতে পারবে। কোনটা পরে করলেও চলবে, তাও সে বুঝতে পারবে।
ছোটদের পুরস্কার ঘোষণার মাধ্যমে টাকা জমানোয় উৎসাহী করে গড়ে তোলা যায়। সঞ্চয়ের জন্য সপ্তাহ শেষে তার জন্য একটা লক্ষ্য স্থির করে দিন। সন্তানকে বলুন তুমি যদি এই সপ্তাহ শেষে ২০ টাকা তোমার পকেটমানি থেকে জমাতে পার, তাহলে তুমি আগামীতে আর ৫ টাকা বেশি পাবে। তার সামর্থ্যের মধ্যে থেকে তাকে লক্ষ্য স্থির করে দিন। তাহলে সে টাকা সঞ্চয়ে আগ্রহী হয়ে উঠবে।
শিশুকে চাওয়া ও প্রয়োজনের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে সহায়তা করুন। তাকে শেখান অনেক কিছু কিনতে চাওয়া খুব সহজ। কিন্তু চাওয়ার বিষয়টির চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা। অভিভাবক হিসেবে তার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো কিনে দিন। আপনিও অযথা এটা-সেটা না কিনে একান্ত প্রয়োজনীয় জিনিস কিনুন। সন্তানের দায়িত্ব নিন এবং তাকেও একটু একটু করে দায়িত্ব নিতে শেখান।
বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন গল্প বলে সন্তানকে টাকা জমানোয় মনোযোগী করে গড়ে তোলা যায়। কেন সঞ্চয় করব তা বোঝানোর জন্য বড়দের জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন সমস্যার কথা যেমন– হঠাৎ চাকরি চলে যাওয়া, রাস্তায় গাড়ি বিকল হয়ে যাওয়া, অসুস্থতা ইত্যাদি বলতে পারেন। তাকে বোঝান হঠাৎ আসা নানা বিপদে পাশে থাকবে সঞ্চয়ের টাকা। তবে খুব সহানুভূতি বজায় রেখে তার সঙ্গে এগুলো বলবেন। কোনো অবস্থাতেই জোর করা যাবে না।
টাকার মূল্য আছে– এ বিষয়টি শিশু বুঝতে শেখে ৬ বছর বয়স থেকে। তখন থেকে শুরু করতে হবে সঞ্চয়ের বিষয়টি। ৭ বছর বয়সে সে বিষয়টি আরও আয়ত্ত করতে পারে। কারণ সে তখন টাকার বিনিময়ে পণ্য কিনতে পারে। টিনএজে তারা বিভিন্ন কিছু নিয়ে বায়না ধরতে পারে; যা অনেক সময় পরিবারের সামর্থ্যের বাইরে। তখন বোঝানো যেতে পারে, তোমার জন্মদিনের পার্টি থেকে কিছু টাকা জমাও। এক্সট্রা কোথাও থেকে টাকা পেলে তা জমাতে পার। জমানো টাকা দিয়ে পছন্দের প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার আনন্দটা তাকে বুঝতে দিন। তাহলে সে পরবর্তী সময়ে সঞ্চয়ে আরও মনোযোগী হয়ে উঠবে।
সন্তানকে সঞ্চয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে দিন। গোল অর্জন করলে প্রশংসা করুন মন খুলে। হাত খরচের টাকা পুরোটা খরচ না করে কিছুটা জমানো প্রয়োজন এই প্রবণতা টিনএজের মধ্যে আনা উচিত। অনেকে আবার কোনো খরচ না করে পুরোটাই জমিয়ে রাখে। এটি করতে দেওয়া যাবে না। ভবিষ্যতের জন্য টাকা লাগবে কিন্তু সবটা দিয়ে নয়। আপনার সন্তান যদি পছন্দের খেলনা, পোশাক কিংবা মোবাইল কেনার জন্য টাকা জমায়, তাহলে তার প্রশংসা করুন। মোট কথা আপনার অনুপ্রেরণা, সমর্থন সন্তানকে সঞ্চয়ী হতে সহায়তা করবে।
সূত্র: গো হেনরি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।