জুমবাংলা ডেস্ক : মনিরামপুর সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. সাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে উঠেছে গুরুতর অভিযোগ। তিনি বলেছেন, ‘আমার কাছে প্রাইভেট না পড়লে কেউ পাস করবে না, পরীক্ষার সময় চোখে সরষে ফুল দেখবে।’ এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
এই শিক্ষকের হুমকির কারণে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে তার কাছে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য হচ্ছেন। তিনি নবম ও দশম শ্রেণির পদার্থ ও রসায়ন বিষয়ের ক্লাস নেন। গত বছরের ২৩ জুন যোগদানের পর থেকে তিনি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছেন।
অভিভাবকদের অভিযোগ, শিক্ষক সাইদুল দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। যারা তার কাছে পড়তে অনিচ্ছুক, তাদের মানসিকভাবে হয়রানি করা হয় এবং পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। সম্প্রতি অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষায় তার কাছে প্রাইভেট না পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র কয়েকজন পাস করেছে। গত বছরও একই ঘটনা ঘটেছিল। এর প্রতিকার চেয়ে ২০২৪ সালের ২ নভেম্বর নবম শ্রেণির ৩৪ জন শিক্ষার্থী তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিল। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার খাতা দেখতে চাইলে শিক্ষক তাদের প্রাইভেট পড়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন এবং খারাপ আচরণ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, সাইদুল স্যার ক্লাসে এসে বাইরের শিক্ষকদের নিয়ে কটুক্তি করেন। তার কাছে প্রাইভেট না পড়লে ক্লাসে অপমান করা হয় এবং পরীক্ষায় ফেল করার ভয় দেখানো হয়।
একজন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, ‘আমার মেয়ে ক্লাসে প্রথম সারির ছাত্রী। কিন্তু অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষায় পদার্থ ও রসায়ন দুটোতেই ফেল করেছে। এতে তার মন ভেঙে গেছে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাকে পাস করাতে সাইদুল স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়াব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাইদুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কাউকে প্রাইভেট পড়তে বাধ্য করি না। যারা আমার কাছে আসে, আমি তাদের সাহায্য করি।’ ক্লাসে তিনি পড়ান এবং প্রশ্নও তিনিই করেন, তবু কেন দু-একজন ছাড়া সবাই ফেল করে? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি ক্যাডেট কলেজের স্টাইলে প্রশ্ন করি।’ বাইরের শিক্ষকদের নিয়ে বাজে মন্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাইরের শিক্ষকদের বেসিক দুর্বল।’
মনিরামপুর ফাজিল মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক সঞ্জয় সরকার বলেন, ‘নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য সাইদুল স্যার এইচএসসি স্তরের প্রশ্ন করেছেন। আমি এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, একজন বেসরকারি শিক্ষকের সরকারি শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার সাহস কীভাবে হলো?’
ঢাকুরিয়া কলেজের রসায়ন বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক শাহিন আলম বলেন, ‘নবম শ্রেণির অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষায় রসায়ন বিষয়ে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের প্রশ্ন দেওয়া হয়েছে।’
স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এম তসির উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করছি। শিক্ষার্থীদের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করা সম্পূর্ণ অনৈতিক। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জিল্লুর রশীদ বলেন, ‘একজন শিক্ষকের এমন আচরণ কখনো কাম্য নয়। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্বার্থ রক্ষা এবং শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় رাখতে স্কুল প্রধানকে নির্দেশ দেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নিশাত তামান্না বলেন, ‘একজন শিক্ষকের এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।