বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : নিত্যনতুন চমকপ্রদ সব প্রযুক্তি ও ফিচার যুক্ত হচ্ছে স্মার্টফোনে। স্মার্টফোন দিন দিন হয়ে উঠছে আরও বেশি স্মার্ট। বর্তমান সময়ে স্মার্টফোনের হরেক রকম ব্যবহারকারী আছেন।কেউবা স্মার্টফোন দিয়ে পেশাগত কাজ সেরে ফেলেন, কেউবা খেলেন হাই গ্রাফিক্স গেইম। আবার এমন অনেক ব্যবহারকারীও আছেন যারা স্মার্টফোনকে কেবলমাত্র টুকটাক ইন্টারনেট ব্রাউজিং ও কল আদান প্রদানের মধ্যেই সীমাবন্ধ রাখেন।
দেশে স্মার্টফোনের বাজার দিন দিন তুমুল প্রতিযোগীতাপূর্ণ হয়ে উঠছে। বিশেষ করে মাঝারি বাজেটের ক্ষেত্রে তা এখন সবচেয়ে বেশি। মাঝারি বাজেটের স্মার্টফোনের বাজারে শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে বাজেট ফোন হিসেবে টেকনো স্পার্ক ২০ প্রো প্লাস -এর ব্যবহার অভিজ্ঞতা নিয়ে এ রিভিউ।
ফ্লাগশিপ ফোন নিয়ে বরাবরই অন্য জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আছে চীনা ব্র্যান্ড টেকনো । এর বাইরে মিডরেঞ্জ থেকে একেবারে সস্তা স্মার্টফোনের বাজারের দখলেও পিছিয়ে নেই তারা। অবস্থান ধরে রাখতে নিয়মিত নতুন ফোন আনছে শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডটি।
বিস্তারিত শুরু করার আগে চলুন দেখে নেয়া যাক টেকনো স্পার্ক ২০ প্রো প্লাস ফিচার ও কনফিগারেশন।
এক নজরে টেকনো স্পার্ক ২০ প্রো প্লাস : * ৬.৭৮ ইঞ্চি ১২০ হার্জের কার্ভড অ্যামোলিড ডিসপ্লে * মিডিয়াটেক (এমটিকে) জি৯৯ আল্টিমেট প্রসেসর * ৮ গিগাবাইট র্যান ও ২৫৬ গিগাবাইট ইন্টারনাল স্টোরেজ * ৩২ মেগাপিক্সেল ফ্রন্ট ও ১০৮ মেগাপিক্সেল মেইন ক্যামেরা * ৫ হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ার ব্যাটারি * ফোরজি সুবিধাসম্বলিত ডুয়াল সিম
ডিসপ্লেঃ
এই ফোনের ডিসপ্লের সাইজ হচ্ছে ৬.৭৮ ইঞ্চি ১২০ হার্জের কার্ভড অ্যামোলিড ডিসপ্লে যেটার রেজুলেশন হচ্ছে ১০৮০×২৪৩৬ পিক্সেলের। সাথে গ্লাসের প্রটেকশন ও মাল্টি টাচ সুবিধা। ডিসপ্লের সাইজ যথেষ্ট বড় হওয়ায় ভিডিও দেখা বা গেমিংয়ে ভালো অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে। অ্যামোলেড ডিসপ্লে হওয়ার কারণে রোদে ব্যবহার করতে খুব বেশি সমস্যার সম্মুক্ষীণ হতে হবে না। কার্ভ ডিসপ্লের সাথে পাঞ্চ-হোল ক্যামেরা ফোনের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক বেশি । ডিসপ্লের কালার রিপ্রডাকশন মাঝারি মানের। টাচ সেন্সিটিভিটি বেশ ভালো।
ডিজাইন
টেকনো স্পার্ক ২০ প্রো প্লাস ফোনের ভলিয়ম ও পাওয়ার বাটন ডিভাসের ডান দিকে দেওয়া হয়েছে। সিম স্লট, মাইক্রোফোনের স্লট মোবাইলের নিচের দিকে দেওয়া হয়েছে। প্লাস্টিক বডির ডিজাইনের পরও ফোনটি দেখতে বেশ হলেও নতুনত্ব চোখে পড়বে না তবে প্লাস্টিক গুলো দূর থেকে দেখলে গ্লাসের মতোই মনে হবে। তবে এর ৬.৭৮ ইঞ্চি ১২০ হার্জের কার্ভড অ্যামোলিড কার্ভড ডিসপ্লে হাতের মুঠোয় প্রিমিয়াম ফিল দেয়। ব্যাকপ্যানেলের বৃত্তাকার ক্যামেরা মডিউল দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। মাঝারি বাজেট ফোন হলেও ফ্লাগশিপ ফোন ফিল রয়েছে এই ফোনে ।
আরও রয়েছে ইন ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ডানে রয়েছে ভলিউম আপ ডাউন ও পাওয়ার বাটন । নিচের দিকে রয়েছে স্পিকার, টাইপ সি পোর্ট । কিন্তু ফোনটিতে কোন হেডফোন জ্যাক নেই । কার্ভড ডিসপ্লে হওয়াতে ডিসপ্লের ডিভাইসটির চারপাশে বেজেল নিয়ে ভাবতে হচ্ছেনা।
ক্যামেরা
ডিভাইসটির পিছনে রয়েছে ১০৮ মেগাপিক্সেলের আল্ট্রা ওয়াইড মেইন সেন্সর ও ২ মেগাপিক্সেলের এফ/২.৪ অ্যাপাচারসমৃদ্ধ ম্যাক্রো ক্যামেরা । ক্যামেরা দুটির অ্যাপার্চার যথাক্রমে এফ/১.৮ ও এফ/২.৪। ক্যামেরায় রয়েছে এআই প্রযুক্তি। দিনের আলোয় ছবির মান খুবই ভালো, বিশেষ করে আলো-ছায়ায় ভরা দৃশ্যের ছবিও এটি সহজেই এইচডিআর ব্যবহার করে মানসম্মতভাবে তুলতে পারে। কালার ও ডাইনামিক রেঞ্জও ভালো। রাতের আলোতে বেশ ভালো মানের ছবি তোলা যায় । ইনডোর ছবিও খারাপ আসে না ডিভাইসটি দিয়ে। ডিভাইসটি দিয়ে এইচডি ভিডিও রেকর্ড করা যাবে। নেই ফোরকে সুবিধা। নেই ইআইএস। ভিডিও কোয়ালিটি মোটামুটি। এই ফোনের ক্যামেরায় ম্যাক্রো, টাইমল্যাপ্স, স্লো মোশন এবং ডুয়েল ভিডিও অপশন পাবেন।
এছাড়াও আপনি অটো মোডে সব সময় এআই-কে সঙ্গী হিসেবে পাবেন। তাই বারবার মোড পরিবর্তন করার ঝামেলাই নেই। ক্যামেরায় থাকা এআই বুঝে নেবে কখন কোন মোড প্রয়োজন। তখন সেই মোডে ছবি তুলে নেবে। সেলফি তোলার জন্য রয়েছে এফ২.২ অ্যাপার্চারের ৩২ মেগাপিক্সেল ওয়াইড ক্যামেরা সেন্সর।
টেকনোর অন্যান্য ফোনের মত এতেও ক্যামেরাতে ছবি তুলতে বেশ কিছু ফিচার দেয়া হচ্ছে। যেমন-এআই বিউটি, ফেসিয়াল রিকগনিশন, এইডিআর প্রভৃতি। এই ফোনটির মাধ্যমে ছবি তোলার সময় বিষয়বস্তুর ওপর দৃশ্যমান আলো ও রঙের সমন্বয়কে তুলে ধরবে। এটি প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে, রাতের আঁধারে পরিচ্ছন্ন ছবি তুলতে কাজ করবে। সবমিলিয়ে এ বাজেটের ফোন হিসেবে বেশ ভালো মানের ছবি তোলার অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে।
পারফরমেন্স
ফোনটিতে রয়েছে ৬ ন্যানোমিটারের মিডিয়াটেক (এমটিকে) জি৯৯ আল্টিমেট প্রসেসর। গেমিং সুবিধা দিতে রয়েছে মালি-জি৫৭ এমসি২ জিপিইউ। ৮ গিগাবাইট র্যাম ও ২৫৬ গিগাবাইট ইন্টারনাল মেমোরির কনফিগারেশন মাঝারি ও যারা মোবাইলে ফুলএইডি গেম খেলে থাকেন তাদের বেশ বেগ পেতে হবেনা পারফরমেন্স নিয়ে। গেমার ছাড়া সাধারণ ব্যবহারকারীরা মাল্টিটাস্কিংসহ অনায়েসেই প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিতে পারবেন। সবমিলিয়ে এই ফোন দিয়ে বেসিক কাজগুলো অনায়েসেই সেরে নেয়া যাবে। তবে মেমোরি কার্ড ব্যবহার করা যাবে না এই ফোনে । দীর্ঘক্ষণ গেম খেললে ফোনটি কিছুটা গরম হয়, তবে তা স্বাভাবিক। সব ফোনেই বেশ কিছু সময় গেম খেললে গরম হয়। দীর্ঘ সময় দুর্দান্ত গেমিং অভিজ্ঞতা দিতে এ ফোনে আছে ৫’হাজার মিলিঅ্যাম্পিয়ারের শক্তিশালী ব্যাটারি, যা দিবে টানা ৮ ঘণ্টা নিরবিচ্ছিন্ন গেমিং’র নিশ্চয়তা। যদি খেলার মাঝে ফোনের চার্জ কমে যায়, তাতেও চিন্তার কিছু নেই। কারণ ৩৩ ওয়াট ফাস্ট চার্জিং অ্যাডাপ্টর । ফলে, ব্যবহারকারীরা এ ফোনে কম সময় চার্জ দিয়ে অধিক সময় পর্যন্ত গেমিং বা অন্যান্য কাজ করতে পারবেন। কানেক্টিভিটির জন্য পাবেন টুজি, থ্রিজি এবং ফোরজি। সর্বশেষ প্রযুক্তির ব্লুটুথ ও ওয়াওফাই সুবিধার পাশাপাশি দুটি সিমেই ফোরজি ব্যবহার করা যাবে।
সাউন্ড কোয়ালিটি
উন্নতমানের সাউন্ড, কিন্ত ভলিউমে ঘাটতি। সরাসরি হেডফোন ব্যবহারের উপায় নেই। ব্যবহার করতে হবে ইউএসবি টাইপ-সি, তাই চার্জ করা আর গান শোনা একত্রে হবে না। ব্লুটুথ হেডফোন ব্যবহার করাই শ্রেয়, ভলিউম নিয়ে সমস্যা সেখানেই মিটে যাবে।
মূল্য
এক বছর ওয়ারেন্টিসহ ফোনটির দাম ২৬ হাজার ৯৯৯ টাকা।
এক নজরে ভালো
ভালো মানের ব্যাটারি ব্যাকআপ
গরিলা গ্লাস ৫ সহ ৬.৭৮ ইঞ্চি ১২০ হার্জের কার্ভড অ্যামোলিড ডিসপ্লে
সহজেই এক হাতে ব্যবহারযোগ্য
উন্নত ক্ষমতা সহ ১০৮ মেগাপিক্সেল প্রধান ক্যামেরা এবং ৩২ মেগাপিক্সেল ওয়াইড-অ্যাঙ্গেল ফ্রন্ট ক্যামেরা
এক নজরে খারাপ
মেমরি কার্ড ব্যবহার করা যাবে না: মেমরি কার্ড স্লটের না থাকায় বেশি ডাটা সংগ্রহের ব্যবহারকারীদের জন্য স্টোরেজ সীমিত করতে হবে।
এইচডিআর নেই : ফোনটিতে বেশ ভালো মানে ডিসপ্লে থাকা সত্ত্বেও, ডিভাইসটি HDR সমর্থন করে না, যা ভিডিও এর গুণমানকে খারাপ করবে।
ইন্টারফেস : টেকনোর কাস্টমাইজড অপারেটিং সিস্টেম হাইওএস অনেক ফিচার দিয়ে থাকে, যা আগে থেকে ইনস্টল করা অ্যাপ এবং বিজ্ঞাপনের সাথে আসতে পারে যা আপনার অভিজ্ঞতাকে খারাপ করতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।