জুমবাংলা ডেস্ক : শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্য হয়ে মরা খালে পরিণত হয় তিস্তা নদী। জেগে ওঠে বালুচর। কিন্তু এবার হঠাৎ পানিতে টইটম্বুর হয়ে উঠলো তিস্তা।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) থেকে শনিবার (২৫ মার্চ) পর্যন্ত তিস্তায় পানিপ্রবাহ ছিল অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। অথচ ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে কিছুদিন আগেও তিস্তা নদীর ভাটিতে বাংলাদেশ অংশে পানিপ্রবাহ ছিল না। জেগে উঠেছিল বালুচর।
তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টের পানি পরিমাপক (গেজ রিডার) নুরুল ইসলাম বলেন, ‘তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্প দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প। যেখানে এই সময়ে সেচের জন্য পানি পাওয়া যায় না। অথচ এ বছর হঠাৎ পানিতে টইটম্বুর হয়ে উঠেছে তিস্তা। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গত বৃহস্পতিবার থেকে পানিপ্রবাহ বেড়ে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্ট টইটম্বুর হয়ে উঠেছে।’
তিনি বলেন, ‘গত বুধবার ৪৭ দশমিক ৩৯ সেন্টিমিটার পানিপ্রবাহ পরিমাপ করা হয়। বৃহস্পতিবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটারে। শুক্রবারও পানিপ্রবাহ একই রকম ছিল। শনিবার সেই পানিপ্রবাহ কিছুটা কমে দুপুরে ৪৯ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটারে দাঁড়ায়।’
তিস্তায় পানি বেড়ে যাওয়ায় জেলেরা মাছ শিকারে নেমেছেন উল্লেখ করে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সেচ প্রকল্প এলাকায় পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক হয়েছে। নদীর দুই তীরে জীববৈচিত্র্যের প্রাণ ফিরেছে।’
তিস্তা নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা আতিকুর রহমান বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে তিস্তায় পানি বেড়েছে। তবে এতে আমাদের ফসলের ক্ষতি হয়নি। বরং পানি বাড়ায় দুই তীরের জীববৈচিত্র্যের প্রাণ ফিরেছে।’
তিস্তা তীরের দোয়ানি এলাকার জেলে এমদাদুল হক বলেন, ‘শনিবার সকাল থেকে মাছ শিকার করেছি। বৈরালী ও জয়া মাছসহ প্রায় চার কেজির মতো পেয়েছি। দুপুরে স্থানীয় বাজারে সাড়ে ৪০০ থেকে সাড়ে ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি মাছগুলো। যদি তিস্তা নদীতে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকতো তাহলে মাছ শিকার করেই এই অঞ্চলের শত শত মানুষ জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে পারতো। এজন্য আমরা তিস্তা নদী খননের দাবি জানাই। আমাদের ত্রাণের কোনও প্রয়োজন নেই।’
তিস্তা ব্যারাজ এলাকার দোয়ানি মংৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি রজব আলী বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে ভারতে ভারী বর্ষণ হয়েছে। এ কারণে তিস্তা নদীতে পানি বেড়েছে। এতে জেলেরা মাছ শিকার করতে পারছেন।
অনেকে গত কয়েকদিনে প্রতিদিন চার-পাঁচ কেজি করে বৈরালী মাছ শিকার করেছেন। তিস্তায় পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকলে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার কয়েক হাজার জেলের জীবিকা স্বাভাবিকভাবে চলে। তবে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক না থাকলে জেলেদের পেশা বদলাতে হয়। সরকার যদি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে তাহলে শুধু যে আমরা লাভবান হবো, তা কিন্তু নয়। এতে জমি বাঁচবে, প্রতি বছর ভাঙনরোধ হবে, কৃষি উৎপাদন বাড়বে, সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে হবে না, মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তাই আমাদের দাবি, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করুন।’
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদ দৌলা বলেন, ‘তিস্তা নদীর উজানে ভারতে ভারী বর্ষণ হয়েছিল। আমাদের অঞ্চলেও দুই দিন বৃষ্টিপাত হয়েছে। সবমিলিয়ে উজানের ঢলে শুকিয়ে যাওয়া তিস্তা নদীতে পানি বেড়ে গেছে। ফলে জীববৈচিত্র্যের পাশাপাশি জেলেদের মাঝে প্রাণ ফিরেছে।’
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে নদীর দুই তীরের মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বদলে যাবে এই অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। এজন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পানি উন্নয়ন বোর্ড সরকারের উচ্চ মহলে যোগাযোগ করে চলেছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।