সকাল ৮টা, ঢাকার গুলিস্তান। রিকশাওয়ালা জাকির ভাই হৈচৈ ভরা রাস্তায় থামলেন। স্মার্টফোন বের করে টেলিগ্রাম খুললেন – গ্রুপে নতুন অর্ডার নোটিফিকেশন। বিকেল ৫টা, চট্টগ্রামের এক অফিস। সুমাইয়া আপু দ্রুত টেলিগ্রামের ‘সেভড মেসেজেস’-এ ঢুকে গেলেন, সারাদিনের জরুরি নোট খুঁজতে। মধ্যরাত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রবিন। পরীক্ষার নোট শেয়ার করার জন্য টেলিগ্রাম চ্যানেলের ‘টপিক’ ফিচারে আলাদা আলাদা সেকশন বানাচ্ছেন। টেলিগ্রাম অ্যাপের গোপন ট্রিকস জানা থাকলে শুধু মেসেজিং অ্যাপ নয়, এটি হয়ে ওঠে আপনার ডিজিটাল লাইফের পাওয়ার হাব। কিন্তু কতজনই বা এই অ্যাপের সব ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার জানেন? এই গাইডে আপনাকে টেলিগ্রামের সেই অদেখা, অব্যবহৃত, কিন্তু অসাধারণ সব ট্রিকস ও ফিচারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব, যা আপনার দক্ষতা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেবে!
টেলিগ্রাম অ্যাপের গোপন ট্রিকস: শুরু হোক মাস্টারির যাত্রা (H2)
টেলিগ্রাম শুধু ‘এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড’ চ্যাটের জন্যই বিখ্যাত নয়। এর ভেতরে লুকিয়ে আছে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর, যোগাযোগকে সুসংগঠিত করার এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা শক্তিশালী করার একাধিক স্তর। বাংলাদেশে এর জনপ্রিয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিশেষ করে ব্যবসায়িক যোগাযোগ, শিক্ষামূলক গ্রুপ এবং সামাজিক আন্দোলনে। কিন্তু বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই শুধুমাত্র বেসিক মেসেজিং ফিচারগুলোই ব্যবহার করেন। আসুন, ডুব দেই সেই গোপন জগতে:
- নীরব যোগাযোগের শিল্প (H3): চ্যাটে গোলমাল নয়, প্রয়োজন শৃঙ্খলা।
- ডিসএ্যাবল নোটিফিকেশন (কিন্তু স্মার্টলি): শুধু মিউট করলেই হয় না! স্পেসিফিক কীওয়ার্ডের জন্য নোটিফিকেশন পেতে
@Telegram
বটে মেসেজ করুন/alert
কমান্ড। উদাহরণ:/alert project_deadline
লিখলে, যে কোনো চ্যাটে ‘project_deadline’ শব্দটা আসলেই আপনাকে নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে – গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ মিস হওয়ার ভয় দূর হবে। - পিনওয়ার্থি মেসেজ, কিন্তু অদৃশ্য: কোনো মেসেজকে পিন করলেন, কিন্তু চান না অন্যরা বুঝতে পারুক? ‘পিন মেসেজ’ অপশনে গিয়ে ‘পিন নোটিফিকেশন শো করবেন না’ টিক চিহ্নিত করুন। মেসেজটি পিন হয়ে যাবে নিঃশব্দে।
- সাইলেন্ট মেসেজিং (ঢাকা অফিসের গোপন অস্ত্র!): কোনো গ্রুপে মেসেজ পাঠানোর সময় টেক্সট বক্সের পাশের ‘পেপারক্লিপ’ আইকনে ক্লিক করুন (বা লম্বা প্রেস করুন), তারপর ‘সাইলেন্টলি’ অপশনটি সিলেক্ট করুন। মেসেজ যাবে, কিন্তু কারোরই নোটিফিকেশন বাজবে না – রাতের শিফটে বা মিটিং চলাকালীন আদর্শ।
- লোকাল সেভড মেসেজেস – আপনার ব্যক্তিগত নোটপ্যাড: ‘সেভড মেসেজেস’ শুধু ফরওয়ার্ড করা মেসেজ জমা রাখার জায়গা নয়! এটিকে নিজের কাছে মেসেজ করার জন্য ব্যবহার করুন। ‘New Message’ এ ক্লিক করে রিসিপিয়েন্ট হিসেবে
@self
বাSaved Messages
লিখুন (বা নিজের নাম সিলেক্ট করুন)। এটি আপনার দ্রুত নোট, লিঙ্ক সেভ, কিংবা রিমাইন্ডার সেট করার পার্সোনাল স্পেস। টেলিগ্রামের অফিসিয়াল টিপস এটিকে “ইনবক্স জিরো” বজায় রাখার উপায় বলে উল্লেখ করে।
- ডিসএ্যাবল নোটিফিকেশন (কিন্তু স্মার্টলি): শুধু মিউট করলেই হয় না! স্পেসিফিক কীওয়ার্ডের জন্য নোটিফিকেশন পেতে
- ফোল্ডার ফিউ: চ্যাটের বিশৃঙ্খলা দূর করুন (H3)
ডজন ডজন গ্রুপ আর চ্যাটে ডুবে যাচ্ছেন? ফোল্ডার সিস্টেমই সমাধান। এই টেলিগ্রাম অ্যাপের গোপন ট্রিকস অনেকেই জানেন না।- কাস্টম ফোল্ডার বানানো: Settings > Chat Folders > Create New Folder।
- ইনক্লুড চ্যাটস: কোন ধরনের চ্যাট এই ফোল্ডারে যাবে? ব্যক্তিগত, গ্রুপ, চ্যানেল, বট, আনরিড, আনপিন্ড ইত্যাদি – শর্ত দিয়ে ফিল্টার করুন। যেমন: ‘কাজ’ নামে ফোল্ডার বানান, যাতে শুধুমাত্র ‘কোম্পানি’, ‘প্রজেক্ট’ কিওয়ার্ড আছে এমন চ্যাট/গ্রুপ ঢুকবে।
- এক্সক্লুড চ্যাটস: বিশেষ কিছু চ্যাট বাদ দিতে চাইলে।
- হোমস্ক্রিনে ফোল্ডার: ফোল্ডার তৈরি করে ‘Add to Home Screen’ অপশন অন করলে, মেইন চ্যাট লিস্টের নিচে সেগুলোর ট্যাব চলে আসবে – এক ক্লিকে সুইচিং। ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যামে বসে সহজেই কাজের ফোল্ডারে চলে যেতে পারবেন!
গ্রুপ ও চ্যানেল ম্যানেজমেন্টে প্রো লেভেলের টেলিগ্রাম অ্যাপের গোপন ট্রিকস (H2)
বাংলাদেশে টেলিগ্রাম গ্রুপ ও চ্যানেলের ব্যবহার বিপুল – শিক্ষা, ব্যবসা, কমিউনিটি সবখানেই। কিন্তু বড় গ্রুপ ম্যানেজ করা চ্যালেঞ্জিং। এই ট্রিকসগুলো আপনাকে অ্যাডমিন হিসেবে শক্তিশালী করবে:
- পারমিশন মাইক্রো-ম্যানেজমেন্ট (H3): শুধু অ্যাডমিন বানালেই দায়িত্ব শেষ নয়!
- কাস্টম টাইটেল ও পারমিশন: নতুন অ্যাডমিন অ্যাড করার সময় ‘Custom Title’ দিন (যেমন: “কন্টেন্ট মডারেটর”, “টেক সাপোর্ট”)। তারপর নিচে স্ক্রল করে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে পারমিশনগুলো সেট করুন:
- নতুন মেম্বার অ্যাড করা/রিমুভ করা পারবে?
- মেসেজ ডিলিট/এডিট পারবে?
- পিন মেসেজ, গ্রুপ ইনফো চেঞ্জ, মিডিয়া পোস্ট, লিঙ্ক অ্যাড, এমনকি অন্যান্য অ্যাডমিনদের অ্যাড/রিমুভ করার ক্ষমতাও দিতে পারেন (সাবধান!).
- রেস্ট্রিক্টেড ইউজারদের জন্য বিশেষ নিয়ম: কোনো সদস্যকে ‘রেস্ট্রিক্ট’ করুন। এরপর আলাদাভাবে তার পারমিশন ঠিক করুন – সে কি মেসেজ পাঠাতে পারবে? মিডিয়া পাঠাতে পারবে? লিঙ্ক পাঠাতে পারবে? অন্যকে অ্যাড করতে পারবে? পিন মেসেজ দেখতে পারবে? এটি ট্রাবলমেকার মেম্বার ম্যানেজমেন্টের আদর্শ টুল।
- ডিফল্ট পারমিশন ঠিক করুন: গ্রুপ সেটিংসে গিয়ে ‘Permissions’ এ ক্লিক করে নতুন মেম্বারদের জন্য ডিফল্ট পারমিশন সেট করুন। যেমন: নতুন সদস্যরা মিডিয়া পাঠাতে পারবে না, কিন্তু টেক্সট পাঠাতে পারবে। স্প্যাম কমবে।
- কাস্টম টাইটেল ও পারমিশন: নতুন অ্যাডমিন অ্যাড করার সময় ‘Custom Title’ দিন (যেমন: “কন্টেন্ট মডারেটর”, “টেক সাপোর্ট”)। তারপর নিচে স্ক্রল করে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে পারমিশনগুলো সেট করুন:
- টপিকস: গ্রুপের ভেতরে সুসংগঠিত সাব-গ্রুপ (H3 – টেলিগ্রামের অন্যতম শক্তিশালী কিন্তু কম ব্যবহৃত ফিচার)
২০০+ মেম্বারের গ্রুপে আলোচনা এলোমেলো? ‘টপিকস’ ফিচারটি চালু করুন! গ্রুপ সেটিংস > Group Type > Topics (Beta) এ গিয়ে এক্টিভেট করুন। এরপর:- সাবজেক্ট ভিত্তিক টপিক ক্রিয়েট করুন: যেমন: “ক্লাস রুটিন”, “নোট শেয়ার”, “জিজ্ঞাসা”, “সাধারণ আলোচনা”।
- প্রতিটি টপিক আলাদা থ্রেড: প্রতিটি টপিকের আলোচনা সম্পূর্ণ আলাদা থ্রেডে চলে যায়। নির্দিষ্ট বিষয় খুঁজে পাওয়া সহজ হয়।
- নতুন মেম্বারদের জন্য স্বয়ংক্রিয় ওয়েলকাম মেসেজ: ‘General’ টপিকে একটি পিন্ড ওয়েলকাম মেসেজ সেট করুন, যা নতুন মেম্বারদের প্রথম দেখাবে – গ্রুপের নিয়ম, লিঙ্ক সব এক জায়গায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের গ্রুপটি এই ফিচার ব্যবহার করে সফলভাবে নোট শেয়ারিং সংগঠিত করেছে।
- অটোমেশন ও বটের জাদু (H3): মানুষের কাজ বট দিয়ে করান!
- অটো-ডিলিট মেসেজ: গ্রুপে স্প্যাম বা অপ্রয়োজনীয় মেসেজ বেড়ে গেছে?
@GroupHelpBot
বা@AntiServiceMessageBot
এর মতো বট যুক্ত করুন। কনফিগার করে সেট করতে পারেন যে, নতুন মেম্বারের প্রথম মেসেজ, বা কোনো নির্দিষ্ট কীওয়ার্ড (যেমন: “বিক্রি”, “পণ্য”) যুক্ত মেসেজ অটোমেটিকালি ডিলিট হয়ে যাবে। টেলিগ্রাম বট এপিআই ডকুমেন্টেশন এই বটগুলোর কার্যকারিতার ভিত্তি। - কাস্টম ওয়েলকাম মেসেজ + রুলস:
@Combot
বা@GroupButler_bot
ব্যবহার করে নতুন মেম্বার অ্যাড হলে অটোমেটিকালি একটি ওয়েলকাম মেসেজ পাঠান, সাথে গ্রুপ রুলসের লিঙ্ক। এমনকি নির্দিষ্ট সময় পর ওয়েলকাম মেসেজ অটো ডিলিটও করতে পারেন। - ক্যাপশন সহ মিডিয়া পোস্ট:
@CaptionBot
এ ছবি বা ভিডিও ফরওয়ার্ড করুন, ক্যাপশন লিখুন, বট সেটা নিয়ে পোস্ট করে দেবে আপনার চ্যানেলে – সময় বাঁচবে। - রিমাইন্ডার বট:
@AlertBot
বা@RemindMeBot
ব্যবহার করে নিজেকে বা পুরো গ্রুপকে রিমাইন্ডার সেট করুন।/remind 2h পর মিটিং
লিখুন, বট ঠিক সময়ে নোটিফাই করবে।
- অটো-ডিলিট মেসেজ: গ্রুপে স্প্যাম বা অপ্রয়োজনীয় মেসেজ বেড়ে গেছে?
গোপনীয়তা ও নিরাপত্তায় টেলিগ্রাম অ্যাপের গোপন ট্রিকস (H2)
টেলিগ্রামের নিরাপত্তা ফিচার বিখ্যাত, কিন্তু এর গভীরে আরও কিছু ট্রিক আছে যা আপনার প্রাইভেসিকে আরও শক্তিশালী করে:
- ফোন নম্বর লুকানোর শেষ সীমানা (H3):
- হিডেন নম্বর বাই ডিফল্ট: Settings > Privacy and Security > Phone Number > Who can see my phone number? এ গিয়ে ‘Nobody’ সিলেক্ট করুন। এরপরও যদি কেউ আপনার নম্বর জানতে পারে (যেমন মিউচুয়াল কন্টাক্ট), সেটাও লুকানোর অপশন আছে। ওই সেটিং পেইজেই ‘Who can find me by my number?’ এ গিয়ে ‘My Contacts’ সিলেক্ট করুন। তাহলে শুধু আপনার কন্টাক্ট লিস্টে থাকা মানুষরাই ফোন নম্বর দিয়ে আপনাকে টেলিগ্রামে খুঁজে পাবে।
- ফরওয়ার্ডেড মেসেজে নম্বর লুকান: কোনো মেসেজ ফরওয়ার্ড করলে, সেটার সাথে আসল সেন্ডারের নাম ও আইডি (যদি পাবলিক হয়) চলে আসে। এটি বন্ধ করতে Settings > Privacy and Security > Forwarded Messages > ‘Privacy for forwarded messages’ অপশনে গিয়ে ‘Nobody’ সিলেক্ট করুন। এখন আপনার ফরওয়ার্ড করা মেসেজে লেখা থাকবে “Forwarded from Telegram User”, নাম/নম্বর নয়। বাংলাদেশের সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের জন্য এটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি টেলিগ্রাম অ্যাপের গোপন ট্রিকস।
- লাস্ট সীন & অনলাইন স্ট্যাটাসে নিয়ন্ত্রণ (H3):
- গ্রানুলার কন্ট্রোল: Settings > Privacy and Security > Last Seen & Online এ গিয়ে সেট করতে পারেন কে কে আপনার লাস্ট সীন সময় দেখতে পাবে (Everybody, My Contacts, Nobody)। এর চেয়েও শক্তিশালী অপশন হচ্ছে ‘Exceptions’। ‘Who can see my last seen time?’ এ ‘My Contacts’ সিলেক্ট করুন, তারপর ‘Add Exceptions’ > ‘Never Share With’ এ গিয়ে সেইসব কন্টাক্টকে সিলেক্ট করুন যারা আপনার কন্টাক্টেও আছে কিন্তু আপনি চান না তারা যেন দেখতে পায় (যেমন: বস, কিছু আত্মীয়)। একইভাবে ‘Always Share With’ দিয়ে বিশেষ কিছু লোককে অ্যাকসেস দিতে পারেন, যদিও ডিফল্ট সেটিং ‘Nobody’।
- অনলাইন স্ট্যাটাস লুকান: এই একই পেজে ‘Online Status’ অপশন। কে কে আপনার ‘অনলাইন’ স্ট্যাটাস দেখতে পাবে তা ঠিক একই নিয়মে কন্ট্রোল করুন। ‘Nobody’ সিলেক্ট করে সম্পূর্ণ লুকিয়ে ফেলতে পারেন।
- সিক্রেট চ্যাট নয়, এর বাইরেও নিরাপত্তা (H3):
- অটো-ডিলিট টাইমার (নন-সিক্রেট চ্যাটেও!): যেকোনো নরমাল চ্যাটেও আপনি মেসেজ পাঠানোর সময় বা পাঠানোর পরে টাইমার সেট করতে পারেন! মেসেজ পাঠানোর আগে টেক্সট বক্সের পাশের ‘পেপারক্লিপ’ আইকনে ক্লিক করুন (বা মেসেজটি লম্বা প্রেস করুন), তারপর ‘Set Auto-Delete Timer’। ২৪ ঘন্টা, ৭ দিন বা ৩১ দিন সিলেক্ট করুন। মেসেজ সেই সময় পর উভয় পক্ষের ডিভাইস থেকে মুছে যাবে। এটি নিয়মিত ক্লিনআপের জন্য দারুণ, তবে মনে রাখুন এটি এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড সিক্রেট চ্যাটের মতো নয়।
- টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন (অবশ্যই চালু করুন!): Settings > Privacy and Security > Two-Step Verification এ গিয়ে সেট আপ করুন। শুধু SMS কোড নয়, একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিন। এটি আপনার অ্যাকাউন্টে অ্যাকসেস পাওয়ার দ্বিতীয় স্তরের নিরাপত্তা যোগ করবে। পাসওয়ার্ড ভুলে না যান, রিকভারি ইমেইল ঠিক করে রাখুন! বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন অনলাইন অ্যাকাউন্টে টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন ব্যবহারের উপর জোর দেয়।
মিডিয়া, ফাইল ও সার্চের গোপন শক্তি (H2)
টেলিগ্রামের ফাইল শেয়ারিং ক্ষমতা অসাধারণ। এর সীমা আরও প্রসারিত করুন:
- মিডিয়া পাঠানোর সূক্ষ্ম কৌশল (H3):
- কম্প্রেশন ছাড়াই ছবি পাঠান: ডিফল্টভাবে টেলিগ্রাম ছবি কম্প্রেস করে। অরিজিনাল কোয়ালিটি পাঠাতে, গ্যালারি থেকে ছবি সিলেক্ট করার পর, উপরে ‘1 of X’ লেখা জায়গায় ক্লিক করুন। এবার ‘Send as File’ সিলেক্ট করুন। ছবিটি ফাইল হিসেবে যাবে, কোনো কম্প্রেশন ছাড়াই।
- ভিডিও স্ট্রিমিং (বড় ফাইলেও দ্রুত শুরু): বড় ভিডিও ফাইল পাঠালে রিসিভারকে পুরো ফাইল ডাউনলোড না করেই প্লে করা যায়। এটি টেলিগ্রামের নিজস্ব প্রযুক্তি। ভিডিও আপলোড হওয়ার সাথে সাথেই রিসিভার প্লে শুরু করতে পারে।
- গোপন ক্যাপশন: ছবি বা ভিডিও পাঠানোর সময় ক্যাপশন লিখতে ভুলে গেছেন? চিন্তা নেই! মিডিয়া পাঠানোর পর, সেটিকে লম্বা প্রেস করুন এবং ‘Edit’ বাটনে ক্লিক করুন। এখন ক্যাপশন যোগ করুন বা পুরনোটা এডিট করুন।
- ফাইল ম্যানেজমেন্ট মাস্টারি (H3):
- সেভড মেসেজেস = স্মার্ট স্টোরেজ: ‘সেভড মেসেজেস’-কে শুধু নোট নয়, আপনার ক্লাউড স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করুন! যেকোনো ফাইল (PDF, DOCX, ZIP, MP3, MP4 – 2GB পর্যন্ত!) নিজের Saved Messages-এ ফরওয়ার্ড করুন। এটি অটোমেটিকালি ক্যাটাগরাইজ হয়ে যাবে (Documents, Music, Video ইত্যাদি)। সার্চ করেও সহজে খুঁজে পাবেন। অফলাইনে অ্যাকসেসের জন্য ফাইল ডাউনলোড করে রাখুন।
- গ্লোবাল সার্চের ক্ষমতা: টেলিগ্রামের সার্চ বার শক্তিশালী। শুধু চ্যাটের নাম নয়, কীওয়ার্ড দিয়ে সেই চ্যাটের ভেতরের মেসেজ খুঁজুন। সার্চ করার পর, ‘All Chats’ এর বদলে নিচে স্ক্রল করে নির্দিষ্ট কোনো চ্যাট বা গ্রুপ সিলেক্ট করুন। শুধু মেসেজ নয়, ফাইল টাইপ দিয়েও সার্চ করুন! সার্চ বারে ক্লিক করে উপরের ট্যাব থেকে ‘Files’, ‘Links’, ‘Music’, ‘Video’ ইত্যাদি সিলেক্ট করুন। খুঁজে পাবেন নির্দিষ্ট টাইপের আইটেম। একটি মেসেজে ব্যবহৃত #হ্যাশট্যাগ সার্চ করলেও কাজ করে।
ডেস্কটপ ও টেলিগ্রাম X: আরও গভীরে (H2)
- ডেস্কটপ অ্যাপের সুপ্ত ক্ষমতা (H3):
(উইন্ডোজ/macOS/Linux – ডাউনলোড)- কাস্টম থিম (ডার্ক মোডের বাইরেও): Settings > Chat Settings > Use Custom Chat Background > ‘Create New Theme’। এখানে চ্যাট ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজ, একসেন্ট কালার, টেক্সট কালর পর্যন্ত কাস্টমাইজ করুন। আপনার ইউনিক থিম বানান।
- মার্কডাউনের শক্তি: ডেস্কটপ অ্যাপে টেক্সট ফরম্যাটিং (বোল্ড, ইটালিক, স্ট্রাইকথ্রু, মনোস্পেস, লিঙ্ক) মার্কডাউন সিনট্যাক্স দিয়ে দ্রুত করতে পারেন। যেমন:
**বোল্ড**
-> বোল্ড__ইটালিক__
-> ইটালিক~~স্ট্রাইকথ্রু~~
->স্ট্রাইকথ্রু- “
মনোস্পেস
” ->মনোস্পেস
[টেক্সট](https://লিংক.কম)
-> টেক্সট
- কী-বোর্ড শর্টকাট: ডেস্কটপে গতি বাড়ায়। Ctrl+N (নতুন চ্যাট), Ctrl+1/2/3 (ফোল্ডার সুইচ), Ctrl+Up/Down (চ্যাটে স্ক্রল), Ctrl+F (সার্চ)। Settings > Advanced > Keyboard Shortcuts তে সব দেখুন।
- টেলিগ্রাম X/টেলিগ্রাম প্রিমিয়াম (H3 – অপশনাল এক্সপ্লোরেশন):
- টেলিগ্রাম X (বিটা): অফিসিয়াল টেলিগ্রাম অ্যাপের একটি এক্সপেরিমেন্টাল সংস্করণ (iOS, Android)। নতুন UI, এনিমেশন, পারফরম্যান্স অপ্টিমাইজেশন এবং কিছু এক্সক্লুসিভ ফিচার (কাস্টম থিমে আরও নিয়ন্ত্রণ) থাকতে পারে। তবে এটি মূল অ্যাপের চেয়ে কম স্থিতিশীল হতে পারে।
- টেলিগ্রাম প্রিমিউম ($4.99-$5.99/মাস): এক্সট্রা স্টোরেজ (4GB -> 400GB), দ্রুত ডাউনলোড, এক্সক্লুসিভ স্টিকার, ভয়েস-টু-টেক্সট, প্রোফাইল ভিডিও, নো-এডস ইত্যাদি সুবিধা দেয়। বাংলাদেশে ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড বা মোবাইল ফাইন্যান্স দিয়ে কিনতে পারেন। আপনার ব্যবহারের মাত্রা দেখে সিদ্ধান্ত নিন। টেলিগ্রাম প্রিমিয়াম ডিটেইলস
টেলিগ্রাম অ্যাপের গোপন ট্রিকস শুধু কিছু অতিরিক্ত বাটন ক্লিক নয়, এটি আপনার ডিজিটাল জীবনকে গতি, গোপনীয়তা ও নিয়ন্ত্রণে ভরিয়ে তোলার চাবিকাঠি। ঢাকার ব্যস্ত রাস্তা থেকে শুরু করে সিলেটের শান্ত ক্যাম্পাস – এই টিপসগুলো প্রতিটি বাংলাদেশি ব্যবহারকারীকে টেলিগ্রামকে আরও কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে সাহায্য করবে। ফোল্ডারে চ্যাট সাজিয়ে সময় বাঁচান, বট দিয়ে রুটিন কাজ অটোমেট করুন, টপিকসে বিশৃঙ্খলা দূর করুন, আর গোপনীয়তা সেটিংস দিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রাখুন। আজই এই ট্রিকসগুলো প্রয়োগ করে দেখুন, টেলিগ্রাম শুধু একটি অ্যাপ নয়, আপনার অনলাইন ক্ষমতাকে পূর্ণতা দানকারী একটি অপরিহার্য সহকারী হয়ে উঠবে। টেলিগ্রাম অ্যাপের গোপন ট্রিকস জানা এবং ব্যবহারের মধ্য দিয়েই আপনি এই অ্যাপের প্রকৃত সম্ভাবনা উন্মোচন করতে পারবেন। এখনই আপনার টেলিগ্রাম সেটিংস খুলুন, এবং এই নতুন পাওয়ারগুলোকে কাজে লাগানোর পথে প্রথম পদক্ষেপ নিন!
জেনে রাখুন (FAQs)
১. টেলিগ্রামে কি সত্যিই এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্টেড চ্যাট থাকে?
হ্যাঁ, তবে শুধুমাত্র “সিক্রেট চ্যাট” (Secret Chat) মোডে। এই চ্যাট শুধুমাত্র অংশগ্রহণকারীদের ডিভাইসে ডিক্রিপ্ট হয়, টেলিগ্রাম সার্ভারেও নয়। এতে স্ক্রিনশট ডিসএ্যাবল, স্বয়ংক্রিয় মেসেজ ডিলিটেশন (টাইমার সেট করে) এবং ফরওয়ার্ডিং বন্ধ করার অপশন থাকে। নিয়মিত ওয়ান-টু-ওয়ান চ্যাট বা গ্রুপ চ্যাটগুলি সার্ভারে এনক্রিপ্টেড থাকে, কিন্তু টেলিগ্রামের কাছে ডিক্রিপশন কী থাকে।
২. টেলিগ্রামে ফাইল সাইজ লিমিট কত?
টেলিগ্রামে আপনি সর্বোচ্চ ২ জিবি (2000 এমবি) পর্যন্ত সাইজের একটি ফাইল পাঠাতে বা স্টোর করতে পারবেন। এটি বেশিরভাগ অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপের (হোয়াটসঅ্যাপ ~100MB, Facebook Messenger ~25MB) তুলনায় অনেক বেশি। প্রিমিয়াম ব্যবহারকারীরা তাদের ক্লাউড স্টোরেজ ৪০০ জিবি পর্যন্ত বাড়াতে পারেন।
৩. টেলিগ্রাম বট কি নিরাপদ?
বটের নিরাপত্তা নির্ভর করে বটটি কে তৈরি করেছে এবং এর কার্যক্রমের উপর। অফিসিয়াল টেলিগ্রাম বট (যেমন @BotFather
, @GDPRbot
) সম্পূর্ণ নিরাপদ। তবে তৃতীয় পক্ষের বটগুলোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। শুধুমাত্র বিশ্বস্ত সোর্সের বট ব্যবহার করুন, বিশেষ করে যে বটগুলো অ্যাডমিন এক্সেস, আপনার মেসেজ পড়া বা ব্যক্তিগত তথ্য চায়। বট অ্যাড করার আগে এর রিভিউ এবং কাজ বুঝে নিন। কখনো বটকে আপনার টু-স্টেপ ভেরিফিকেশন পাসওয়ার্ড দেবেন না।
৪. টেলিগ্রাম প্রিমিয়াম কি বাংলাদেশে কেনা যায়?
হ্যাঁ, বাংলাদেশি ব্যবহারকারীরা টেলিগ্রাম প্রিমিয়াম কিনতে পারেন। টেলিগ্রাম অ্যাপের Settings > Telegram Premium সেকশনে গিয়ে সাবস্ক্রিপশন প্যাকেজ (মাসিক, বার্ষিক) নির্বাচন করে ক্রয় করা যায়। ভিসা, মাস্টারকার্ড, মেস্টারকার্ড, ইউনিয়নপে সহ আন্তর্জাতিক ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড বা বিকাশ, নগদ, রকেটের মতো মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিস ব্যবহার করে (কার্ড লিঙ্ক করে) পেমেন্ট করা সম্ভব।
৫. “টপিকস” ফিচারটি সব গ্রুপে কাজ করে না কেন?
টপিকস ফিচারটি বর্তমানে একটি বিটা ফিচার। এটি শুধুমাত্র ২০০ বা তার বেশি সদস্য আছে এমন সুপারগ্রুপে (Supergroups) চালু করা যায়। ছোট গ্রুপ বা সাধারণ গ্রুপে এই অপশন পাওয়া যায় না। গ্রুপ অ্যাডমিন গ্রুপ সেটিংস > Group Type > Topics (Beta) এ গিয়ে এটি চালু করতে পারেন।
৬. টেলিগ্রামে আমার ফোন নম্বর লুকানো থাকলেও কেউ কি জানতে পারবে?
আপনি যদি উপরে উল্লিখিত গোপনীয়তা সেটিংস (“Who can see my phone number?” এবং “Who can find me by my number?” কে ‘Nobody’ বা ‘My Contacts’ + ‘Never Share With’ দিয়ে সঠিকভাবে কনফিগার করে থাকেন), তাহলে আপনার টেলিগ্রাম কন্টাক্ট লিস্টে নেই এমন কেউ সাধারণত আপনার ফোন নম্বর জানতে পারবে না। তবে, যদি আপনি কাউকে নিজে থেকে আপনার নম্বর দিয়ে মেসেজ করেন, বা আপনি দুজনেরই মিউচুয়াল কন্টাক্ট থাকে এবং তার প্রাইভেসি সেটিংসে সে নম্বর শেয়ার করে থাকে, তাহলে সম্ভাবনা থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।