জুমবাংলা ডেস্ক : ঠাকুরগাঁওয়ে লোকমুখে প্রচলিত আছে একটি জিনের মসজিদের কথা। জনশ্রুতি আছে, কোনো এক অমাবস্যার রাতে জিন-পরীরা এই এলাকার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় এই বালিয়া ইউনিয়নের এলাকাটি পছন্দ করে। তারপর তারা মাটিতে নেমে এসে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করে, কিন্তু গম্বুজ তৈরির আগেই ভোর হয়ে যাওয়াতে কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যায় তারা। ফলে গম্বুজ ছাড়া দাঁড়িয়ে থাকে অসাধারণ কারুকার্যময় মসজিদটি। জিন-পরীরা এটির কিছু অংশ তৈরি করেছে, এ জন্য স্থানীয়দের কাছে এটি জিনের মসজিদ নামে পরিচিত। এমনি গল্প প্রচলিত আছে এই মসজিদটি ঘিরে।
স্থানীয় বাসিন্দা মহিউদ্দিন চৌধুরী জানান, মসজিদটির বয়স প্রায় ১১০ বছরের মতো হবে। আমাদের এই এলাকাটি কিছুটা উঁচু ও পিরামিড আকৃতির ছিল। বনজঙ্গলের মধ্যেই ছোট্ট একটি মসজিদ ঘর নির্মাণ করে এলাকার মানুষ নামাজ আদায় করত। এরপর মসজিদ কমিটি ও স্থানীয় সবার সহযোগিতায় এই মসজিদের বাকি কাজ সম্পন্ন করা হয়। প্রতিদিন কমবেশি অনেকেই আসে এই সুন্দর মসজিদটি দেখতে। মসজিদ দেখতে এবং সেখানে নামাজ আদায় করতে দূর-দূরান্ত থেকে মুসল্লিরা আসেন নিয়মিত। অনেকে আসেন শুধু এটির সৌন্দর্য উপভোগের জন্য।
মসজিদটি নির্মাণের সময় : মসজিদের গায়ে খোদাই করা সন অনুসারে এটি নির্মিত হয় ১৩১৭ বঙ্গাব্দে মানে ১৯১০ খিষ্টাব্দে। আবার মসজিদের নির্মাতা মেহের বকস চৌধুরীর কবরেও তার মৃত্যুর সন খোদাই করা আছে ১৩১৭ বঙ্গাব্দ। মেহের বকসের মৃত্যুর সময়েই মসজিদটির বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়ে যায়।
মসজিদের নির্মাণের ইতিহাস : জমিদার মেহের বকস চৌধুরী ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে বালিয়াতে একটি মসজিদ তৈরির পরিকল্পনা করেন। এই জন্য দিল্লির আগ্রা মতান্তরে মুর্শিদাবাদ থেকে স্থপতি আনা হয়। মুঘল স্থাপত্যের রীতি অনুযায়ী নকশাকৃত এই মসজিদ তৈরি করাটা ছিল বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ। হঠাৎ প্রধান স্থপতির মৃত্যুর ফলে মসজিদ নির্মাণের কাজও থেমে যায়। মেহের বকস স্থানীয় কারিগরদের সহায়তায় পুনরায় মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। কিন্তু স্থানীয় কারিগররা মসজিদের গম্বুজ নির্মাণে ব্যর্থ হন। এর পরে ১৯১০ সালে মেহের বকস চৌধুরী মৃত্যুবরণ করেন।
তার মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই কয়েক বছর পর মসজিদটি নির্মাণের জন্য আবারো উদ্যোগ নেন। কিন্তু নির্মাণকাজ সমাপ্ত না করে তিনিও মৃত্যুবরণ করেন। ফলে মসজিদটি আবারো গম্বুজ ছাড়াই দাঁড়িয়ে থাকে।
অবশেষে মেহের বকস চৌধুরীর ছেলে মরহুম বসরত আলী চৌধুরীর কন্যা বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি তসরিফা খাতুন চৌধুরী ২০১০ সালে প্রতœতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের কারিগরি সহায়তায় বালিয়া মসজিদটির সংস্কারকাজ শুরু করেন। স্থপতি সৈয়দ আবু সুফিয়ান কুশলের নকশায় নতুনভাবে গম্বুজ নির্মাণ করা হয় ।
মসজিদটির আকার আয়তন বৈশিষ্ট্য : মুঘল স্থাপনার আদলে তৈরি মসজিদটি সমতল ভূমি থেকে ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি উঁচু প্লাটফর্মের উপর পূর্ব-পশ্চিমে ৬২ ফুট ৬ ইঞ্চি ও উত্তর-দক্ষিণে ৬৯ ফুট ২ ইঞ্চি আয়তাকার কমপ্লেক্সে অবস্থিত। আয়তাকার কমপ্লেক্সটি সিঁড়িসহ প্রবেশপথ, খোলা চত্বর ও মূল ভবন বা নামাজঘর এই তিন অংশে বিভক্ত। এর মধ্যে মূল ভবনটি পূর্ব-পশ্চিমে ২৫ ফুট ১১ ইঞ্চি প্রশস্ত। প্লাটফর্ম থেকে মসজিদটির ছাদের উচ্চতা ১৭ ফুট। মসজিদের ছাদে একই সাইজের তিনটি গম্বুজ ও আটটি মিনার আছে। যার মধ্যে চার কোণের চারটি মিনার বড় এবং বাকি চারটি ছোট। ভিত্তিসহ পুরো মসজিদটিই চুন-সুরকির মর্টার এবং হাতে পোড়ানো ইট দিয়ে নির্মিত, ফলে এর রঙও হয়েছে তামাটে। ইটে কোনো অলঙ্করণ না থাকলেও মসজিদের দেয়ালের বিভিন্ন স্থানে ইট কেটে কলস, ঘণ্টা, ডিশ, বাটি, আমলকী,পদ্ম ইত্যাদি নকশা তৈরি করা হয়েছে।
যোগাযোগব্যবস্থা ও দূরত্ব : ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তরে ভূল্লি থানা, সেখান থেকেই প্রায় তিন কিলোমিটার পূর্বে বালিয়া এলাকায় ‘জিনের মসজিদ’ নামে এই ঐতিহাসিক এ মসজিদটির অবস্থান।
অক্ষয় কুমার আমাকে ইচ্ছেমত ব্যবহার করে ছেড়ে দিয়েছে : শিল্পা শেঠি
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান জানান, ঐতিহাসিক বালিয়া মসজিদ এ অঞ্চলের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদটি দেখতে অনেক সুন্দর। মসজিদের ব্যাপারে মসজিদ কমিটি যদি কোনো রকমের সহযোগিতার প্রয়োজন মনে করে তাহলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।