জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। যেসব জেলায় শৈত্যপ্রবাহ নেই, সেখানেও অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত। অনেক জায়গায় বেশ কয়েকদিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যেরও। তীব্র ঠান্ডায় কঠিন হয়ে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। উত্তরের হিমেল বাতাসে রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষই এখন শীতে কাবু।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ভারী কুয়াশার কারণে সূর্যের আলো ভূপৃষ্ঠ পর্যন্ত পৌঁছতে পারছে না। যে কারণে মাটি ও ভবন রাত-দিন ঠান্ডাই থাকছে। ফলে অনুভূত হচ্ছে তীব্র শীত।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান বলেন, রোদ মিলবে আরও চার-পাঁচ দিন পর। এরই মধ্যে শঙ্কা আছে বৃষ্টিরও। তারপর কেটে যাবে কুয়াশা। কুয়াশা কেটে গেলে শীত কিছুটা কম অনুভূত হতে পারে।
পরিবেশবিদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, প্রকৃতির এমন আচরণ স্বাভাবিক নয়। জলবায়ুর প্রভাব ছাড়াও অপরিকল্পিত নগরায়নকে এরজন্য দায়ী। ভবিষ্যতে গরম ও ঠান্ডার তীব্রতা আরও বাড়বে। শীত পরিস্থিতি নিয়ে সারা দেশ থেকে প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
দিনাজপুর: অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহ আর হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দিনাজপুরসহ উত্তরের জনপদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। গত দুদিন ধরে দিনাজপুরে বিরাজ করছে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। রোববার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলায় এটিই এই শীত মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। শনিবারও দিনাজপুরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলা আঞ্চলিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, পৌষের শেষে এসে দিনাজপুরসহ এই অঞ্চলে কমতে শুরু করেছে তাপমাত্রা। উত্তরের হিমেল বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে বলে জানান তিনি।
রাতভর বৃষ্টির মতো ঝিরঝির করে কুয়াশা পড়ছে। ১০ হাত দূরের মানুষ কিংবা কোনো বস্তুকে দেখা যাচ্ছে না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কমলেও ঠান্ডা বাতাসে জড়োসড়ো হয়ে থাকছেন মানুষ। গরম কাপড় পরার পাশাপাশি আবর্জনা, খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। রাতের মতো দিনেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে দূরপাল্লার যানবাহন। বয়স্ক ও শিশুরা নানা শীতজনিত রোগে ভুগছেন।
রাজশাহী: দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমেছে। চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে পুরো রাজশাহী। শীতজনিত নানা জটিলতায় রোগীদের ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে। রোববার সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি। এটি এ মৌসুমে সর্বনিম্ন ছিল। শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার ছিল ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, সর্বোচ্চ-সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমেছে। সর্বোচ্চ আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা খুব কাছাকাছি হওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে।
এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালসহ উপজেলা সদর হাসপাতাল ও বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকেও ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক জানান, উপজেলা পর্যায়ে রোগীর সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। তবে ভর্তি রোগীর চেয়ে আউটডোর রোগীর সংখ্যা বেশি। আর পরিস্থিতি খুব খারাপ, এমনটা নয়। এ সময়টায় রোগী কিছুটা বাড়ে। সেরকমভাবে ব্যবস্থাপনাও করা আছে।
বগুড়া: গত কয়েক দিন ধরে তীব্র শীতে দরিদ্র জনগণ বিশেষ করে ফুটপাত, রোড ডিভাইডার ও স্টেশনে আশ্রয় নেয়া মানুষদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে যে শীতবস্ত্র বিতরণ হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। শীতের পাশাপাশি শীতজনিত রোগ বাড়ছে। শীতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শীতবস্ত্রের দামও অনেক বেড়েছে বলে জানান ক্রেতারা। রোববার সকাল ৬টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ বিকাল ৩টায় ১৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
পাবনা: প্রচণ্ড শীতে শনিবার পাবনা শহরের মুজাহিদ ক্লাব এলাকায় মীরা খাতুন (৭০) নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। ওই এলাকার বাসিন্দা ও সমাজসেবক আঁখিনুর ইসলাম রেমন জানান, প্রচণ্ড শীতের মধ্যে বাড়ির পাশে পুকুরে গোসলে নেমে মীরা খাতুন অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে পাবনার ২ লক্ষাধিক চরাঞ্চলের মানুষসহ ৫ লাখ মানুষের মধ্যে গরম কাপড়ের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে জেলার ৯ উপজেলার শীতার্তদের মধ্যে রোববার পর্যন্ত ৪৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই নগণ্য বলে জানান জনপ্রতিনিধিরা।
খুলনা: গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা ১০ থেকে ১১ ডিগ্রিতে নামছে। শীতের তীব্রতায় বিপাকে পড়েছে শিশু ও বয়স্ক মানুষ। শীতের এই পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন থাকবে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। শনি ও রোববার খুলনায় তাপমাত্রা ছিল ১২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ বছরে খুলনাতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আবহাওয়া অফিস জানায়, ১৫ জানুয়ারির পর তাপমাত্রা একটু বাড়বে। তবে ১৮-১৯ তারিখের পর খুলনায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর আবার তাপমাত্রা কমতে থাকবে।
বরিশাল: বরিশালে টানা চার দিন তাপমাত্রা কমতে কমতে রোববার চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে ঠেকেছে। বরিশাল শেরে বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে শিশু ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতার ১০ গুণ রোগী ভর্তি রয়েছে।
আল্লু অর্জুন থেকে সামান্থা এই ৭ দক্ষিণী তারকার বিদ্যার দৌড় জানলে চমকে উঠবেন
এদিকে, গতকাল সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে দিনাজপুরে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। নওগাঁর বদলগাছীতে রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল দিনাজপুরে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।