ধর্ম ডেস্ক : ইহুদিরা হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের বংশধর। ইহুদি শব্দটি এসেছে ইয়াহুদা থেকে, যিনি ছিলেন হজরত আলাইহিস সালামের জ্যেষ্ঠপুত্র ও হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামে ভাই। মূলত শব্দটি ছিল ইয়াহুজা। জালকে দাল দিয়ে পরিবর্তন করে আরবি করা হয়েছে। ইয়াহুদা শব্দের অর্থ তাওবাকারী। গো বৎসপূজা থেকে তাওবা করার কারণে তার নাম হয়েছে ইয়াহুজা। অর্থাৎ তাওবাকারী। (কুরতুবি প্রথম খণ্ড পৃষ্ঠা-৩৩৮)
ইয়াহুদা বনি ইসরায়েলের একজন সদস্য হলেও তার নাম থেকে আসা ইহুদি শব্দটি বর্তমানে পুরো বনি ইসরায়েল বা ইসায়েল জাতিকে বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
বনি ইসরায়েলের অসদাচরণের কথা আল কোরআনে ৪৯ বার উল্লেখ করা হয়েছে। এবং ইহুদি শব্দটি কোরআনুল কারীমে ৯ বার উল্লেখ করা হয়েছে। কোরআনে এই সম্প্রদায়ের বিবরণ থেকে তাদের স্বভাব চরিত্র ও আল্লাহ দ্রোহীতা বিষয়টি বুঝে আসে।
এই সম্প্রদায়ের লোকেরা পাঁচ শতাধিক নবী ও পয়গাম্বর হত্যা করেছে। ইহুদিরা হজরত মূসা আলাইহিস সালামের অনুসারী। তবে তারা পরবর্তী নবী হজরত ঈসা আলাইহিস সালাম ও হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী হিসেবে স্বীকার করে না।
মুসা আ.-এর কাছে বনি ইসরায়েলে দাবি
বনি ইসরায়েলকে ইহুদি হিসেবে নামকরণের আরেকটি বর্ণনা পাওয়া যায় সূরা আরাফের ১৫৫-১৫৬ নম্বার আয়াতে। আয়াতের বিষয়বস্তু ছিল-
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম যখন বনি ইসরায়েলকে তাওরাতের আহকাম, বিধি-বিধান শুনালেন, তারা বলল, ‘আমরা কেমন করে বিশ্বাস করব যে, এই কিতাব সত্যিই আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে? যতক্ষণ আমরা আল্লাহকে স্বয়ং কথা বলতে না শুনব, ততক্ষণ এটাকে মানব না।’
মুসা আলাইহিস সালাম তখন বনি ইসরায়েলের সত্তরজনকে বেছে নিলেন এবং তাদেরকে ত্বূর পাহাড়ে নিয়ে গেলেন। সেখানে মহান আল্লাহ হজরত মুসা আলাইহিস সালামের সঙ্গে কথোপকথন করলেন, যা তারাও শুনল। কিন্তু এরপর তারা একটি নতুন দাবি করে বসল যে, যতক্ষণ আমরা নিজ চোখে আল্লাহকে না দেখব, ঈমান আনব না।
আল্লাহর শাস্তি ও মুসা আ. -এর দোয়া
দ্বিতীয় আরেকটি মত অনুযায়ী, বনি ইসরায়েল বাসূর পূজা শুরু করে। পুরো জাতির এই মহাপাপ থেকে তওবার জন্য বনি ইসরায়েল থেকে ৭০ জনকে নির্বাচন করে তুর পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা আল্লাহকে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করল। তাদের এমন টালবাহান আর সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কারণে আল্লাহ তায়ালা তাদের ভূমিকম্প দিয়ে ধ্বংস করলেন।
তখন মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে তাদের পাপ থেকে মুক্তির জন্য দোয়ায় বলেছিলেন, ‘ইন্না হুদনা ইলাইক’ অর্থাৎ আমরা তোমার কাছে প্রত্যাবর্তন করলাম বা তওবা করলাম।
কোন কোন মুফাসসিরের মতে, কোরআনের শব্দ هُدْنَا অর্থ, আমরা ফিরে এসেছি অথবা তাওবা করেছি। এই শব্দ থেকে তাদের নামকরণ করা হয়েছে ‘ইয়াহুদ বা ইহুদি’।(ইবন কাসীর)
কোরআনের বর্ণনা
পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে বলা হয়েছে,
الرَّجۡفَۃُ قَالَ رَبِّ لَوۡ شِئۡتَ اَهۡلَکۡتَهُمۡ مِّنۡ قَبۡلُ وَ اِیَّایَ اَتُهۡلِکُنَا بِمَا فَعَلَ السُّفَهَآءُ مِنَّا اِنۡ هِیَ اِلَّا فِتۡنَتُکَ تُضِلُّ بِهَا مَنۡ تَشَآءُ وَ تَهۡدِیۡ مَنۡ تَشَآءُ اَنۡتَ وَلِیُّنَا فَاغۡفِرۡ لَنَا وَ ارۡحَمۡنَا وَ اَنۡتَ خَیۡرُ الۡغٰفِرِیۡنَ وَاکۡتُبۡ لَنَا فِیۡ هٰذِهِ الدُّنۡیَا حَسَنَۃً وَّ فِی الۡاٰخِرَۃِ اِنَّا هُدۡنَاۤ اِلَیۡکَ قَالَ عَذَابِیۡۤ اُصِیۡبُ بِهٖ مَنۡ اَشَآءُ وَ رَحۡمَتِیۡ وَسِعَتۡ کُلَّ شَیۡءٍ فَسَاَکۡتُبُهَا لِلَّذِیۡنَ یَتَّقُوۡنَ وَ یُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ الَّذِیۡنَ هُمۡ بِاٰیٰتِنَا یُؤۡمِنُوۡنَ
আর মুসা নিজের জাতি থেকে সত্তর জন লোককে আমার নির্ধারিত স্থানের জন্য নির্বাচন করল। তারপর যখন ভূমিকম্প তাদেরকে পাকড়াও করলো তখন সে বললো, ‘হে আমার রব, আপনি চাইলে আগেও এদের ধ্বংস করতে পারতেন এবং আমাকেও। আমাদের মধ্যে নির্বোধরা যা করেছে তার কারণে কি আমাদেরকে ধ্বংস করবেন? এটাতো আপনার পরীক্ষা ছাড়া কিছু না। এর মাধ্যমে যাকে চান আপনি পথভ্রষ্ট করেন এবং যাকে চান হিদায়াত দান করেন। আপনি আমাদের অভিভাবক। সুতরাং আমাদের ক্ষমা করে দিন এবং আপনি উত্তম ক্ষমাশীল। আর আমাদের জন্য এ দুনিয়াতে ও আখিরাতে কল্যাণ লিখে দিন। নিশ্চয়ই আমরা আপনার দিকে প্রত্যাবর্তন করেছি।’ তিনি বললেন, আমি যাকে চাই তাকে আমার আযাব দেই। আর আমার রহমত সব বস্তুকে পরিব্যাপ্ত করেছে। সুতরাং আমি তা লিখে দেব তাদের জন্য যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং জাকাত প্রদান করে আর যারা আমার আয়াতসমূহের ওপর ইমান আনে। (সুরা আরাফ,(৭), আয়াত, ১৫৫, ১৫৬)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।