জুমবাংলা ডেস্ক : যানবাহনে শিশুবান্ধব আসন না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় অঙ্কুরেই থেমে যাচ্ছে শিশুদের জীবনের গতি। দুর্ঘটনায় যে শিশুদের মৃত্যুই হচ্ছে এমনটি নয় বরং অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করছে। সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর অনেকগুলো কারণের মধ্যে শিশুদের নিরাপদ আসনের অনুপস্থিতি একটি। কিন্তু শিশু আসন সংযোজন নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নাই। সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮তে শিশু আসন নিয়ে কিছু বলা হয়নি। নিরাপদ সড়ক নিয়ে কাজ করেন এমন কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা কয়েক বছর ধরে যানবাহনে শিশুবান্ধব আসন সংযোজন ও এই সংক্রান্ত আইন করার দাবি জানিয়ে আসছেন।
শিশুরা সাধারণত বাবা-মায়ের কোলে বসে ভ্রমণ করে। এ ছাড়া একটু বড় শিশুরা অভিভাবকদের পাশের সিটে বসে। প্রাইভেট যানবাহনে বড়দের জন্য সিটবেল্টের ব্যবস্থা থাকলেও শিশুদের উপযোগী সিটবেল্ট নাই। যখন কোনো দুর্ঘটনা ঘটে তখন বাবা-মায়ের কোল থেকে ছিটকে পড়ে যায় শিশুরা। শিশু আসন থাকলে দুর্ঘটনাকবলিত হওয়ার পর শিশুদের সুরক্ষা দিবে।
শিশু আসন শিশুদের বয়স, উচ্চতা ও আকারের ওপর তৈরি হয়। এই আসনগুলো শিশুবান্ধব আসন, স্পেশাল সিট, সুরক্ষিত আসন, শিশু আসন, বুস্টার সিট, শিশু সুরক্ষা আসনসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত। শূন্য থেকে শুরু করে ১৪ বছর বয়সীদের জন্য এই আসন পাওয়া যায়।
তিন ধরনের শিশু আসন বাজারে পাওয়া যায়। তবে এখন একটি আসনেই সব বয়সী শিশুদের বসার ব্যবস্থা রয়েছে। এটি এমন একটা আসন, যা বিশেষভাবে গাড়ির সংঘর্ষের সময় শিশুদের আঘাত বা মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। উচ্চ গতির যুগে, চালকদের বেপরোয়া আচরণে ভ্রমণের সময় শিশুদের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই শিশু সিট ভ্রমণের সময় একটি শিশুকে শুধু নিরাপত্তাই দিবে না, তার শরীর ও স্বাস্থ্যর প্রতি মানিয়ে তার ভ্রমণকে আরও আনন্দময় ও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে সহযোগিতা করবে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়তই মৃত্যু হচ্ছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২২ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৭ হাজার ৭১৩ জন। এরমধ্যে ৩ মাস থেকে ১৭ বছর বয়সীদের সংখ্যা ১ হাজার ১৪৩ জন। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে তিন জনের বেশি শিশু সড়কে প্রাণ হারিয়েছে। ২০২১ সালে প্রাণ হারিয়েছে ৭৩৪ জন, ২০২০ সালে ৬৪৯ ও ২০১৯ সালে ৬১৩ জন। শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় পরের তিন মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু মৃত্যুর হার ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। গত ছয় মাসে সারা দেশে ৪৫৫ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
প্রথম তিন মাসে ২১০ জন শিশু এবং পরের তিন মাসে ২৪৫ জন নিহত হয়েছে। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যমতে গত আগস্ট মাসে দেশে ৪০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৩৭৮ জন। নিহতের মধ্যে ৫১ জন শিশু রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুযায়ী, নিরাপদ আসনের অভাব ১ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। বাংলাদেশের সড়ক ও পরিবহন শিশুবান্ধব নয়। দেশে শিশুদের জন্য উপযোগী যানবাহন নেই। আবার শিশুরা সড়ক ব্যবহারের কোনো নিয়ম-নীতিও জানে না। তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও কোনো সচেতনতা দেখা যায় না। অথচ এই অব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে নীরবে শিশুরা নিহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করছে। গ্লোবাল রোড সেফটি পার্টনারশিপের এক তথ্যানুযায়ী যানবাহনে শিশুদের জন্য নিরাপদ আসন ব্যবহার করলে ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে প্রায় ৭০ শতাংশ এবং বড় শিশুদের ক্ষেত্রে প্রায় ৫৪-৮০ শতাংশ শিশু মৃত্যুর কমানো সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন: গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর ড. শরিফুল আলম বলেন, দেশে যে আইন আছে সেটি সড়ক পরিবহন আইন। এখানে যাত্রী, চালক, পথচারীদের নিরাপত্তা নিয়ে কিছু বলা হয়নি। এমনকি শিশু আসন নিয়েও কিছু উল্লেখ করা হয়নি। তাই একটা নিরাপদ সড়ক আইন করতে হবে। বর্তমান আইনে যাতে শিশু আসন সংযোজন করা হয় সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। সরকারের পলিসি লেভেলে যারা আছেন তাদের সঙ্গে আমরা প্রতিনিয়ত বৈঠক করছি।
গ্লোবাল রোড সেফটি অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড গ্রান্টস প্রোগ্রাম ম্যানেজার তাইফুর রহমান বলেন, যানবাহনে চলাচলের সময় যখন দুর্ঘটনা ঘটে তখন সিটবেল্ট শিশুদের প্রটেক্ট করতে পারে না। কারণ শিশুদের জন্য আলাদা সিটবেল্ট হয় না। অনেক দেশের যানবাহনে শিশু আসন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাংলাদেশেও সেটি আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক করা দরকার। ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কামরান উল বাসেত বলেন, আমাদের দেশের গণপরিবহনে যাত্রীর চাপ বেশি। তাই গণপরিবহনে হয়তো এখনই শিশু সিট সংযোজন করা যাবে না।
প্রাইভেটকারে ছোট শিশুদের জন্য সিটবেল্ট থাকে না। তাই তাদের বয়স অনুযায়ী কিছু স্পেশাল সিট পাওয়া যায়। এসব সিটের সঙ্গে শিশুদের পরিচিত করতে হবে। শিশুরা অনেক সময় সামনের সিটে বসে আবার অনেক সময় বড়দের পাশের সিটে বসে। এগুলোতে অনেক ঝুঁকি থাকে। কারণ বড়দের সিটবেল্ট তাদের কোনো কাজে আসে না।
দূরপাল্লার কোটি কোটি টাকার বাসেও শিশুদের নিরাপদ আসন নাই। তিনি বলেন, আইন হয়ে গেলে আগামীতে যেসব গণপরিবহন আসবে সেগুলোতেও সিটবেল্টের পাশাপাশি শিশুদের নিরাপদ আসনের ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলাদেশ রোড অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) রোড সেফটি উইংয়ের পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব ই রব্বানী বলেন, আমরা আইন ও বিধি অনুসারে ব্যবস্থা নিই। কিন্তু আইনে শিশু আসনকে বাধ্যতামূলক করা হয়নি। আর গাড়ি আমাদের দেশে তৈরি হয় না বিদেশ থেকে আসে। সেজন্য এটা বাস্তবায়নে সময় লাগবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।