আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি স্কুলে মুসলিম শিক্ষার্থীকে চড় মারার ঘটনায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মাঝে ওই স্কুল বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার তদন্ত চলাকালে স্কুলটি বন্ধ রাখা হবে। স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে- এ সংক্রান্ত একটি নোটিশ পাঠিয়েছে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর।
রোববার (২৭ আগস্ট) ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে উত্তর প্রদেশের স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়ার এই খবর দেয়া হয়েছে।
এদিকে বন্ধ থাকার কারণে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের যেন পড়াশোনার ক্ষতি না হয়, সে জন্য তাদের কাছের স্কুলগুলোতে ভর্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই নোটিশে। এ কাজে সহায়তা করবেন শিক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তারা।
গত বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) মুজাফফরনগরের খুব্বাপুর গ্রামের নেহা পাবলিক স্কুলে হোমওয়ার্ক না করায় এক মুসলিম শিশুকে তার সহপাঠীদের দিয়ে থাপ্পড় মারা হয়। স্কুলের অধ্যক্ষ ত্রীপ্তা তিয়াগী সাত বছর বয়সী শিশুটিকে থাপ্পড় মারার জন্য তার সহপাঠীদের নির্দেশ দেন।
এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, ভুক্তভোগী শিশুটি এক পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে আর শিক্ষিকা তৃপ্তি অন্য শিশুদের একে একে উঠে এসে ওই শিশুকে চড় মারতে নির্দেশ দিচ্ছেন।
ভিডিওটিতে শিক্ষিকা তিয়াগীকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি বলে দিয়েছি, সব মুসলিম বাচ্চারা, অন্য কারো এলাকায় যাও।’
এক সহপাঠী ওই শিক্ষার্থীকে চড় মারার পর শিক্ষিকা তিয়াগী বলেন, ‘তুমি এটা কীভাবে মারছ? জোরে মারো।’ এরপর তিনি বলেন, ‘এরপর কে আছ? পরের জন এসে চড় মেরে যাও।’
যখন শিশুটি কান্না করা শুরু করে তখন শিক্ষিকা তিয়াগী বলেন, ‘চড় খেয়ে ওর মুখ লাল হয়েছে গেছে। মুখে আর মেরো না। এবার কোমরে মারো।’
ত্রীপ্তা তিয়াগীর বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তবে এটিকে ‘তুচ্ছ ঘটনা’ দাবি করে তৃপ্তি ত্যাগী বলছেন, সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তিনি এমন নির্দেশ দেননি। ওই মুসলিম শিক্ষার্থী স্কুলে বাড়ির কাজ না করে নিয়ে আসায় তাকে এমন শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিয়াগী বলেন, শিশুর মা-বাবা আমাকে তার ব্যাপারে কঠোর হতে বলেছিলেন। আমি প্রতিবন্ধী, এ কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বলেছিলাম তাকে চড় মারতে, যেন ও তার বাড়ির কাজ করতে শুরু করে।
এ নিয়ে মুসলিম ওই শিশুটির বাবা বলেছেন, আমার ছেলের বয়স সাত বছর। গত ২৪ আগস্ট এ ঘটনা ঘটেছে। ওই শিক্ষকের নির্দেশে অন্য শিক্ষার্থীরা আমার সন্তানকে বারবার মেরেছে। এক-দুই ঘণ্টা ধরে তার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। সে এখন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
এদিকে চড় মারার ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এর মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক দলগুলোর অনেক নেতা। আর ওই শিশুর বাবা বলেছেন, তিনি স্কুলটির বিরুদ্ধে কোনো মামলা করবেন না। তবে ওই স্কুলে তার সন্তানকে আর পাঠাবেন না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।