লাইফস্টাইল ডেস্ক : নারীদের সুখ নিয়ে গবেষণায় অদ্ভূত সব ব্যাপার উঠে আসছে। আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় নারী এখন বেশি স্বাধীন, ঘরের বাইরে গিয়ে চাকরি-বাকরি করার সুযোগও পাচ্ছেন বেশি, তবু তাদের মনে সুখ নেই। গবেষকেরা বলছেন, আগের তুলনায় নারীদের উদ্বেগ, অবসাদ, একাকীত্ব, নিঃসঙ্গতা, রাগ, ক্ষোভ, বিষণ্নতা, নিদ্রাহীনতা, অস্থিরতারসহ নানা মানসিক রোগ বেড়েছে।
তবে কি প্রেমের কবি নজরুলের কথাই ঠিক? তিনি তাঁর বিখ্যাত পূজারিণী কবিতায় লিখেছেন—‘এরা দেবী, এরা লোভী, যত পূজা পায় এরা চায় তত আরো/ইহাদের অতিলোভী মন, একজনে তৃপ্ত নয়, এক পেয়ে সুখী নয়, যাচে বহুজন।’
গবেষণা বলছে, নজরুলের কথা সঠিক নয়। সারা পৃথিবীর নারীরা একই কারণে অসুখী হন না। দেশ ভেদে নারীদের অসুখী হওয়ার ভিন্ন ভিন্ন কারণ রয়েছে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সাম্প্রতিক এক জরিপে অংশগ্রহণকারী বেশিরভাগ মার্কিন নারী বলেছেন, সমাজ তাঁদের সঙ্গে যে আচরণ করে, তাতে তাঁরা অসন্তুষ্ট।
জরিপটির ফলাফল নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম কনভারসেশন। সেখানে বলা হয়েছে, পরিবারের বয়স্ক মানুষ ও শিশুদের যত্ন-আত্তির ভার এই একুশ শতকে এসেও নারীর কাঁধেই রয়েছে। কর্মজীবী নারীদের কর্মস্থল সামলে আবার বাড়িতে ফিরে পরিবারকেও সামলাতে হয়। এ ছাড়া কর্মক্ষেত্রে প্রতি পাঁচজন নারীর মধ্যে তিনজনই ধমক, যৌ’ন হয়রানি ও নানা ধরণের অপব্যবহারের শিকার হচ্ছেন।
এসব বাধা সত্ত্বেও সমাজে স্থিতিশীলতা রক্ষায় নারীরা অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন। ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক রক্ষায় নারীরা পুরুষদের চেয়ে এগিয়ে আছেন। তারপরেও নারীরা কেন সুখী নয়, তা সত্যিই ভাবনার বিষয়। গবেষণার ফলাফল বলছে, নারীদের প্রতিনিয়ত সামাজিক বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হয়। তাদের অসুখী হওয়ার পেছনে এটি একটি বড় কারণ। এ ছাড়া নারীরা তাঁদের জীবনের উদ্দেশ্য নিয়েও সন্দিহান। কারও কারও জীবনের উদ্দেশ্য সুস্থ থাকা ও দীর্ঘায়ু লাভ করা। কারও আবার স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকাই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য।
নারীদের জন্মই হয়েছে যেন অন্যদের সুখী রাখতে। সমাজের নিয়মগুলো নারীদের ‘অন্যকে সুখী রাখতে’ উৎসাহিত করে। ফলে অন্যদের সুখী রাখতে গিয়ে নিজের সুখ বিসর্জন দিতে হয় নারীদের। তারপরও আধুনিক নারীরা নানাভাবে নিজেকে সুখী রাখার চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে চারটি বিজ্ঞানভিত্তিক উপায় রয়েছে।
থেরাপি গ্রহণ
নারীদের শুধু নিজের জন্য একান্ত একটি জায়গা থাকা প্রয়োজন, যেখানে তারা নিজের আবেগ প্রকাশ করতে পারবেন। মানসিক সুস্থতার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া শিল্প-সংস্কৃতির সংস্পর্শে থাকা, নারীদের বিভিন্ন সংগঠন ও গ্রুপে যোগ দিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা থেরাপির মতো কাজ করে। এতে নারীদের হীনমন্যতা ও লজ্জার অনুভূতি দূর হয়।
প্রকৃতির সঙ্গে যোগাযোগ
নারীদের উচিত ঘরের বাইরে প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রায়ই সময় কাটানো। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রকৃতির সংস্পর্শে এলে নারীদের ট্রমা দূর হয়। তারা সুস্থতা অনুভব করেন। তাই প্রতি সপ্তাহেই কিছুটা সময় ঘরেরর বাইরে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটানো উচিত। হতে পারে সেটি সমুদ্র সৈকতে হাঁটা, নিবিড় অরণ্যে যাওয়া অথবা পার্কে বসে বই পড়া।
ব্যায়াম করুন
নিয়মিত ব্যায়াম মানুষকে আত্মীক ও শারীরিকভাবে শান্ত রাখে। লাফানো, দৌড়ানো ইত্যাদি সাধারণ ব্যায়ামের মাধ্যমেও নারীদের হাড়ের উন্নতি হয় এবং মেনোপজজনিত সমস্যাগুলো দূর হয়।
অ্যালকোহল পান কমিয়ে দিন
অ্যালকোহল পান নারীদের হৃদরোগ ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ছাড়া মদ্যপ নারী প্রায়ই সহিংসতার শিকার হন। পুরুষদের তুলনায় নারীরা দ্রুত নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এর ফলে অন্যদের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার সুযোগ থাকে নারীদের। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারীরা অ্যালকোহল পান করেন না, তারা তুলনামূলক সুখী ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।