লাইফস্টাইল ডেস্ক : স্বাভাবিকভাবেই রাতে মানুষ ঘুমাতে যায়। তবে ঘুমের জন্য বিছানায় গিয়েও জেগে মোবাইল ফোন ঘাটাঘাটি করার কাহিনি প্রায় সবার জীবনেই বহমান।
এই অকারণে জেগে থাকাকে বলা হচ্ছে ‘রিভেঞ্জ বেডটাইম প্রোক্র্যাসটিনেইশন’, মানে ঘুমের জন্য কালক্ষেপণ করা।
“ঘুম পাওয়ার ক্ষেত্রে কালক্ষেপণ করার মানেই হল, ‘রিভেঞ্জ বেডটাইম প্রোক্র্যাসটিনেইশন”- রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এভাবেই ব্যাখ্যা করেন যুক্তরাষ্ট্রের মনোবিজ্ঞানি ও ঘুম বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স দিমিত্রিউ।
তবে এর আরও মানে রয়েছে। নর্থ ক্যারোলিনা’তে অবস্থিত ‘ডিউক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের ‘বিহেইভিয়রাল স্লিপ মেডিসিন’ বিশেষজ্ঞ জেড উ’র মতে, ঘুমাতে গিয়ে ‘নিজস্ব’ কিছু সময় কাটানোর জন্য জেগে থাকাকে ‘রিভেঞ্জ বেডটাইম প্রোক্র্যাসটিনেইশন’ বলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “যদিও আপনি জানেন আগামীকাল সারাদিনের কাজের জন্য রাতে ঘুমের প্রয়োজন, তারপরও জেগে আছেন।”
ডা. দিমিত্রিউ’র ভাষায়, “অনেক সময় ক্ষোভের অনুভূতি বা পদ্ধতির ওপর বিরক্ত হয়ে ঘুম আর অবসর কাটানোর মাঝামাঝি পর্যায় বেছে নেয় মানুষ।”
এরকম স্বভাবের মধ্যে দেখা যায়- ঘুমের সময় অমনোযোগের সাথে টিভি দেখা বা স্মার্টফোন ‘স্ক্রল’ করা।
২০১৪ সালে নেদারল্যান্ড’য়ের ‘ইউট্র্যাক্ট ইউনিভার্সিটি’র আচরণগত বিশেষজ্ঞ ফ্লোর কোর্স ও তার দল একটি গবেষণায় এই ‘টার্ম’ ব্যবহার করেন। অনেকে মনে করেন এর আসল উৎপত্তি হয়েছে চায়নাতে, বিশেষ করে বেইজিংয়ের তরুণ সমাজের মধ্য থেকে যারা ক্লান্তিকর কর্মঘণ্টার মাঝে খুবই কম ফাঁকা সময় পেত।
২০২০ সালে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক সাংবাদিক ডাফনি কে. লি এই ধারণাকে পুঁজি করে টুইট’য়ে লেখেন, “যারা দিনের সময়টা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না, তারা রাতের সময়ে নিজেদের স্বাধীনতা উপভোগ করতে গিয়ে এই ধরনের ঘটানা ঘটায়।”
যে কারণে হয়
পরদিন ক্লান্ত লাগবে জেনেও মনস্তাত্ত্বিক ও স্বভাবগত-ভাবে রাত জাগার এই কারণ হল- দিনের বেলায় নিজের জন্য বেশি সময় না পাওয়া।
ডা. উ ব্যাখ্যা করেন, “যখন কোনো অবসর থাকে না বা অবসর সময়টা এমন কোনো কাজে পূর্ণ থাকে যা আমাদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, সৃজনশীল এমনকি আত্মিক প্রয়োজন পূর্ণ করে না, তখন আমরা ক্লান্ত, বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হই।”
এই অনুভূতি থেকে পরিত্রাণ পেতে মনোযোগ সরাতে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্যান্য বিষয় বেছে নেই। এরমধ্যে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন- বই পড়া বা খাবার তৈরি করার বিষয়গুলোও আছে।
আবার কিছু নেতিবাচক চিন্তাধারা থেকেও ‘রিভেঞ্জ বেডটাইম প্রোক্র্যাসটিনেইশন’ বিষয়টা চলে আসে। যেমন- “বেশি ঘুমালেও আগামীকালের পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে না।
ডা. উ বলেন, “এরমানে হল রাতের ভালো ঘুমটা ‘ছাড় দিলাম’। এছাড়া পরদিন যদি মনে হয়- অনেক কাজ আর সেটা সামলানো ঝক্কিকর হবে, তখন মনে হতে থাকে ওই সময়টা যত দেরিতে আসে ততই ভালো। যে কারণে এক ধরনের এড়ানো-মূলক আচরণ থেকে রাত জাগার ইচ্ছে হয়।”
‘রিভেঞ্জ বেডটাইম প্রোক্র্যাসটিনেইশন’ থামানোর উপায়
বিষয় হচ্ছে, চক্রাকারে এই সমস্যায় যে আবদ্ধ থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। পুরোটাই নির্ভর করবে দিনটা কেমন গেল, আর রাতে শোয়ার আগে কী প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
প্রথমত রাত ১০টার মধ্যে ‘টেকনোলাজি’ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন ডা. উ। আর এই প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে সন্ধ্যা থেকেই, যাতে ঘুমের সময় এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে শরীর তৈরি হয়ে যায়। মোবাইল ফোন ব্যবহারের পরিবর্তে বই পড়া হতে পারে স্বাস্থ্যকর বিকল্প।
অনুভব করতে হবে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা। দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ থাকতে ও পরদিন ভালো বোধের জন্য ঘুম জরুরি। এই বিষয়টা আত্মস্থ করতে হবে।
ঘুমের সময় স্থির রাখার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যাওয়া এবং ওঠায় নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।
মনে রাখতে হবে দিনের কর্মকাণ্ড রাতের ঘুমের প্রক্রিয়াতে প্রভাব ফেলে। তারমানে এই না যে, নিজের যত্ন নিতে গিয়ে পয়সা খরচ করে ‘সুগন্ধি মোমবাতি’ কিনে ঘুমানোর আগে জ্বালানো লাগবে। বরং দিনে মন ভরিয়ে দেয় এমন কিছু কাজের সাথে যুক্ত হতে হবে। সেটা হতে পারে বন্ধু বা আত্মিয়দের সাথে দেখা সাক্ষাত। কোনো নাচের ক্লাসে প্রশিক্ষণ বা শরীরচর্চা কেন্দ্রে সময় কাটানো, খেলা বা গান-বাজনায় মেতে থাকা ইত্যাদি।
ডা. দিমিত্রিউ বলেন, “সার্বিকভাবে মানসিক উন্নতির জন্য ঘুমের প্রয়োজন। অবশ্যই ‘নেটফ্লিক্স’য়ে পছন্দের সিরিজ দেখতে ভালো লাগবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে- উন্নত মেজাজ, মানসিক ক্রিয়ার উন্নতি এবং উৎকণ্ঠা কমাতে ভালো ঘুমের কোনো বিকল্প নেই।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।