মাওলানা নোমান বিল্লাহ : আমরা যা করি তা মন দ্বারা পরিচালিত হয়। আল্লাহ তাআলা এই মনকে কোরআনে নফস বলেছেন। মানুষের মন যেমন মানুষ দ্বারা প্রভাবিত হয় তেমনই শয়তান দ্বারাও প্রভাবিত হয়। আবার মানুষের মনে জন্মগত ও বংশগত কারণে কিছু দোষ-গুণ থাকে যা দ্বারা মানুষের কাজ সম্পাদিত হয়।
কিছু মানুষ আছেন যারা ছোটকাল থেকেই বিনয়ী থাকেন। কেউ কেউ আবার অহংকারী থাকেন। এমন হওয়াটা স্বাভাবিক। তবে অস্বাভাবিক হলো এসব দোষ নিজের থেকে দূর না করা। কোরআন ও হাদিসে এমন ১০টি মনের রোগের কথা বলা হয়েছে যা থেকে একজন মুমিনের বেঁচে থাকতে হয়।
এক. লোভ। লোভ বলা হয় যখন কেউ অন্যায়ভাবে কোনোকিছু অর্জন করতে চায়। অধিক চাওয়া মন্দ কিছু নয় কিন্তু তা হতে হবে নিজের সাধ্যানুযায়ী এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে।
দুই. দীর্ঘ আশা। আরবিতে বলা হয় আমাল। একটি বাড়ির মালিক হয়েছে, চলবে না, আরেকটি বাড়ির মালিক হতে হবে। এভাবে আশা করা সাধারণভাবে রোগ নয়। তবে কেউ যখন এই আশা পূরণ করতে গিয়ে ইবাদত বন্দেগি ও আত্মীয়স্বজনদের হক নষ্ট করে তাহলে নিঃসন্দেহে তা মনের রোগ।
তিন. রাগ। যে রাগে সম্পর্ক নষ্ট হয়, অযথা কেউ কষ্ট পায় এবং নিজের মানসিক অবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ার কারণে সময় ও অর্থ নষ্ট হয় সে রাগ কখনো ভালো নয়। এই রাগ থেকে সর্বদা বেঁচে থাকতে হয়।
এক সাহাবি হজরত রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আল্লাহর রাসুুল, আমাকে কিছু উপদেশ দিন। রসলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, রাগ করবে না। সে আবারও বলল, আল্লাহর রসুল, আমাকে আরেকটি নসিহত করুন। রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবারও বললেন, রাগ পরিত্যাগ করো। সাহাবি তৃতীয়বার অনুরোধ করার পর রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই জবাব দিলেন। তো যতবারই সাহাবি নসিহতের কথা বলেছেন, রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই কথা বলেছেন, রাগ ছাড়, রাগ ছাড়।
চার. মিথ্যা বলা। মিথ্যা বলা কখনো উচিত নয়। কেননা মিথ্যা জাহান্নামের পথ দেখায় বলে হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে।
পাঁচ. গিবত। এটা তো এখন খুব স্বাভাবিক বিষয়। পবিত্র কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআালা গিবত প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘তোমরা কি মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে?’ গিবত হলো মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার মতো। গিবতকে স্বাভাবিক আলাপচারিতা মনে না করা। কোনো অবস্থাতেই কেউ যেন আমার সামনে গিবত করতে না পারে- প্রত্যেক মুসলমানের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার।
ছয়. কার্পণ্য, কৃপণতা। হাদিস বলা হয়েছে, কৃপণ জান্নাতে যেতে পারবে না। বড় বড় দানখয়রাত করার দরকার নেই। ছোট ছোট দানখয়রাত করা যেতে পারে। তবে যেন রিয়া (অহংকার) না আসে।
সাত. হিংসা। হিংসা বলে, কারও মাঝে কোনো গুণ দেখে এ কামনা করা যে, এটা নষ্ট হয়ে যাক। তবে, কারো কোনো গুণ দেখে এমন আশা করা, তার মধ্যে যে গুণ আছে থাকুক, তবে আল্লাহ আমাকেও তা দান করো। এটা হিংসা নয়, এটাকে বলা হয় ঈর্ষা। ঈর্ষা জায়েজ, হিংসা হারাম। হাদিস শরিফে আছে, হিংসুক জান্নাতে যাবে না।
আট. রিয়া। অর্থ লোক দেখানো। মানুষে দেখুক। মানুষের সামনে নামাজ পড়ার সময় যদি নিয়ত করি যে, মানুষে দেখুক তাহলে এটা হবে রিয়া। এর প্রতিকার হলো, যে কাজে রিয়া আসে তা মানুষের সামনে বেশি বেশি করা তাহলে দেখা যাবে, কাজটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে। আর অভ্যাস হয়ে গেলে তখন আর রিয়া থাকবে না। কাজটা থাকবে, কিন্তু রিয়া থাকবে না।
নয়. অহংকার। নিজেকে বড় মনে করা। এর প্রতিকার হলো, নিজেকে সব সময় ছোট মনে করা। অহংকার একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য নির্ধারিত। কোনো বান্দার জন্য এটা শোভন নয়।
দশ. কীনা। কীনা হিংসার কাছাকাছি একটি বিষয়। কিনা হলো, মনে মনে জ্বলতে থাকা। কারো উন্নতি-সমৃদ্ধি দেখে এমনটা ভাবা যে, এ গুণটা তাকে কেন দেওয়া হলো? সে কেন এ জিনিসের মালিক হলো?
বর্ণিত রোগগুলোকে আলেমরা রুহানি বা আধ্যাত্মিক রোগ বলে অভিহিত করেছেন। আলেমদের অভিমত হলো, এই ১০টা রোগের চিকিৎসা করলে আল্লাহতায়ালা অন্যান্য সব রোগ থেকে মুক্তি দেবেন- ইনশাআল্লাহ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।