মাওলানা মুহাম্মদ আনসারুল্লাহ হাসান : পবিত্র কোরআনের সুরা আনআমের তিনটি আয়াতে আল্লাহ তাআলা গুরুত্বপূর্ণ ১০টি বিষয়ের উল্লেখ করে তা পালন করার আদেশ করেছেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘(হে নবী তাদের) বলো, এসো, তোমাদের রব তোমাদের প্রতি যা কিছু হারাম করেছেন, আমি তা তোমাদের পড়ে শোনাই। তা এই যে তোমরা তার সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো, দারিদ্র্যের কারণে তোমরা নিজ সন্তানদের হত্যা কোরো না। আমি তোমাদের রিজিক দেব এবং তাদেরও, আর তোমরা প্রকাশ্য হোক বা গোপন কোনো রকম অশ্লীল কাজের কাছে যেয়ো না।
আর আল্লাহ যে প্রাণকে মর্যাদা দান করেছেন তাকে যথার্থ কারণ ছাড়া হত্যা কোরো না। হে মানুষ! এই হচ্ছে সেসব বিষয়, যার প্রতি আল্লাহ গুরুত্বের সঙ্গে আদেশ করেছেন, যাতে তোমরা উপলব্ধি করো। এতিম পরিপক্ব বয়সে না পৌঁছা পর্যন্ত তার সম্পদের কাছেও যেয়ো না, তবে এমন পন্থায় (যাবে তার পক্ষে) যা উত্তম হয় এবং পরিমাপ ও ওজন পরিপূর্ণ করবে। আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কষ্ট দেন না।
এবং যখন কোনো কথা বলবে, তখন ন্যায্য বলবে, যদিও নিকটাত্মীয়ের বিষয়েও হয়। আর আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবে। হে মানুষ! আল্লাহ এসব বিষয়ে তোমাদের গুরুত্বের সঙ্গে আদেশ করেছেন, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো। (হে নবী! তাদের) আরো বলো, এটা আমার সরল-সঠিক পথ।
সুতরাং এর অনুসরণ করো। অন্য কোনো পথের অনুসরণ কোরো না। অন্যথায় তোমাদের আল্লাহর পথ বিচ্ছিন্ন করে দেবে। হে মানুষ! এসব বিষয়ে আল্লাহ তোমাদের গুরুত্বের সঙ্গে আদেশ করেছেন, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। (সুরা : আনআম, আয়াত : ১৫১-১৫৩)
কোরআনের ভাষায় এগুলোকে ‘অসিয়ত’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যা সাধারণ নসিহত বা আদেশের চেয়েও তাৎপর্য বহন করে।
যে কারণে কোরআনের অনুবাদকারীরা ‘গুরুত্বের সঙ্গে আদেশ’ রূপে অনুবাদ করেছেন। তিনটি আয়াতের প্রত্যেকটির শেষে আল্লাহ তাআলা ‘অসিয়ত’ শব্দটি উল্লেখ করেছেন এভাবে—‘এসব বিষয়ে আল্লাহ তোমাদেরকে গুরুত্বের সঙ্গে আদেশ করেছেন।’ অত্যন্ত গুরুত্ব ও তাগিদের সঙ্গে গ্রহণ করার জন্য এই প্রজ্ঞাপূর্ণ বর্ণনাভঙ্গিতে বিষয়গুলোর উল্লেখ করেছেন। উক্ত আয়াতগুলোতে মূলত ১০টি হারাম বিষয়ের উল্লেখই মূল উদ্দেশ্য। কারণ আয়াতের শুরুতেই বলা হয়েছে, ‘এসো, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের প্রতি যা কিছু হারাম করেছেন, আমি তা তোমাদেরকে পড়ে শোনাই।’ কিন্তু কোরআনুল কারিমের প্রজ্ঞাপূর্ণ বর্ণনাধারায় এর কিছু বিষয়ে নিষেধাজ্ঞাবাচক শব্দ এবং অপর কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে আদেশবাচক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যেখানে আদেশবাচক শব্দের উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে তার বিপরীত করা হারাম।
মোটকথা, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ১০টি বিষয়ে বিশেষ তাগিদ ও গুরুত্বের সঙ্গে যে হুকুম দেওয়া হয়েছে, সেই চিরন্তন হুকুম বা অসিয়তগুলোই উক্ত তিন আয়াতের সারমর্ম। এই ১০টি অসিয়ত বা চিরন্তন নিষিদ্ধ বিষয়গুলো পালন করার মধ্যেই নিহিত আছে সব মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি।
প্রথমে ১০টি নিষিদ্ধ বিষয় সম্পর্কে জেনে নিই। ১. আল্লাহ তাআলার ইবাদত ও আনুগত্যে কাউকে অংশীদার বানানো। ২. পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার না করা। ৩. দারিদ্র্যের ভয়ে সন্তান হত্যা করা। ৪. প্রকাশ্যে বা গোপনে অশ্লীল কাজ করা ৫. কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা। ৬. এতিমের ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করা। ৭. ওজন ও মাপে কম দেওয়া। ৮. সাক্ষ্য, বিচার ও মীমাংসা বা কথাবার্তায় অবিচার করা। ৯. আল্লাহ তাআলার সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার পূরণ না করা। ১০. আল্লাহ তাআলার সহজ-সরল পথ ছেড়ে অন্য পথে যাওয়া।
তাফসিরে ইবনে কাসিরে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, যে ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর মোহরাঙ্কিত অসিয়তনামা দেখতে চায় সে যেন এ আয়াতগুলো পাঠ করে। তাফসিরে বাহরে মুহিতে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, সুরা আলে-ইমরানের মুহকাম আয়াতের বর্ণনায় এই আয়াতগুলোকেই বোঝানো হয়েছে। আদম (আ.) থেকে শুরু করে শেষ নবী (সা.) পর্যন্ত সব পয়গম্বরের শরিয়তেই এ আয়াতগুলোর মর্ম সম্পর্কে একমত। কোনো ধর্ম ও শরিয়তে এগুলোর কোনোটিই মানসুখ বা রহিত হয়নি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই অসিয়তগুলোর ওপর পরিপূর্ণরূপে আমল করার তাওফিক দান করুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।