ধর্ম ডেস্ক : আল্লাহ তাআলার অশেষ নেয়ামত বৃষ্টি। আল্লাহ পানির মাধ্যমে সব বস্তুকে সজীব রাখেন। পানি ছাড়া জীবন সজীব জীবন্ত থাকতে পারে না। তৃষিত মন শীতল হয় না। কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা বৃষ্টি সম্পর্কে উদ্ধৃত করেছেন। বৃষ্টি হলে মানুষের মন প্রফুল্ল হয়। আল্লাহর রহমতে প্রকৃতি পায় স্বস্তি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বৃষ্টির সময় কিছু আমল করতেন। এই আমলগুলো হলো-
বৃষ্টির সময় দোয়া
কখনো বৃষ্টি আল্লাহর রহমত, আবার কখনো গজব। রাসুল (সা.) বৃষ্টির সময় আল্লাহর রহমতের জন্য দোয়া করতেন। তিনি দোয়া করতেন- ‘আল্লাহুম্মা সায়্যিবান নাফিআহ’। অর্থ- হে আল্লাহ! তুমি এ বৃষ্টিকে প্রবহমান ও উপকারী করে দাও। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১৫২৩)
বৃষ্টির সময় দোয়া কবুল হয়
তা ছাড়া দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ সময়গুলোর মধ্যে বৃষ্টির সময়ও একটি। সুতরাং বৃষ্টি শুরু হলে নিজেদের জানা দোয়াগুলো পেশ করতে আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে রোনাজারি করা বা দোয়া করা জরুরি। প্রিয়নবী রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দুই সময়ের দোয়া কখনও ফিরিয়ে দেয়া হয় না। এক. আজানের পর করা দোয়া। আর দুই. বৃষ্টির সময় করা দোয়া।’ (আল-হাকিম)
ঝোড়ো বাতাস বইতে দেখলে দোয়া
দমকা হওয়া বইতে দেখলে রাসূল (সা.) আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যেতেন এবং উদ্বিগ্ন হয়ে চলাফেরা করতেন। যখন বৃষ্টি হতো তখন তিনি খুশি হতেন। হযরত আয়িশা (রা:) থেকে বর্ণিত, আমি এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমার আশঙ্কা হয়, আমার উম্মাতের ওপর কোনো গজব আসে কি না। বৃষ্টি দেখলেই তিনি বলতেন, রাহমাতান অর্থাৎ এটি আল্লাহর রহমত। (হাদিস : ১৯৬৯)
অন্য হাদিসে রয়েছে, আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) আকাশে মেঘ দেখলে নফল ইবাদত ছেড়ে দিতেন। এমনকি সালাতে উপবিষ্ট অবস্থায়ও। অতঃপর তিনি দোয়া করতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা ওয়া খাইরি ওয়া খাইরি মা উরসিলাত বিহি, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি’। অর্থ- হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে বৃষ্টির উপকারী দিক কামনা করছি। আর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইছি। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৯৯)
অতিরিক্ত বৃষ্টিতে দোয়া করা
অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দোয়া করতে হবে। রাসুল (সা.) একবার অতিরিক্ত বৃষ্টিতে দোয়া করেছিলেন- ‘আল্লাহুম্মা হাওয়াইলাইনা ওয়া আলাইনা’। অর্থ- হে আল্লাহ! আমাদের এখানে নয়, আশেপাশে বৃষ্টি বর্ষণ করো। (সুনানে নাসায়ি : হাদিস : ১৫২৭)
বৃষ্টিতে স্বল্পভেজা
আল্লাহ তাআলা কোরআনে বৃষ্টির অনেক উপকারিতার কথা তুলে ধরেছেন। বৃষ্টি মানুষের জন্য রহমতস্বরূপ। আল্লাহর রহমত ও বরকত পেতে কিছু সময় বৃষ্টিতে ভেজার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে থাকাকালে একবার বৃষ্টি পড়তে শুরু করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তার পরনের কাপড়ের কিছু অংশ তুলে ধরলেন, যাতে করে তার শরীরে কিছুটা বৃষ্টির পানি পড়ে। এ রকম করার কারণ জানতে চাইলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এটা (বৃষ্টি) এই মাত্র আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে।’ (মুসলিম)
বৃষ্টি শেষে দোয়া করা
বৃষ্টি শেষ হয়ে এলে রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কিরামকে বিশেষ একটি দোয়া পড়ার তাগিদ দিয়েছেন- ‘মুতিরনা বিফাদলিল্লাহি ওয়া রাহমাতিহ’। অর্থ- আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : হাদিস : ১০৩৮)
উল্লেখ্য, মক্কার কাফিররা মনে করতো আকাশের নক্ষত্রগুলো বৃষ্টি দেয়। অথচ এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। রাসুল (সা.) বৃষ্টির শেষে দোয়াটি পড়ে এটিই প্রমাণ করেছেন যে আল্লাহ তাআলাই আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।