জুমবাংলা ডেস্ক : পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জাতীয় অর্থনীতির সিংহভাগই সমুদ্র নির্ভর। যুক্তরাষ্ট্রে ব্লু ইকোনমি অবদান ৪০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। যা তাদের জিডিপির ২ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়া সমুদ্র সম্পদ থেকে প্রায় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে। চীন ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামুদ্রিক শিল্প গড়ে তুলেছে। সুনীল অর্থনীতির চারটি ক্ষেত্র যেমন-তেল ও গ্যাস উত্তোলন, মৎস্য আহরণ, বন্দর সম্প্রসারণ এবং পর্যটন খাতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করলে বছরে বাংলাদেশের পক্ষে ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব বলে বিশ্ব ব্যাংকের এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে।
বুধবার রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘বাংলাদেশের মেরিটাইম শিক্ষাব্যবস্থা ও সুনীল অর্থনীতি’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ সব কথা বলেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব দেলোয়ারা বেগম। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান ড. এ কে এম মতিউর রহমান।
সেমিনারে নৌ-প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে মেরিটাইম শিক্ষা ও সুনীল অর্থনীতির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। সমুদ্রে বাংলাদেশের অধিকার, আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা, সমুদ্র আইন, সমুদ্রে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চল, রাজনৈতিক সমুদ্রসীমা, সমুদ্রের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা লাভের জন্য মেরিটাইম শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ বর্তমানে উপকূল থেকে মাত্র ৩৫-৪০ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে মৎস্য আহরণ করে থাকে। মৎস্য সংগ্রহে আমাদের সমুদ্র এলাকা ২০০ নটিক্যাল মাইলব্যাপী দেশের মৎস্যশিল্পকে নিশ্চিতভাবে ব্যাপক বিকশিত করতে পারে। বঙ্গোপসাগরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, চিংড়ি, বিভিন্ন প্রজাতির কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক এবং বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ও জৈব গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ রয়েছে। মৎস্যসম্পদ ছাড়াও সামুদ্রিক প্রাণী, সামুদ্রিক আগাছা, লতা-গুল্মতেও ভরপুর বঙ্গোপসাগর।’
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার পরিচালনার সময়ে মিয়ানমার এবং ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা জয় করেন। এর ফলে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল ও চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৪৫ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহিসোপানের তলদেশে সবধরনের প্রাণিজ-অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রে বিরোধপূর্ণ ১৭টি ব্লকের ১২টি পেয়েছে বাংলাদেশ এবং ভারতের কাছ থেকে দাবিকৃত ১০টি ব্লকের সবগুলোই পেয়েছে বাংলাদেশ।
এসব ব্লক থেকে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সুনীল অর্থনীতির চারটি ক্ষেত্র যেমন-তেল ও গ্যাস উত্তোলন, মৎস্য আহরণ, বন্দর সম্প্রসারণ এবং পর্যটন খাতে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করলে বছরে বাংলাদেশের পক্ষে ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব।’
মূল প্রবন্ধে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান ড. এ কে এম মতিউর রহমান বলেন, সুনীল অর্থনীতির ধারণা সমুদ্র ও মহাসাগরকে নতুন করে উদ্ভাবন এবং উন্নয়নের জন্য প্রচুর সম্ভাবনাসহ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করবে। সুনীল অর্থনীতির ধারণা সমুদ্র ও মহাসাগরকে নতুন করে উদ্ভাবন এবং উন্নয়নের জন্য প্রচুর সম্ভাবনাসহ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রধান চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করবে।
বাংলাদেশের প্রায় ৭০০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় এলাকাসহ প্রায় ১,১৮৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের সামুদ্রিক এলাকা রয়েছে। তাই বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সুনীল অর্থনীতিকে কাজে লাগানোর বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। এই খাত থেকে সুবিধা পাওয়ার জন্য দক্ষ মেরিটাইম মানবসম্পদ উন্নয়নের যথেষ্ট প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
দক্ষ মেরিটাইম মানবসম্পদকে সুনীল অর্থনীতির মেরুদ- হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যা জাতীয় অর্থনীতি প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। সেই হিসেবে বাংলাদেশের যথাযথ মেরিটাইম শিক্ষার মাধ্যমে এই সেক্টরে মানবসম্পদ উন্নয়নে মেরিটাইম শিক্ষার ওপর আরও জোর দিতে হবে। জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জগুলোকে প্রশমিত করার জন্য মেরিটাইম গবেষণা ও শিক্ষার ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশের কাক্সিক্ষত জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য মেরিটাইম শিক্ষার সম্ভাবনা উন্মোচনে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বন্দর, অভ্যন্তরীণ নৌপথ ও জাহাজ চলাচল মন্ত্রণালয় (প্রস্তাবিত) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
ড. এ কে এম মতিউর রহমান বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের জাতীয় অর্থনীতির সিংহভাগই সমুদ্র নির্ভর। যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭৪ সালে তাদের মোট দেশজ উৎপাদনে সুনীল অর্থনীতির অবদান পরিমাপের চেষ্টা চালায়। যুক্তরাষ্ট্রে ব্লু ইকোনমি অবদান ৪০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার। যা তাদের জিডিপির ২ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়া সমুদ্র সম্পদ থেকে প্রায় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে। চীন ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের সামুদ্রিক শিল্প গড়ে তুলেছে।
২০৩৫ সাল নাগাদ চীনের জিডিপিতে সামুদ্রিক খাতের অবদান হবে ১৫ শতাংশ। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর জিডিপিতে সুনীল অর্থনীতির অবদান যথাক্রমে ৪ শতাংশ, ২৮ শতাংশ, ২৩ শতাংশ, ৩০ শতাংশ ও ৭ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুনীল অর্থনীতির অবদান ৬ দশকি ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা জিডিপির প্রায় ৩ শতাংশ।
আয়ের সর্বোচ্চ অংশ আসে পর্যটন ও বিনিয়োগ খাত থেকে যার পরিমাণ ২৫ শতাংশ। মৎস্য ও যাতায়াত উভয় খাত থেকে ২২ শতাংশ, গ্যাস ও তেল উত্তোলন খাত থেকে ১৯ শতাংশ, বন্দর ও শিপিং খাত থেকে ১০ শতাংশ। গবেষকদের মতে ব্লু ইকোনমির চারটি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করলে বছরে বাংলাদেশের পক্ষে ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব। এ চারটি খাত হলো- (১) তেল ও গ্যাস উত্তোলন (২) মৎস্য আহরণ (৩) বন্দর সম্প্রসারণ ও (৪) পর্যটন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।