সিলেট প্রতিনিধি : সিলেটের জৈন্তাপুরে প্রায় ২০০ বছরের পুরনো জৈন্তা রাজ্যের কিছু স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ নিজপাট ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এখনো দৃশ্যমান। মোঘল সাম্রাজ্যের আমলে বৃহত্তর এই জৈন্তার জনপদ ছিল মোঘল শাসনের বাইরে। সে সময় জৈন্তা ছিল স্বাধীন রাজ্য।
জৈন্তা রাজ্যের শাসনামলের সমাপ্তির পরও এখনো কিছু স্মৃতি বিজড়িত চিহ্ন রয়ে গেছে উপজেলা সদরের আশপাশে। কালের বিবর্তনে অনেক স্থাপনা ধ্বংস কিংবা মানুষের দখলে চলে গেলেও যে কয়টা স্থাপনা বা মেঘালিথ পুরাকীর্তি রয়েছে তাও দীর্ঘ সময় ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল। তার মধ্যে জৈন্তেশ্বরী ইরাদেবী রাজবাড়ীর একটা বিশাল অংশ গত বছর বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের উদ্যোগে মেগালিথ টম্ব বাস্তবায়নে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে এর স্থাপত্যশৈলীকে দৃশ্যমান করা হয়েছে। বর্তমানে ইরাদেবী রাজবাড়ীর বটতলা এলাকায় বিশাল এই অংশটি দর্শনার্থীদের আকর্ষণের এক কেন্দ্রবিন্দু।
এছাড়া প্রাচীন জৈন্তা রাজ্যের কিছু ছোট-বড় স্থাপনা বা ধ্বংসাবশেষ রয়েছে যেগুলো সঠিক পরিচর্যার অভাবে ঝোপঝাড়, জঙ্গল কিংবা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছিল।
এ রকমই একটি প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে জমে থাকা বিশাল ময়লার ভাগাড় যা গত সেপ্টেম্বরে পরিষ্কার করে তৈরি করা হয়েছে ফুলের বাগান। আর এই মহৎ কাজের স্বপ্নদ্রষ্টা হলেন জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া। তার উদ্যোগে জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের বর্তমান দৃশ্যের কারণে তিনি সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছেন। শুধু এই একটি কাজে নয় বরং এবার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা প্রাচীন স্থাপনাগুলোতে সংস্কার কাজে হাত দিয়েছেন তিনি।
এরই অংশ হিসেবে বর্তমানে জৈন্তাপুর ঐতিহাসিক রাজবাড়ী খেলার মাঠের দক্ষিণ প্রান্তে জৈন্তা রাজ্যের আরেকটি স্থাপনাকে নান্দিকতায় রূপ দেয়ার কাজ শেষের পথে।
সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, এ স্থাপনায় একটি প্রাচীন আমলের স্থাপত্যশৈলী চুন সুড়কীতে নির্মিত একটি গোলাকার আকৃতির ঘর। কথিত আছে, ১১০৭ শতকে এই স্থাপনাটি কালীমন্দির হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এক দরজা বিশিষ্ট এই ঘরটির ঠিক পাশেই প্রবেশ ফটকের একটি নিদর্শন এখনো দৃশ্যমান। দীর্ঘদিন ধরে শেওলা, পরগাছা আকড়ে ধরা রাজার আমলের ঘরটি পরিষ্কার করায় সহজে তার ভিতরে প্রবেশ করতে পারছে সবাই। এই ঘরটির স্থাপত্যশৈলী যেমন বাইরে তেমন নান্দনিকতার ছোঁয়া রয়েছে ভিতরের অংশে। এছাড়া ইউএনওর উদ্যোগে এই স্থাপনাটির আশপাশে ঢালাই করে দর্শনার্থীদের চলাচলের ব্যবস্থাসহ ফুলের বাগান তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, প্রাচীন জৈন্তা রাজ্যের স্থাপনাগুলো এখনো যেখানে যে অবস্থায় রয়েছে পর্যায়ক্রমে তার স্থাপত্যশৈলীকে দৃশ্যমান করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এই সব স্থাপনা সংরক্ষণ করে একটা মিনিয়েচার তৈরি করার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি, যাতে সারাদেশ থেকে আগত পর্যটক ও দর্শনার্থীদের কাছে প্রাচীন জৈন্তা রাজ্যের ইতিহাসটা ভালোভাবে বুঝতে ও অনুধাবন করতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।