সাইফুল ইসলাম : মানিকগঞ্জে ‘ইসলাম ধর্ম ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি’র অভিযোগে বাউল শিল্পী আবুল সরকারকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানোর পর বাউল–ভক্ত ও তৌহিদী জনতার পাল্টাপাল্টি অবস্থানকে কেন্দ্র করে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে রোববার সকাল সাড়ে দশটার দিকে বিক্ষিপ্তভাবে জড়ো হওয়া বাউল ভক্তদের ওপর হামলা চালায় তৌহিদী জনতার একটি অংশ। এতে অন্তত তিন বাউল ও ভক্ত আহত হন। আহত হন একজন আলেমও।

হামলার ঘটনায় তৌহিদী জনতার ব্যানারে বিক্ষোভকারীদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবিত সাদীর বিরুদ্ধে, যিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম সুলতানুল আজম খান আপেলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগের পতনের পর তিনি নিজেকে জামায়াতের কর্মী পরিচয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকছেন।
উসকানিমূলক স্লোগানেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে:
ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, বিক্ষোভ মিছিলের শুরুতে সাবিত সাদী উসকানিমূলক স্লোগান দেন। তিনি বলেন, “রশির দাম কয় টাকা, রশি লাগলে রশি নে, আবুলকে ফাঁসি দে; একটা একটা বাউল ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর; বাউল ধর, জেলে ভর।”
অল্প সময়ের মধ্যেই তৌহিদী জনতার কিছু অংশ মানববন্ধনের জন্য জড়ো হতে থাকা বাউল ভক্তদের ওপর হামলা শুরু করে। তবে সাবিত সাদী দাবি করেন, বাউল ও তাদের সমর্থকেরা অস্ত্র নিয়ে তৌহিদী জনতার ওপর আগে হামলা চালায়। তিনি বলেন, “ওরা নাস্তিক কুলাঙ্গার হয়ে আমাদের ধাওয়া দিয়েছে। আমরা খালি হাতে ছিলাম, ওদের হাতে রামদা-চাপাতি ছিল। ওরা আমাদের কয়েকজনকে আহত করেছে।”
জামায়াতের সম্পৃক্ততা অস্বীকার:
সাবিত সাদীর বক্তব্যের বিপরীতে জেলা জামায়াতের আমির হাফেজ কামরুল ইসলাম জানান, এ কর্মসূচি ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের নিজস্ব আয়োজন, জামায়াতের নয়। তিনি আরও বলেন,“সাদী নামের ওই ব্যক্তি জামায়াতের কেউ নন।”
আহতদের ভিন্ন দাবি:
ঘটনার সময় আহত তৌহিদীপন্থী মাওলানা আব্দুল আলীমকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় উদ্ধারকারীরা জানান, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় তিনি পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান বলে ধারণা করেন। তবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি দাবি করেন বাউল সমর্থকেরা তার মাথায় আঘাত করেছে। কোন স্থানে আঘাত পেয়েছেন—এ প্রশ্নে তিনি স্পষ্ট করে দেখাতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, তিনি হামলার উদ্দেশ্যে নয় বরং তার মাদ্রাসার ছাত্ররা উত্তেজিত হয়ে এগিয়ে গেলে তাদের ফিরিয়ে আনতেই সেখানে গিয়েছিলেন।
সিনিয়র আলেমদের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা:
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভ চলাকালে একাধিক সিনিয়র আলেম উপস্থিত জনতাকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। তারা বলেন, “কোনভাবেই হামলা বা অরাজকতা সৃষ্টি করা যাবে না।”
তবে তাদের নির্দেশনা উপেক্ষা করে সাড়ে দশটার দিকে তৌহিদী জনতার একটি অংশ হামলা ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
পুলিশের অবস্থান:
পুলিশ জানায়, বাউল শিল্পী আবুল সরকারের মুক্তি ও শাস্তির দাবিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষ আলাদা আলাদা কর্মসূচির ডাক দেয়। উত্তেজনা এড়াতে তৌহিদী জনতার কর্মসূচির সময় ঠিক করা হয় সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত, আর বাউল–ভক্তদের ১১টার পর। কিন্তু পৃথক সময় নির্ধারণ করা হলেও সংঘর্ষ এড়ানো যায়নি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “ঘটনার পর দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।”
পটভূমি:
গত বৃহস্পতিবার ঘিওরের একটি গানের আসরে ‘ইসলাম ও আল্লাহকে নিয়ে কটূক্তি’র অভিযোগ ওঠে বাউল শিল্পী আবুল সরকারের বিরুদ্ধে। পরে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। সাটুরিয়ার পারতিল্লী এলাকার বাসিন্দা আবুল সরকার ‘ছোট আবুল’ নামে স্থানীয়ভাবে পরিচিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



