তাকী জোবায়ের : ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ করা নিয়ে নানা নাটকিয়তার মধ্যেই আবারও ন্যাশনাল ব্যাংকের বোর্ড ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাড়ে ৪ মাসের মাথায় দ্বিতীয়বারের মতো পুনর্গঠন করা হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় মূলধনের ব্যাংকটি।
রবিবার (৫ মে) প্রথম প্রজন্মের এই ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালক খলিলুর রহমানকে চেয়ারম্যান করে ১০ সদস্যের নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদের মধ্যে ৩ জন স্বতন্ত্র পরিচালক।
আগের পর্ষদের পারভিন হক শিকদারসহ অধিকাংশ পরিচালকই বাদ পড়েছেন। নতুন পরিচালনা পর্ষদের অধিকাংশই চট্টগ্রামের কিংবা চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত। মূলত সিকদার পরিবারের অব্যাহত লুটপাটের হাত থেকে ব্যাংকটিকে রক্ষা করতেই নতুন পর্ষদের হাতে তুলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক- পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এমন তথ্য জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেছেন, ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদকে আরও শক্তিশালী করতে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিকে চেয়ারম্যান করে পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। যাতে ব্যাংকটিতে সুশাসন নিশ্চিত হয়।
রবিবার বিকালে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকে তৌহিদুল আলম খানকে চিঠি পাঠিয়ে পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠনের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি)। বিভাগটির পরিচালক মো. হারুন-অর-রশিদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার্থে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ক্ষমতাবলে ৫ মে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠন করা হয়েছে।
পুনর্গঠিত বোর্ডের পরিচালদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রামের কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খলিলুর রহমান, ফেনীর ব্যবসায়ী ও হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, সেনাবাহিনীর সাবেক চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. শফিকুর রহমান, প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রিয়াজুল করিম এফসিএমএ, রাঙ্গুনিয়ার ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা এরশাদ মাহমুদ, চট্টগ্রামের একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের আইনজীবী আহসানুল করিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম তফাজ্জল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দীন নিজামী।
স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দীন নিজামী, চট্টগ্রামের পেশাজীবী চার্টার্ড একাউন্টেন্ট ড. রত্না দত্ত এফসিএ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা।
গত প্রায় দেড় দশক ধরে ন্যাশনাল ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ছিল সিকদার পরিবারের হাতে। এই পরিবারের নানা অনিয়ম অনাচারে ও স্বেচ্ছাচারিতায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মূলধনী কোম্পানিটি মুখ থুবড়ে পড়ে। ব্যাংকটিকে রক্ষায় ২০২৩ সালের ২১ ডিসেম্বর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদ্যমান বোর্ড ভেঙে দিয়ে পেশাজীবী ও উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করে দেয়। এই পর্ষদের সদস্য ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। তিনি গত বৃহস্পতিবার (২ মে) বোর্ড থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে জুমবাংলা’কে জানিয়েছেন। ওইদিন আরো কয়েকজন পরিচালক পদত্যাগ করেন। এর পরের কার্যদিবসেই নতুন বোর্ড গঠন করে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
উদ্যোক্তা পরিচালক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও পেশাজীবীদের সমন্বয়ে বোর্ড গঠিত হওয়ায় ব্যাংকটিতে সুশাসন ফিরবে বলে মনে করছেন ন্যাশনাল ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। পাশাপাশি ব্যাংক ব্যবসায় অভিজ্ঞদের তত্তাবধানে ব্যাংকটি যাওয়ায় নানা অস্বস্তির মধ্যেও কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে ব্যাংক খাতে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।