জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের মানুষের কাঁধে দিন দিন বাড়ছে ঋণের বোঝা। গত এক বছরে মাথাপিছু ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৭৭৫ টাকা। সেই হিসাবে বর্তমানে দেশের প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজার ২৭ টাকা। অর্থাৎ আজ যে শিশুটি জন্ম নেবে, তার কাঁধেও এ পরিমাণ ঋণের দায় চাপবে। শুধু তাই নয়, আগামী এক বছরে মাথাপিছু ঋণের স্থিতি দাঁড়াবে ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৪৪ টাকা। এ কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধে সর্বোচ্চ ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ ২০ লাখ ৮ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি খাতে ঋণ ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ৯৩৬ কোটি এবং সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত মিলিয়ে ৪ লাখ ২৭ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা। এ ঋণ জিডিপির প্রায় ৩৫ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। সেই হিসাবে প্রতিটি নাগরিকের মাথাপিছু ঋণ ১ লাখ ১৮ হাজার ২৭ টাকা। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ২৫২ টাকা। এর মধ্যেই আগামী অর্থবছরে আরও ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাজেটে ঋণনির্ভরতা কমাতে রাজস্ব আয় বাড়ানোর বিকল্প নেই। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মনে করে, ঘাটতি মেটাতে অর্থায়নের বড় অংশই দেশীয় ঋণ। এর সুদ অত্যন্ত বেশি। এর ফলে বেসরকারি খাতেও সমস্যা সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে বাজেটে ঋণনির্ভরতা কমানোর জন্য রাজস্ব আয় বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। আর রাজস্ব আয় বাড়াতে সংস্কার অতি জরুরি।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, আমরা ঋণের মধ্যে ডুবে যাচ্ছি। বাংলাদেশের কপালে দুঃখ আছে। একটা ঋণ থেকে তৈরি হয় আরেকটা ঋণ। এ থেকে উত্তরণে কর বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে করহার না বাড়িয়ে করজাল বিস্তারের পরামর্শ দেন তিনি।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, খুব দ্রুত বাড়ছে ঋণের বোঝা। এ বিষয়ে সরকার সংযত হতে হবে। নয়তো সুদের বোঝা আরও বাড়বে। এ জন্য রাজস্ব বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
জানা গেছে, বাজেট ঘাটতি অর্থায়ন ও ঋণের স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। সরকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চাকা সচল রাখার পাশাপাশি ঘাটতি অর্থায়নের সম্ভাব্য ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে রাজস্ব ঘাটতি অর্থায়ন করে।
জানা গেছে, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকারের নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি মোট বাজেটের ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। একক খাত হিসেবে নতুন বাজেটে এটিই বৃহত্তম ব্যয়। পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটে সম্পদের ব্যবহার অংশে দেখা যায়, সুদ বরাদ্দেই সবচেয়ে বড় অঙ্ক উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে দেশে মুদ্রার পরিমাণ ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে আমানত ১৬ লাখ ৬২ হাজার ২৩০ কোটি টাকা এবং জনগণের হাতে নগদ টাকা ২ লাখ ৫৭ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। আবার আমানতের মধ্যে মেয়াদি আমানত ১৪ লাখ ৭১ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা এবং তলবি আমানত ১ লাখ ৯০ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা।
এদিকে নতুন অর্থবছরের জন্য বিশাল ঘাটতির বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক ঋণনির্ভরতা অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। বাজেট ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে ধরা হয় ২ লাখ ৩৬ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরে ছিল ২৩ হাজার কোটি টাকা আর সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৬৯০ কোটি টাকা করা হয়। আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৩ হাজার কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮২ হাজার কোটি টাকা। বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা,যা চলতি অর্থবছরে ছিল ১২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা।- আমাদের সময়
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।