রাজীব আহাম্মদ: মিরপুর ১০ নম্বর থেকে গুলিস্তানের দূরত্ব ১১ দশমিক ৯ কিলোমিটার। প্রতি কিলোমিটার ২ টাকা ৪৫ পয়সা হিসাবে এই পথের বাস ভাড়া ছিল ২৯ টাকা ১৬ পয়সা। সরকার নির্ধারণ করেছিল ২৯ টাকা। কিন্তু বাসে আদায় করা হতো ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। ডিজেলের দাম কমার কারণে কিলোমিটারে ৩ পয়সা ভাড়া কমায় এই পথের ভাড়া দাঁড়িয়েছে ২৮ টাকা ৮০ পয়সা। অর্থাৎ কমেছে ৩৬ পয়সা। কিন্তু পয়সার ব্যবহার না থাকায় আগের মতোই ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বাসে।
শুধু মিরপুর-গুলিস্তান নয়; রাজধানীর কোনো রুটেই ডিজেলের দাম কমায় বাস ভাড়া কমেনি এক পয়সাও। কিলোমিটারে ৩ পয়সা বাস ভাড়া কমিয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ গত ১ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ভাড়ার তালিকা হালনাগাদ করেনি সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
সরেজমিনে দেখা যায়, আগের মতোই বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে প্রতিটি বাসে। যাত্রীরা বলছেন, ভাড়া কমানোর নামে তামাশা হয়েছে। আর মালিকরা বলছেন, কিলোমিটারে ৩ পয়সা হিসাবে ৩৩ কিলোমিটার পথে ভাড়া কমেছে এক টাকা। তবে ঢাকা ও আশপাশের অধিকাংশ বাস এত দূরত্বে চলে না। ফলে ভাড়া যা ছিল, তাই আছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, দূরপাল্লার পথে রুটভেদে ১ থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ টাকা ভাড়া কমার কথা। কিন্তু দূরপাল্লার ভাড়ার তালিকা হালনাগাদ করেনি বিআরটিএ। ফলে ভাড়া আগে যা ছিল, তাই রয়েছে দূরপাল্লায়। অর্থাৎ ডিজেলের দাম লিটারে ৩ টাকা কমার সুফল পাচ্ছেন না যাত্রীরা।
২০২১ সালের নভেম্বরে ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। সে সময় দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা করা হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের লোকাল বাসের ভাড়া কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা ১৫ পয়সা করা হয়।
২০২২ সালের আগস্টে এক লাফে ডিজেলের দাম বাড়ে লিটারে ৩৪ টাকা। এতে দূরপাল্লার ভাড়া বাড়ে কিলোমিটারে ২ টাকা ২০ পয়সা। ঢাকা ও চট্টগ্রামে লোকাল বাসের ভাড়া বেড়ে হয় প্রতি কিলোমিটার ২ টাকা ৫০ পয়সা। ওই মাসেই ডিজেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমলে, বাস ভাড়া কিলোমিটারে ৫ পয়সা কমানো হয়। এর পর গত ১ এপ্রিল বাস ভাড়া কমে ৩ পয়সা। অর্থাৎ গত আড়াই বছরে বাস ভাড়া বেড়েছে কিলোমিটারে ৭৮ থেকে ৮০ পয়সা, আর ডিজেলের দাম কমায় দুই দফায় কমেছে ৮ পয়সা।
অভিযোগ রয়েছে, ভাড়া বাড়ার সিদ্ধান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা কার্যকর হলেও কমানোর সিদ্ধান্ত মানেন না বাস মালিকরা। এর আগে তিন দফায় বাস ভাড়া বৃদ্ধি ও হ্রাসের এক দিনের মধ্যেই ভাড়ার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। কিন্তু এবার তা করেনি বিআরটিএ। সংস্থাটির চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ‘শিগগির হালনাগাদ করা হবে।’
তবে পুরোনো তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, দূরপাল্লায় বাস ভাড়া যা কমবে তা উল্লেখ করার মতো কিছু নয়। কারণ, ভাড়া পূর্ণ সংখ্যায় রাখতে বিআরটিএ ৫০ পয়সার বেশি ভাড়াকে পরবর্তী পূর্ণ সংখ্যা ধরে হিসাব করে। আর ৫০ পয়সা কম হলে পূর্ববর্তী পূর্ণ সংখ্যা বিবেচনা করা হয়। স্বল্প দূরত্বের কারণে ঢাকায় চলা লোকাল বাসের ভাড়ায় তেমন হেরফের হবে না।
কেরানীগঞ্জ জেলখানা থেকে বাইপাইল রুটের দূরত্ব ৪৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার। আগে এ পথের ভাড়া ছিল ১১৬ টাকা। নেওয়া হতো ১১০ থেকে ১৩০ টাকা। কিলোমিটারে ৩ পয়সা কমায় ভাড়া হয়েছে ১১৫ টাকা। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর, সাতরাস্তা হয়ে সায়েদাবাদ রুটে চলা বলাকা পরিবহনের চালকের সহকারী মো. মাসুম মিয়া বলেন, ‘আজমপুর থেকে মহাখালীর ভাড়া ছিল ৩০ টাকা। কমেছে ৩৬ পয়সা। এই ৩৬ পয়সা কীভাবে কম রাখব! তাই ৩০ টাকা নিচ্ছি।’ বাসটির যাত্রী এনামুল হক বলেন, ‘দুই বছর আগে এই পথ ২০ টাকায় যেতাম। দুই ধাপে ১০ টাকা ভাড়া বেড়েছে। কিন্তু দুইবারে ৮ পয়সা হিসাবে এক টাকাও ভাড়া কমেনি। তাহলে বাস ভাড়া কমিয়ে লাভ কী! এটা তামাশা ছাড়া কিছু নয়।’
ভাড়া নির্ধারিত হয় বাসে ৫২ আসন ধরে। কিন্তু দূরপাল্লায় ৫২ আসনের বাস নেই। সর্বোচ্চ ৪০ আসনের বাস চলে। আসন কমলে আনুপাতিক হারে ভাড়া বাড়ে। যেমন ৫২ আসনের বাসে কিলোমিটারে ভাড়া ২ টাকা ১২ পয়সা হলেও ৪০ আসনের বাসের ভাড়া ২ টাকা ৭৬ পয়সা। আগে যা ছিল ২ টাকা ৮০ পয়সা। ৪০ আসনের বাসে ভাড়া ৪ পয়সা কমায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের ভাড়া ৯ টাকা ৬৮ পয়সা তথা ১০ টাকা কমেছে। এই রুটে আগে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ছিল ৬৭৭ টাকা। নেওয়া হতো ৬৮০ টাকা।
গতকাল বৃহস্পতিবার খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, হানিফ পরিবহনের নন-এসি বাসে ভাড়া এখনও ৬৮০ টাকা। তবে এনা পরিবহন ভাড়া ১০ টাকা কমিয়ে ৬৭০ টাকা করেছে। হানিফের মহাব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘হালনাগাদ তালিকা না পাওয়ায় আগের ভাড়াই নেওয়া হচ্ছে।’
দূরপাল্লার অন্যান্য রুটের ভাড়ায় একই চিত্র দেখা যায়। সরকার নন-এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করলেও এসি বাসের ভাড়া ঠিক করেন মালিকরা। গতকাল ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে এসি বাসে ভাড়া নেওয়া হয় ৮৫০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘কিলোমিটারে ৩ পয়সা বাস ভাড়া কমানোর কোনো প্রভাব বাস্তবে পড়েনি, পড়বেও না; বরং ঈদের কারণে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছে। ইচ্ছামাফিক ভাড়া আদায় চলছে।’ সূত্র : সমকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।