জুমবাংলা ডেস্ক : হত্যা মামলায় আসামির তালিকায় নিজের বাবার নাম দেখে শ্যামলী আক্তার বলছিলেন, ‘আমার মরা বাবারে কেমনে আসামি করল তারা। আমার বাবা মারা গেছে। ওনার নামে মামলা হওয়ারই কথা না। ওরা জানার পরও মিথ্যা মামলা দিল। ঘটনার দিন তো আমার বাবা বাড়িতে ছিলেন, কোথাও যাননি। মৃত্যুর কয়েক দিন আগে আমার বাবা আমাকে বলছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হইতে পারে। পরিস্থিতি ভালো না। বাবা আশঙ্কাই সত্যি হইল।’ দেশের জনপ্রিয় জাতীয় পত্রিকা প্রথম আলো এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রথম আলোর ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়- শ্যামলী গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় করা একটি হত্যা মামলায় আসামি মো. কালা মিয়া ওরফে কালাম মিয়ার (৫৫) মেয়ে। গত শুক্রবার শ্রীপুর থানায় মামলাটি করা হয়। কালা মিয়া উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের ধামলই গ্রামের শহর আলীর ছেলে। তিনি কাওরাইদ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য ছিলেন। স্বজনদের দাবি, গত ২৫ সেপ্টেম্বর মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে মারা যান কালা মিয়া। ওই মামলায় নামীয় আসামি ২২৭ জন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার ১৭০ নম্বর আসামি করা হয়েছে কালা মিয়াকে।
রোববার বিকেলে কালা মিয়ার গ্রামের বাড়িতে গেলে সেখানে আশপাশের বাসিন্দারা জড়ো হন। স্বজনেরা ছাড়াও প্রতিবেশীরা মৃত ব্যক্তিকে আসামি করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে কালা মিয়ার স্ত্রী মোসা. জাহানারা বলেন, ‘আপনারা বলেন, মৃত ব্যক্তির নামে মামলা হয়? এটা ঠিক হইছে? আমার কিছু বলার নাই।’ এ সময় উপস্থিত কালা মিয়ার ভাই মুর্শিদ শেখ বলেন, এমন ঘটনায় তাঁরা হতাশ। মাত্র কয়েক দিন আগে ভাইকে হারিয়ে এমনিতেই তাঁরা শোকগ্রস্ত। এমন পরিস্থিতিতে গত শনিবার রাতে তাঁরা মামলার বিষয়টি জেনেছেন। এই মামলার বাদীকেও তাঁরা চেনেন না।
প্রতিবেশী মো. আলী বলেন, ‘মৃত্যুর পর আসামি করার বিষয়টি আমরা মানতে পারছি না। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা চাই।’
মামলার বাদী এনামুল হক নামের এক ব্যক্তি। তিনি গণ–অভ্যুত্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত আসীর ইনতিশারুল হকের (২১) বাবা। আসীরের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বৈলর গ্রামে। গত ৫ আগস্ট শ্রীপুরের পল্লী বিদ্যুৎ মোড় এলাকায় অভ্যুত্থানে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় আসীরের।
ওই মামলার উল্লেখ্যযোগ্য আসামিরা হলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী রোমানা আলী, গাজীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন, শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জামিল হাসান, শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি শামসুল আলম প্রমুখ।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিলেন আসীরক। তাঁরা ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সেদিন শ্রীপুরের পল্লী বিদ্যুৎ মোড় এলাকায় পৌঁছালে তাঁদের ওপর গুলি চালান স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ, মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, তাঁতী লীগ ও আওয়ামী লীগের লোকজন। একপর্যায়ে আসীর পেটে গুলিবিদ্ধ হন। আহত হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর সঙ্গে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরা তাঁকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ব্যাপারে জানতে মামলার বাদী এনামুল হককে বারবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি জবাব দেননি।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘আমরা এ ঘটনা খতিয়ে দেখছি। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সূত্র : প্রথম আলো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।