জুমবাংলা ডেস্ক : জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিচার ছাড়া এবং ছাত্র আন্দোলনে যারা সরাসরি গুলি চালিয়েছিল, তাদের বিচার ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচনে যাব না।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে কাউন্সিলর সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি। ‘ছাত্র গণহত্যা ও ফ্যাসিবাদবিরোধী সিটি ও পৌর কাউন্সিলরদের জনস্বার্থে পুনর্বহালের দাবি এবং বর্তমান সরকারকে সহযোগিতার লক্ষ্যে’ এ সমাবেশ হয়।
সদ্য অপসারণ করা কাউন্সিলরদের উদ্দেশে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, গত ১৫ বছরে আমাদের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। যারা আপনাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল, আপনাদের (কাউন্সিলর) এই সমাবেশে আসতে বাধ্য করেছে, সেই শেখ হাসিনার বিচার ব্যতিত আওয়ামী লীগের বিচার ব্যতিত এবং যারা আমাদের ওপর ডিরেক্টলি গুলি চালিয়েছিল তাদের বিচার ব্যতিত আমরা আর কোনো ইলেকশনে যাব না। আপনাদের কমিটমেন্টে আসতে হবে, আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ যারা নষ্ট করেছে, আপনার সন্তানের স্বাস্থ্য-শিক্ষা ব্যবস্থা যারা নষ্ট করেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। গত ১৫ বছরে যে মানুষগুলো জেলে অকাতরে জীবন দিয়েছিল, গুম হয়েছিল, খুন হয়েছিল, পঙ্গুত্ববরণ করেছিল তাদের ন্যায্য হিসসা ব্যতিত আগামীতে কোনো দল বা পক্ষ যদি নির্বাচনে যায় তাহলে আমরা মনে করব তারা জাতীয় শত্রু। তারা জনগণের কাছে বেঈমান হিসেবে হিসেবে পরিচিত হবে।
তিনি বলেন, আমরা একাত্তরের বিচার এখনো বুঝে পাইনি। আমরা এখনো জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকার স্পষ্টতা জাতির সামনে বুঝে পাইনি। আমরা নব্বইয়ের স্বৈরাচারের আন্দোলনের পরে যে দুটি রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে নতুন একটা ব্যবস্থা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল সেখানেও আমরা তাদের নতুন একটি কমিটমেন্টের জায়গা থেকে নতুন একটা ব্যবস্থা পাইনি। যার ফলে ১৫ বছর আমরা ফ্যাসিস্টদের পদানত হয়েছিলাম। তাই আমরা স্পষ্ট বলতে চাই, আগামীতে আপনারা আপনাদের প্রশাসকের চেয়ারে থাকবেন। বাংলাদেশে আমরা বিচারবিহীন কোনো নির্বাচনে যাব না। গত ১৫ বছর যারা গুম ও খুন হয়েছিল তাদের বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে আমরা ইলেকশনে যাব।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক বলেন, আগামীতে জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে ও বৈষম্যবিরোধীর নেতৃত্বে যে একটি রাজনৈতিক দল আসছে সেই রাজনৈতিক দলে আপনাদের আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করছি। আমরা আশা করি সেই রাজনৈতিক দলে আপনাদের ত্যাগ তিতিক্ষা আমরা মূল্যায়ন করব। জনতা এবং মানুষের মধ্যে যে ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক সেখানে আমরা আপনাদের পাশে পাব। এই কমিটমেন্টের মধ্যে যদি আমরা যেতে পারি তাহলে বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী দল আমরা উপহার দিতে পারব। যে দলের মধ্যদিয়ে সেন্ট্রাল পাওয়ার বলি আর লোকাল পাওয়ার বলি সেখানে আমরা একটি শক্তিশালী ভোট রচনা করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে সকল ফ্যাসিবাদ এবং বিদেশি ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত করে জনগণের যে সমস্যা সমাধানের রাজনীতি সেখানে একটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারব।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, কাউন্সিলররা শুধু নয়টা পাঁচটা অফিস করেন না, তারা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদানসহ ২৪ ঘণ্টা মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত থাকেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী কাউন্সিলররা তিন কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে। ওই তিন কোটি মানুষ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আজকে যদি আপনাদেরকে (কাউন্সিলর) সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে জনগণের সেই অবস্থান ভুল প্রমাণিত হবে। অতি দ্রুত এ বিষয়ে একটি কমিশন গঠন করে ফ্যাসিবাদ বিরোধী কাউন্সিলরদেরকে পুনর্বহালের জন্য এলজিইডি উপদেষ্টার প্রতি অনুরোধ জানান হাসনাত।
জনগণ এলাকার কাউন্সিলরদের কাছে তাদের সমস্যার কথা বলতে চায় উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, তাদেরকে কখনও আপনি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসারের কাছে পাঠাতে পারবেন না। একজন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার তার রুটিন কাজ সম্পন্ন করে জন্ম নিবন্ধনসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। অনেক কাউন্সিলর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় অনেকে জেলে যেতে হয়েছে। আমি অনেককেই চিনি যারা, জেলে থেকে থেকে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছেন। ওই মানুষগুলোকে আমরা সম্মান জানাতে চাই। আমি বিশ্বাস করি এখানে যারা রয়েছেন, সবাই ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তি। এটা যদি না হত তারা কখনোই আমাদের সামনে সেমিনার রুমে আসতো না। আমাদের এই ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নে আমরা অবশ্যই কাজ করব।
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, আমরা প্রশাসক দিয়ে দেশ চলতে দেখতে চাই না। আমলারা আমলাতন্ত্রে তাদের যতটুকু টেরিটোরি, তারা সেখানে কাজ করবে। জনপ্রতিনিধিরা জনগণের সঙ্গে তাদের যতটুকু পরিধি, সেখানে কাজ করবে।
বাংলাদেশ সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান জাহিদের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন- আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, বাংলাদেশ পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম মধু, বাংলাদেশ সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।