সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান অফিস সহকারী আশরাফুজ্জামান ফরিদ ও সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনা আক্তারের অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে এই তদন্ত কার্যক্রম। আর প্রাথমিকভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
হাসপাতালের অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রকাশ পাওয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর শিবালয়বাসী ও বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো.ফজলে বারী, সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনা আক্তার এবং প্রধান সহকারী আশরাফুজ্জামান ফরিদ শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করবেন না এই মর্মে অঙ্গিকার করে মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন বরাবর জনসমুক্ষে প্রকাশ্যে একটি অব্যাহতিপত্র জমা দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ফজলে বারী যোগদানের পর থেকে অপকর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। আর তার অনিয়ম ও দুর্নীতিতে সার্বিক সহযোগীতা করেন হাসপাতালের প্রধান অফিস সহকারী আশরাফুজ্জামান ফরিদ। তাদের দুইজনের যোগসাজসে ২০২২-২৩ইং অর্থ বছরের এমএইচভিদের বেতন থেকে প্রায় তিন লাখ টাকা, হাসপাতালের জিপ গাড়ির জ্বালানি বাবদ দুই বছরে লক্ষাধিক টাকা, হাসপাতাল পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন কাজ বাবদ গত দুই বছরে দুই লাখ টাকা, কমিনিউটি ক্লিনিকগুলোর বিভিন্ন বরাদ্দে থেকে তিন লাখ টাকা,এমএসআর টেন্ডার বাবদ ২০লাখ টাকাসহ বিভিন্ন বরাদ্দ থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত। এছাড়া উপজেলার ২২টি কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য বাৎসরিক ১২ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও সেখানে দিতেন ৩ হাজার টাকা। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফজলে বারীর যোগসাজসে এবং স্থানীয় সাবেক এমপি সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদের পরিচয়ে এসব অপকর্ম করেছেন আশরাফুজ্জামান ফরিদ।
এর আগে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর অনলাইন নিউজ পোর্টাল জুমবাংলায় আশরাফুজ্জামান ফরিদের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর শিবালয়বাসী ও শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে এবং হাসপাতালের অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রকাশ পাওয়ায় শিবারয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো.ফজলে বারী, সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনা আক্তার এবং প্রধান সহকারী আশরাফুজ্জামান ফরিদ শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বপালন করবেন না এই মর্মে অঙ্গিকার করে মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন বরাবর জনসুমুখ্যে প্রকাশ্যে একটি অব্যাহতিপত্র জমা দেন। পরবর্তীতে সিভিল সার্জন ডাঃ মো.মকছেদুল মোমিন তাদেরকে কর্মস্থলে না যাওয়ার জন্য আদেশ দেন।
উলাইল ইউনিয়নের সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক মো.জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রধান অফিস সহকারী আশরাফুজ্জামান ফরিদের নামে হাসপাতাল চত্বরে কোন কোয়ার্টার বরাদ্ধ নেই। অথচ প্রভাব খাটিয়ে তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ ২য় শ্রেনির ষ্টাফ কোয়ার্টারে এসি লাগিয়ে বিলাস বহুল জীবনযাপন করে আসছেন। হাসপাতালে কর্মরত বিভিন্ন কর্মকর্তা/কর্মচারীকে বদলীয় ভয় দেখিয়ে অনৈতিক সুবিধা আদায় করেছেন। তার বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে, বদলী ও হয়রানির ভয় দেখাতো। এছাড়া চাকুরি দেয়ার নামে অনেকের কাছ থেকেলাখ লাখ টাকা নিয়েছেন। এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফজলে বারীর কাছে একাধিকজন ভুক্তোভোগী অফিযোগ দিলেও কোন লাভ হয়নি।
আরতি সাহা নামের স্বাস্থ্যের এক মাঠকর্মী বলেন, প্রত্যেক বছরে প্রায় ১১ হাজার টাকার উপরে আমাদের একটা বিল পাই আর সেই বিলটা করেন অফিস সহকারী আশরাফুজ্জামান ফরিদ। গত ঈদে আমাদের সেই বিল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমাদের মাত্র ৩ হাজার টাকা দিয়েছে। বাকিটা আর দেই নাই। এরপর তার সাথে যোগাযোগ করলে, তিনি আমাকে ফোন করে থ্রেট দেয়। যাতে করে তার কাছে আমরা কেউ টাকা না চাই।
যক্ষা বিভাগের তাসলিমা খানম বলেন, হাসপাতালে তার অনিয়মের বিরদ্ধে কোন কথা বলা যায় না। আর যারা কথা বলে,তাদেরকে হাসপাতালের ভিতরের ও বাহিরের লোকজনকে দিয়ে অশ্লীলভাষায় গালাগাল করে। এমনকি হাসপাতালের নারীদেরকে কুরুটিপূর্ণ ভাষায় কথা বলে এবং পরোকীয়ার মতো জঘন্ন অপবাদ দেয় আশরাফুজ্জামান ফরিদ।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটিকে স্বাক্ষ্য দেওয়া একাধিক শিক্ষার্থী জানান, হাসপাতালের প্রধান অফিস সহকারী আশরাফুজ্জামান ফরিদের অনিয়ম ও দুর্নীতি ফাঁস হওয়ায় তার দুর্নীতিকে ধামাচাপা দিতে গোপনে টাকা পয়সার মাধ্যমে জায়গায় তদবির শুরু করেছেন। এমনকি যাদের সামনে অব্যাহতিপত্র জমা দিয়েছেন,তাদেরকে অনেককে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছেন। তাছাড়া আগের অনিয়ম ও দুর্নীতি ছাড়াও নতুন করে তার বিরুদ্ধে বেশকিছু দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণ জমা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও গত ৫ আগস্টে শিবালয় থানার এক পুলিশ সদস্য আহত হয়ে হাসপাতালে গেলে, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই পুলিশ সদস্যকে প্রকাশ্যে চপেটাঘাত করেন আশরাফুজ্জামান ফরিদ।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আশরাফুজ্জামান ফরিদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি। আমি কোন অপরাধের সাথে জড়িত না। যা অন্যায়-অপরাধ করার সেটা ফজলে বারী স্যার করেছেন। আপনি চাইলে আমি স্যারের দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য দিতে পারবো।
তবে এবষিয়ে সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার তিনি পালিয়ে চলে যান। যার ফলে তার মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয় নি।
তবে অব্যাহতি নেওয়া শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ফজলে বারী জানান, আমরা তিনজন জেনে বুঝে সকলের সামনে অব্যাহতিপত্র লিখেছি এবং শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে অব্যাহতি নিয়েছি।
তদন্ত কমিটির সভাপতি ডাঃ মেহেরুবা পান্না জানান, তদন্ত কমিটি ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে ১০জন এবং হাসপাতালের ৮জন কর্মকর্তাও কর্মচারীর বক্তব্য লিখিত আকারে গ্রহণ করা হয়েছে। যথাসময়ের মধ্যে সিভিল সার্জন বরাবর সেই প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানান, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। তদন্ত কমিটির সভাপতির মাধ্যমে সে সব তদন্ত প্রতিবেদন সিভিল সার্জন বরাবর প্রেরণ করা হবে।
এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডাঃ মো. মোকছেদুল মোমিন জানান, তাদের মুচলেকাপত্র পাওয়ার পর তাৎক্ষনিকভাবে লিখিত আকারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে মুচলেকার কিছুদিন পর অভিযুক্ত ব্যক্তি মুচলেকাপত্রে আপত্তি দেওয়ার কারণে নিয়ম অনুযায়ী তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হবে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।