জুমবাংলা ডেস্ক : বাজেট মানেই মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের খরচ বাড়ে। বিগত কয়েক বছরের বাজেটে এই চিত্র রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিবছরই হয় মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর সরকারের ট্যাক্স বাড়ছে, সেটি কথা বলায় বা ইন্টারনেট ব্যবহারে, আর না হয় মোবাইল ফোন কেনার ওপরে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। মোবাইল ফোন ব্যবহারে আবারো বাড়ছে খরচ। আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারে ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হতে পারে। এছাড়া মোবাইল ফোন উৎপাদনেও খরচ বাড়তে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। এদিকে মোবাইলে কথা বলা (ভয়েস কল), ইন্টারনেট ব্যবহার (ডাটা) ও মোবাইল ফোন উৎপাদানে শুল্প আরোপ হলে রাজস্ব বাড়ার পরিবর্তে আরো কমবে বলে মনে করছেন টেলিকম শিল্প সংশ্লিষ্টরা। শুল্ক না বাড়িয়ে বরং ব্যবহার বাড়ালে রাজস্ব বাড়বে বলেও মনে করছেন তারা।
জানা যায়, আসছে বাজেটে হ্যান্ডসেট উৎপাদনে ৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়াতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে প্রতিটি হ্যান্ডসেটে দাম বাড়তে পারে ১ হাজার টাকা। সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ করার প্রস্তাবে টকটাইম ও ইন্টারনেট ব্যবহারে ১০০ টাকায় বাড়তি গুনতে হবে প্রায় ৬ টাকা। বর্তমানে মোবাইলে কথা বলায় ১০০ টাকার রিচার্জে ৩৩ টাকার বেশি কর দেন গ্রাহকরা। একই পরিমাণ কর দিতে হয় ইন্টারনেটেও। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আসছে বাজেটে উভয় ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এতে অতিরিক্ত ৫ দশমিক বৃদ্ধির ফলে ১০০ টাকার মোবাইল সেবায় সর্বমোট কর দিতে হবে ৩৯ টাকা, যা হবে দক্ষিণ এশিয়ায় সবোর্চ্চ। এভাবে ভ্যাট বাড়াতে থাকলে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার করা কষ্ট হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন ব্যবহারীরা।
মোবাইল অপারেটররা বলছেন, সম্পূরক শুল্ক পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব মিলবে। করের পরিবর্তে ডাটা ব্যবহার বাড়িয়ে এই রাজস্ব আদায় সম্ভব। দেশে একজন গ্রাহক মাসে গড়ে সাড়ে ৬ জিবি ডাটা ব্যবহার করেন; ভারতে যার পরিমাণ সাড়ে ১৭ জিবি।
বর্তমানে হ্যান্ডসেট উৎপাদনে তিন থেকে সাড়ে সাত শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট দিতে হয় ১৭টি প্রতিষ্ঠানকে। বিক্রয় পর্যায়ে রয়েছে ৫ শতাংশ ভ্যাট। আসছে বাজেটে এখাতে ভ্যাট বাড়তে পারে আরও ৫ শতাংশ। এতে ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব পাবে সরকার। তবে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা ফোন বিক্রি বন্ধ হলে এ খাত থেকে বছরে রাজস্ব মিলবে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। একইভাবে বর্তমান সিম ট্যাক্স ২০০ টাকা থেকে বেড়ে ৩০০ টাকা হতে পারে বলেও আশঙ্ক করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন শুল্ক আরোপ হলে মোবাইল ফোন সেবায় বাংলাদেশেই করের পরিমাণ সর্বোচ্চ দাঁড়াবে ৩৯ শতাংশে। অন্যদিকে বর্তমানে পাকিস্তানে রয়েছে সর্বোচ্চ কর ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ, বাংলাদেশে ৩২ দশমিক ৫ শতাংশ, নেপালে ২৬ দশমিক ২ শতাংশ, শ্রীলংকায় ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ, ভারতে ১৮ শতাংশ, সিঙ্গাপুরে ৯ শতাংশ, থাইল্যান্ডে ৭ শতাংশ ও মালয়েশিয়ায় ৬ শতাংশ।
জুন ২০১৫ পর্যন্তও মোবাইল ফোন ব্যবহারে শুধু ১৫ শতাংশ ভ্যাটই দিতেন গ্রাহক। এই ভ্যাটের প্রচলন অবশ্য দেশে যখন মোবাইল ফোন এসেছে সেই দিন থেকেই। ভ্যাটের এই বিষয়টি মানুষের গা সওয়াই ছিল। কিন্তু তারপর থেকে প্রতিটি বাজেটে এই ধারার খরচ বেড়েছে। ২০১৫-১৬ সালের বাজেটে প্রথমবার মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর সম্পূরক শুল্ক নিয়ে আসা হয়। প্রথমে ৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক দিলেও পরে তা ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয় বিভিন্ন পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে। কিন্তু দুই বছর বাদেই কিন্তু আবার এই শুল্ক ৫ শতাংশ করে দেওয়া হয়। পরে ২০১৯ সালে তা ১০ শতাংশ এবং ২০২০ সালে ১৫ শতাংশ করা হয়। মাঝে যোগ করা হয়েছে ১ শতাংশ সারচার্জ। বাড়তে বাড়তে এই খাতে কর এখন ৩২ দশমিক ৫ শতাংশে গিয়ে পৌঁছেছে। নতুন বাজেটে শুল্ক আরোপ হলে তা ৩৯ শতাংশে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া, স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল ফোন উৎপাদনে বর্তমানে সবমিলিয়ে ২৬ শতাংশ ও আমদানি করা মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে ৫৭ শতাংশ শুল্ককর দিতে হয়। জানা গেছে, স্থানীয় ও আমদানি করা মোবাইল ফোনে করের হার বাড়তে পারে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, বর্তমানে স্থানীয় কম্পানিগুলো মোবাইল ফোনের চাহিদার ৯৭ শতাংশই জোগান দিচ্ছে। ২০২১-২২ সালে এ খাতে অনেক বিনিয়োগ এসেছে উল্লেখ করে তাঁরা বলছেন, নতুন করে ভ্যাট আরোপ করলে এসব বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে পড়বে এবং বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে।
মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি রেজোয়ানুল হক বলেন, ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছি।
এবিষয়ে বাংলালিংকের চিফ করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, টেলিযোগাযোগ বৃদ্ধি এবং তথ্যের অভিগম্যতা দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই খাতে কর বৃদ্ধি দেশের ডিজিটাল প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দেবে এবং স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্যে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আমরা আশা করি, সরকার স্বল্পমেয়াদি করনীতির পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা বিবেচনা করবে।
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার মোহাম্মদ সাহেদুল আলম বলেন, এমনিতেই এই খাতে এখন সর্বোচ্চ কর আরোপিত আছে। নতুন করে কর বাড়লে সেক্টরে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। মানুষ তাদের ব্যয় সমন্বয় করার জন্য খরচ কমিয়ে দেবে। ফলে যে লক্ষ্যে এটি করা হচ্ছে সেই লক্ষ্য অর্জিত হবে না, পাশাপাশি সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণও বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, সরকার রাজস্ব বাড়াতে চাইলে কর বৃদ্ধি না করেও সম্ভব। এক্ষেত্রে যদি গ্রাহকদের মাঝে ব্যবহার বাড়ানো যায় তাহলে রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে।
টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, মোবাইল সেবায় এবং হ্যান্ডসেট সংযোজনে করভার কমাতে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ইন্টারনেটের দাম এবং ভ্যাট কমানোর ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং এনবিআরের চেয়ারম্যানের কাছে প্রস্তাব জমা দিয়েছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।