জুমবাংলা ডেস্ক : আগামী জানুয়ারি মাস থেকে মাধ্যমিক স্তরে অভিন্ন পাঠ্যক্রম চালু হচ্ছে। এর ফলে নবম শ্রেণি থেকে সব শিক্ষার্থীকেই বিজ্ঞান, বাণিজ্য বা মানবিক বিষয় আলাদা করে বাছাই না করে দশম শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন একটি পাঠ্যক্রম পড়তে হবে। এটি মূলত একমুখী শিক্ষা। এই নতুন পাঠ্যক্রমে দেশে প্রথম মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে। আর নতুন এই পদ্ধতিতে পাস করে শিক্ষার্থীরা যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যাবেন তখন তাদের ভর্তি পদ্ধতিও হবে এরই আলোকে।
গত সোমবার রাতে প্রায় পাঁচশ প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান। আর বিভাগ বিভাজন ছাড়াই আসছে জানুয়ারিতে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করবেন মর্মে সরকারি সিদ্ধান্ত জানিয়ে প্রশাসনিক আদেশ জারি হয় রাতে।
প্রসঙ্গত, ৬২ বছর পর মাধ্যমিক শ্রেণিতে অভিন্ন পাঠ্যক্রম নিয়ে আসছে সরকার। ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দের আগ পর্যন্ত একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থাই ছিলো। তখন একাদশ শ্রেণি থেকে বিভাগনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা ছিলো। ওই বছর নবম শ্রেণি থেকেই বিভাগ বিভাজন (বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য) শুরু হয়ে ২০২৩ পর্যন্ত চলে। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এটি বাদ দিয়ে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে বিভাগনির্ভর শিক্ষা চালু হচ্ছে।
২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে সরকার একমুখী শিক্ষা চালুর সব ব্যবস্থা করেও শিক্ষাবিদসহ নানা মহলের প্রতিবাদে বাস্তবায়ন স্থগিত করে।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এখন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) অভিন্ন পাঠ্যক্রমের নতুন পাঠ্যবই রচনা করছে। নতুন পাঠ্যক্রমে পরীক্ষা পদ্ধতিও বদলে যাচ্ছে। তবে সেই পরীক্ষা পদ্ধতি বা মূল্যায়ন কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা খুব শিগগিরই একটি অ্যাপসের মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও প্রতিষ্ঠান প্রধানদের জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
বিশ্লেষকরা বলেছেন, ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে এই একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের ঘোষণার পর থেকেই জাফর ইকবালসহ অনেক শিক্ষাবিদ এর সমালোচনা করে বলেছিলেন, এর ফলে বিজ্ঞান শিক্ষা সংকুচিত হবে। ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন পদ্ধতিতে সমস্যা হবে। তারা একমুখী শিক্ষা প্রতিরোধে বহু আন্দোলনও করেছিলেন। অবশ্য সে সময় সরকারি কর্মকর্তারা বলেছিলেন, এ ব্যবস্থা আগের চাইতে বেশি বিজ্ঞানসম্মত এবং এর ফলে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতিও উন্নত হবে। ১৮ বছর পর এসেও সরকারি কর্মকর্তারা প্রায় একই কথা বলেছেন। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে একমুখী শিক্ষার বিরোধিতা করলেও এবার সরকার ড. জাফর ইকবালকে সঙ্গে নিয়েই মাধ্যমিক স্তরে অভিন্ন পাঠ্যক্রমটি চালু করার সিদ্ধান্ত নিলো।
একমুখী সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের অন্তত ৭০ শতাংশ দেশে মাধ্যমিক পর্যন্ত কোনো গ্রুপ নেই। আমরা চাচ্ছি, এসএসসি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থী একই ধরনের জ্ঞান ও যোগ্যতা নিয়ে বেড়ে উঠুক। দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব বিষয়ের ওপর তাদের বেসিক জ্ঞানটা যেনো থাকে। আগে যারা কমার্সে ছিলেন, তাদের সায়েন্সের কোনো জ্ঞানই ছিলো না। অন্যদের ক্ষেত্রেও তাই। এটা তো আমাদের সিদ্ধান্ত নয়, সারা পৃথিবীর শিক্ষাক্রমের আলোকে শিক্ষাবিদদের সুপারিশের ভিত্তিতে এটা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এতোদিন মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের বিভাগভিত্তিক বিষয়ে অন্তত ৪০০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়েছে। রসায়ন ও পদার্থবিজ্ঞানের পাশাপাশি উচ্চতর গণিত, জীববিজ্ঞান, কৃষি শিক্ষা ইত্যাদির মতো বিষয়গুলোর মধ্য থেকে যেকোনো একটিকে বাধ্যতামূলক ও একটিকে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রমে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর সব শিক্ষার্থীকেই বাধ্যতামূলকভাবে সাধারণ ১০টি বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। যদিও বর্তমান শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলোকে একীভূত করে ১০০ নম্বরের ‘বিজ্ঞান’ হিসেবে পড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটিও সবার জন্য বাধ্যতামূলক থাকবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমের পুরো বাস্তবায়ন শুরু হয়। ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিকের দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিকের চতুর্থ ও পঞ্চম এবং মাধ্যমিকের দশম শ্রেণি নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। আর উচ্চ মাধ্যমিকের একাদশ ২০২৬ খ্রিষ্টাব্দে এবং দ্বাদশ শ্রেণি ২০২৭ খ্রিষ্টাব্দে নতুন শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে।
উল্লেখ্য, ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনা হয়। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বাস্তবায়ন শুরু হয়। এর আগে বিভিন্ন সময় শিক্ষাক্রমে সামান্য পরিমার্জন করা হয়। তবে এবার শুধু পরিমার্জন নয়, শিক্ষায় রূপান্তর আনতে পাল্টে ফেলা হচ্ছে কারিকুলাম।
এ পরিস্থিতিতে শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অনেকেই নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শঙ্কিত হয়ে উঠেছেন। নতুন শিক্ষাক্রমে বিজ্ঞান শিক্ষা সংকুচিত করার সুদূরপ্রসারি ফল ভালো হবে না বলে অভিমত তাদের। সবাইকে সব বিষয়ে পড়ানোর যথেষ্ট যোগ্য শিক্ষক নেই বলেও মনে করছেন অনেকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।