তাসবির ইকবাল : এক অস্থির সময়ে, যখন মানসিক চাপ আর বিষণ্ণতা সমাজের এক নীরব ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে, তখন এক মুঠো আশার আলো নিয়ে এসেছে ‘মনতরঙ্গ’। বাংলাদেশের প্রথম এআই-চালিত এই মানসিক স্বাস্থ্য সহায়ক কেবল একটি অ্যাপ্লিকেশন নয়, বরং এটি মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে প্রচলিত সামাজিক ট্যাবু ভাঙার এক সাহসী উদ্যোগ। একটি অলাভজনক সংস্থা হিসেবে যাত্রা শুরু করা এই প্ল্যাটফর্মটি ১৩ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণদের জন্য তৈরি হয়েছে, যেখানে তারা বিনামূল্যে এবং সম্পূর্ণ গোপনীয়তার সঙ্গে নিজেদের মনের কথা বলতে পারে।
আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা ক্রমশ বাড়লেও, এ বিষয়ে কথা বলতে অনেকেই ভয় পান। গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ প্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রায় ১৩% শিশু-কিশোর মানসিক রোগে ভুগছে। এই বিশাল সংখ্যক মানুষের জন্য ‘মনতরঙ্গ’ এক ভরসার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্ল্যাটফর্মটির উদ্দেশ্য হলো ২৪/৭ মানসিক সাপোর্ট দেওয়া, প্রাথমিক লক্ষণগুলো শনাক্ত করা এবং প্রয়োজনে পেশাদার চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দেওয়া।
বন্ধুত্বপূর্ণ এআই, বন্ধুত্বপূর্ণ সেবা
‘মনতরঙ্গ’-এর বিশেষত্ব এর অত্যাধুনিক এআই চ্যাটবট, যা শুধুমাত্র টেক্সট বা ভয়েস কমান্ডে নয়, বরং কণ্ঠস্বরের ওঠানামা বিশ্লেষণ করেও ব্যবহারকারীর আবেগ বুঝতে পারে। এটি কোনো রোবট নয়, বরং একজন বন্ধু বা সহযোদ্ধার মতো কথা বলে। প্ল্যাটফর্মটির অন্যান্য ফিচারগুলো ব্যবহারকারীকে নিজেদের যত্ন নিতে উৎসাহিত করে, যেমন: মুড ট্র্যাকিং, জার্নালিং, এবং ইতিবাচক বার্তা পাঠানো।
এর সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো, এটি স্থানীয় সংস্কৃতি এবং বাংলা ভাষার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি কেবল সমস্যা হলে সমাধান দেয় না, বরং সমস্যা শুরু হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধ করার ওপর জোর দেয়। বর্তমানে একদল মনোবিজ্ঞানী ও মেডিকেল শিক্ষার্থী এই প্ল্যাটফর্মের ব্যবহারকারীদের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানে রাখছেন।
এই উদ্যোগের পেছনের গল্প আরও inspiring। বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, নির্ঝর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তরুণ শিক্ষার্থীরা মিলে এই মানবিক উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করেছেন। ‘মনতরঙ্গ’-এর চিফ অপারেটিং অফিসার সানজিদা আশেকীন স্নেহা বলেন, “আমাদের স্বপ্ন একটি এমন সমাজ গড়া, যেখানে মনের কষ্ট প্রকাশ করাও শারীরিক অসুস্থতার কথা বলার মতোই স্বাভাবিক হবে।”
‘মনতরঙ্গ’ বিশ্বাস করে, মনের কথা খুলে বলার মধ্যেই লুকিয়ে আছে মুক্তির পথ। যদি একজন মানুষও তাদের প্ল্যাটফর্মে ভরসা খুঁজে পায়, তবেই তাদের এই মানবিক উদ্যোগ সার্থক হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।