জুমবাংলা ডেস্ক : আসন্ন রোজার ঈদের আগে বেতন-বোনাস ঘিরে সংকট বাড়ছে দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পে। আগামী মাসের প্রথম দিকে ঈদ হওয়ায় এবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সব কারখানায় ঈদের আগে বেতন-বোনাস দেওয়া হবে কি না। কারণ ঈদের আগে ফেব্রুয়ারি-মার্চ এই দুই মাসের বেতন এবং বোনাস দিতে হবে গার্মেন্টস মালিকদের।
বড় কয়েকটি কারখানায় হয়তো তেমন সমস্যা হবে না, তবে ছোট ও মাঝারি অধিকাংশ গার্মেন্টস কারখানা মালিকই মার্চ মাসের বেতন দিতে পারবেন কি না শঙ্কা রয়েছে। আর এই আশঙ্কাকে ঘিরেই ঈদের আগে সংকট দেখা দিতে পারে এই শিল্পে। শিল্প মালিক, শ্রমিক, শ্রমিক নেতা এবং শিল্প পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য মিলেছে।
এদিকে প্রতি বছর ঈদের আগে কতটা গার্মেন্টস কারখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে সংকট হতে পারে তার একটি তালিকা করা হয় শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকেও একই ধরনের তালিকা করা হয়। এবারও তেমন তালিকা করা হয়েছে শিল্প পুলিশের পক্ষ থেকে।
তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, এবারের ঈদের আগে বেতন-বোনাস নিয়ে সংকট দেখা দিতে পারে প্রায় সাড়ে চারশ গার্মেন্টস কারখানায়।
এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তৈরি করে শিল্প পুলিশের প্রতিবেদনে সময় মতো বেতন-বোনাস দিতে আগে থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, নতুবা ঈদের আগে গার্মেন্টস খাতে বেতন-বোনাস নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে।
অবশ্য ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি শুরু হওয়ার আগেই তৈরি পোশাকসহ সব খাতের শ্রমিকদের বেতন ও উৎসব ভাতা পরিশোধ করতে মালিকপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। একই সঙ্গে মালিকপক্ষ সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করবে বলেও আশ্বস্ত করেছেন বলে জানান।
গতকাল বুধবার সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (টিসিসি) ৭৭তম সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ বছরও ঈদুল ফিতরের আগে দেশের অন্তত ৪১৬টি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য বেতন-ভাতা ও বোনাস হাতে পাবেন কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ঈদের আগে তারা পাওনা বুঝে না পেলে এবারও চরম শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিতে পারে। এতে কারখানা অধ্যুষিত শিল্প এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রমজানের ঈদের ছুটির আগে শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস পরিশোধ করতে হবে। ঈদের আগে কারখানাগুলো কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করতে পারবে না। এ জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
শিল্প পুলিশের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, আসন্ন ঈদে শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধে সমস্যায় পড়তে পারে ৪১৬টি পোশাক শিল্প কারখানা। যার অর্ধেকের বেশি বিজিএমইএ (বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন) ও বিকেএমইএর (বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন) সদস্যভুক্ত পোশাক কারখানা। আর্থিক সংকট, পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ না থাকাসহ নানা কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে এই কারখানাগুলো।
শিল্প পুলিশের হিসাবে দেশে বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা ৪১৬টি। তার মধ্যে বিজিএমইএর সদস্য ১৭১টি, বিকেএমইএর ৭১টি, বিটিএমএর ২৯টি, বেপজার ১৩টি এবং এসবের বাইরে ১৩২টি কারখানা রয়েছে। ৩ হাজার ৬০০টি কারখানার তথ্য বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে শিল্প পুলিশ।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘অন্যবারের চেয়ে এবারের ঈদের আগের বেতন-বোনাস দেওয়া নিয়ে ভিন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কারণ আগামী মাসের প্রথম দিকে ঈদ হওয়ায় এবার ঈদের আগে দুটি বেতন ও একটি বোনাস দিতে হবে গার্মেন্টস মালিকদের। এতে করে ঈদের আগে বেশ মোটা অঙ্কের অর্থের সংকুলান করতে হবে, যা অনেক গার্মেন্টস মালিকের পক্ষে করা সম্ভব হবে না। এ ছাড়া এবার মজুরি বাড়ায় এমনিতেই বেতনের হার বেড়েছে, তার ওপর অনেক কারখানায় কাজ নেই, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট রয়েছে। সব মিলে শিল্প মালিকরা ভালো নেই। এ জন্য আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, বেতন-বোনাস দিতে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়ার জন্য।
এদিকে বাংলাদেশ শিল্পাঞ্চল পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাহাবুবর রহমান বলেন, ঈদের আগে যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই যেন শ্রমিক ছাঁটাই বা লে-অফ করা না হয়, এ ব্যাপারে মালিকপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। কারণ, শ্রমিক ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে অনেক কারখানায় বিগত সময়ে ঈদের আগে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল।
আসন্ন ঈদুল ফিতরে মালিকদের জন্য বেতন-বোনাস পরিশোধ করা কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি করছেন শিল্পোদ্যোক্তারা।
এ বিষয়ে তৈরি পোশাক শিল্প মালিক ও রফতানিকারক সমিতি, বিজিএমইএর সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন, এখন কারখানা মালিকরা ধার-দেনা করছেন ঈদ বোনাস-বেতন-বকেয়া পরিশোধ করার জন্য। ব্যাংক সুবিধা না থাকায় যে যার মতো করে ধার করছেন শ্রমিকদের ভালো রাখতে। আমরাও মনিটর করছি সদস্য কারখানাগুলোকে। আশা করছি শতভাগ কারখানায় সময়মতো বেতন-বোনাস হবে।
গাজীপুরে বিক্ষোভ: এদিকে আমাদের গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, গাজীপুরের টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে টিআরজেড পোশাক কারখানা লিমিটেডের দুই শতাধিক শ্রমিক কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের সামনে বিক্ষোভ করেছে। বুধবার দুপুরে টঙ্গী কলকারখানা অধিদফতরের সামনে শ্রমিকরা এ আন্দোলন করে। গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোশারফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, টিআরজেড পোশাক কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে গত ফেব্রুয়ারির বেতনের ৭৫ ভাগ টাকা পরিশোধ করলেও পুরো টাকা পরিশোধ করা হয়নি। তবে শ্রমিকের বেতন ২৫ ভাগ বকেয়া থাকলেও স্টাফদের বেতন চার মাসের বকেয়া রয়েছে। শ্রমিক ও স্টাফ মিলে একসঙ্গে আন্দোলন করছে।
কারখানার একাধিক শ্রমিক জানান, তাদের দুই কিস্তিতে ফেব্রুয়ারি মাসের কিছু বেতন পরিশোধ করেছে। ফেব্রুয়ারির বেতনের কিছু টাকা, মার্চ মাসের বেতন, ঈদ বোনাস ও বাৎসরিক ছুটির টাকা বকেয়া রয়েছে।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের গাজীপুর জেলা শাখার সভাপতি জিয়াউল কবির খোকন বলেন, ‘শ্রমিকদের বেতন, ঈদ বোনাস, ছুটির টাকা বকেয়া রয়েছে। শ্রমিকরা তাদের বকেয়া পাওনা পরিশোধের দাবিতে কলকারখানা অধিদফতরের সামনে বিক্ষোভ করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।