পেট্রোল গাড়ির দিন ফুরাল, আসছে বৈদ্যুতিক গাড়ির যুগ

car

বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : চার চাকার গাড়ি দুভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এক জ্বালানিতে দ্বিতীয় মানবচালক দ্বারা। দুটি সংজ্ঞাই পরিবর্তিত হচ্ছে দ্রুত। চার চাকার যানবাহন একশ বছরের আগে আবিষ্কৃত হয়। গাড়ি জ্বালানি থেকে বিদ্যুতে চলা স্পষ্টতই এই শতকের সবচেয়ে বড় রূপান্তরমূলক পরিবর্তন। বিশ্বজুড়ে বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারকদের উত্থানে শুধুমাত্র চীনেই ১০০টিরও বেশি বৈদ্যুতিক যানবাহন প্রস্তুতকারক কোম্পানি গড়ে উঠেছে। টেসলা, জেনারেল মটরস,ভস্কওয়াগান, মার্সেডিজ এর মত ঐতিহ্যবাহী অটো জায়ান্টগুলি পুনরায় কাজে ধারাবাহিক রাখছেন।

car

প্রতিষ্ঠানগুলো প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার সঙ্গে অর্থনীতির লাভক্ষতিতে যুক্ত থাকছে। গ্লোবাল ব্যাংকিং অ্যান্ড মার্কেটিয়াল ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যাক্সেল হোফার বলেন, হঠাৎ করেই গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলো নগদ প্রবাহ সমস্যার সম্মুখিন হয়। স্টার্ট আপ কোম্পানিগুলো বর্তমান উন্নয়নমূলক অগ্রগতি বজায় রাখার জন্য বৈদ্যুতিক যানবাহন তৈরিতে ঝুঁকছে। ঐতিহ্যবাহী বড় বড় সংস্থাগুলোও বৈদ্যুতিক গাড়ির ভবিষ্যত পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী যানবাহন বিক্রয়ে অর্ধেক ব্যবসা দখল করে নিবে বৈদ্যুতিক গাড়ি। এমনি পূর্বাভাস দিয়েছে শীর্ষস্থানীয় গ্লোবাল সিকিউরিটিজ, ব্যাংকিং ও বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা দ্য গোল্ডম্যান সাক্স গ্রুপ। তারা জানিয়েছে, ৫ বছর পরেই উন্নত স্বায়ত্তশাসিত যানবাহনের উত্থান ঘটবে। অত্যাধুনিক ব্যাটারি কেমেস্ট্রি, মাইক্রোচিপস এবং সফটওয়্যার অন্তর্ভুক্ত গাড়িগুলো নতুনভাবে তৈরি হচ্ছে।

বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রবণতা কেন?

বৈদ্যুতিক গাড়িতে প্রচলিত অভ্যন্তরীণ দহন-ইঞ্জিন (আইসিই)-এর মত একাধিক ট্রান্সমিশন গিয়ার নেই। পরিবর্তে ‘সিঙ্গেল-স্পিড ট্রান্সমিশন’ বা ‘ডাইরেক্ট-ড্রাইভ সিস্টেম’ নামে ভিন্ন ধরনের ড্রাইভট্রেন ব্যবহার করে। যার ফলে যানবাহনে পাওয়ার ডেলিভারি প্রক্রিয়া আরো সহজ হয়ে ওঠে এবং প্রথাগত ট্রান্সমিশনের তুলনায় বেশকিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। মোটর সরাসরি চাকার সাথে সংযুক্ত হওয়ায় যান্ত্রিক জটিলতা কম হয় এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কমে যায়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইসরায়েল, চীন, সিঙ্গাপুর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতসহ বিভিন্ন দেশ বৈদ্যুতিক যানবাহন দ্বারা আধিপত্যশীল ভবিষ্যতের পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছে।

সলিড স্টেট ব্যাটারি

বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি, গাড়ির দামের এক-তৃতীয়াংশ। যদি দামের ভিত্তিতে গ্যাস বা ডিজেলচালিত গাড়ির সাথে তুলনা করতে হয় তাহলে ব্যাটারির দাম অবশ্যই কমাতে হবে। গোল্ডম্যান সাক্স রিসার্চ অনুসারে ২০২৫ সালের মধ্যে ব্যাটারির দাম ৪০ শতাংশ কমে নেমে আসবে প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টায় ৯১ মার্কিন ডলার।

চীন, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া বৈদ্যুতিক ব্যাটারির প্রধান উৎপাদক। তারা অধিক ব্যাটারির সরবরাহ দিলে ব্যাটারি মার্কেটে অনেক বড় পরিবর্তন আসবে। তাছাড়া সলিড-স্টেট ব্যাটারি আসায় প্রতি চার্জের পরিসীমা ৩০০ মাইল থেকে ৬০০ মাইলে অতিক্রম করবে। এসব ব্যাটারি পুনর্ব্যবহারযোগ্য, নিরাপদ এবং অদাহ্য। গোল্ডম্যান সাক্স-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর এলমোর বলে, ভবিষ্যতে মহাসড়কগুলো ওয়্যারলেস চার্জিং কয়েলের সঙ্গে যুক্ত করা হতে পারে, যার মাধ্যমে বৈদ্যুতিক গাড়ি চলাকালীন সময় শক্তি উৎপাদন করবে। সরকারও প্রশ্নের মুখোমুখি হবে। ইভির (ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল) ব্যবহার বাড়লে গ্যাস ট্যাক্স দেয়া কমবে। সরকারকে রাজস্বের অন্যান্য উপায় খুঁজে বের করতে হবে, বিস্তৃত বৈদ্যুতিক গ্রিডেরও প্রয়োজন হবে। এলমোর আরো বলেন, অপ্রত্যাশিত বেশকিছু পরিবর্তন আসবে। যা শুরুতেই বোঝা যাবে না।

বৈদ্যুতিক গাড়ির গ্রহণযোগ্যতা

পেট্রোল এবং ডিজেল চালিত গাড়ির নির্গমণ মারাত্মকভাবে বায়ুদূষণ ঘটায়। কোনো জ্বলন ইঞ্জিন না থাকার কারণে বৈদ্যুতিক গাড়ি চলার সময় কোনো নির্গমন উৎপন্ন করে না। বৈদ্যুতিক গাড়ি কেবল বায়ুম-লই নয়,আমাদের বায়ুদূষণের প্রভাব থেকেও মুক্ত রাখবে। যুক্তরাজ্য সরকার ২০৩০ সালের পর সকল নতুন পেট্রোল এবং ডিজেলচালিত গাড়ির বাজারজাত নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তুলনামূলক খরচ

ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের ট্রান্সপোটেশন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ২০১৮ সালের সমীক্ষায় জানা যায়, বৈদ্যুতিক গাড়ির গড় খরচ বছরে ৪৮৫ মার্কিন ডলার। যেখানে গ্যাসচালিত গাড়ির খরচ বছরে ১১১৭ মার্কিন ডলার। ২০২০ কনজিউমার রিপোর্ট সমীক্ষায় একইভাবে দেখা যায় যে ইভি চালকরা গ্যাসচালিত চালকদের তুলনায় প্রতি বছর প্রায় ৬০ শতাংশ কম খরচ করে।

বাজারে আসছে সেল্ফ ব্যালেন্সিং মোটরসাইকেল

গ্যাসচালিত গাড়ির সময়সীমা

নির্ধারিত কিছু দেশ পেট্রোলচালিত গাড়ির নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা দিয়ে দিয়েছেন। এদের মধ্যে জার্মানি এবং ইতালির বর্তমান সরকার ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধেও কথা বলেছে। বিশ্বজুড়ে পেট্রল কার ফেজ-আউটের বিষয়ে কোপ২৬ ঘোষণায় স্বাক্ষর করেছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। যার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০৪০ সাল পর্যন্ত। এর আগেই নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়ামের ফ্ল্যান্ডার্স অঞ্চল, সুইডেন, গ্রিস এবং সেøাভেনিয়ার মত দেশ গ্যাসচালিত গাড়ি বিক্রি বন্ধ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। বিশ্বের একমাত্র দেশ নরওয়ে যেখানে ২০২৪ সালে বিক্রি হওয়া নতুন গাড়ির প্রায় ৮০ ভাগ বৈদ্যুতিক। ২০২৫ সালের মধ্যে যা ১০০ ভাগ হওয়ার কথা রয়েছে।