জুমবাংলা ডেস্ক : দেশে ডলারের বাজার আরও বেসামাল হয়ে পড়েছে। সরকারি রেট ১১৭ টাকা হলেও খোলাবাজারে মার্কিন ডলারের দাম ৭ টাকা বেড়ে ১২৪ টাকায় ঠেকেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ার প্রভাবে এ দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মতিঝিল-দিলকুশা এলাকায় বিভিন্ন মানি চেঞ্জার হাউসে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশজুড়ে সংঘাত-সংঘর্ষ, কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধের প্রেক্ষাপটে চলতি মাসের জুলাইয়ে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর মধ্যে আন্দোলনে নিহত ব্যক্তির কথা বলে প্রতিবাদ হিসাবে দেশে বৈধপথে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স না পাঠানোর বিষয়ে ক্যাম্পেইন করছেন অনেক প্রবাসী। ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে খোলাবাজারে।
যে কারণে এক দিনের ব্যবধানে ডলারের দাম বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। এখন এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে ১২৪ থেকে ১২৪ টাকা ২০ পয়সা। গত রবি ও সোমবারও খোলাবাজারে ডলার ১২১ থেকে ১২২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
রাজধানীর বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিলে ডলার কিনতে আসা এক গ্রাহক জানান, থাইল্যান্ড যাব। খরচের জন্য নগদ ডলার কিনতে মানি চেঞ্জারে এসেছি। কিন্তু ডলার ১২৪ টাকা চাওয়া হচ্ছে। এই রেটেই কিনলাম। কারণ শুনলাম দাম আরও বেড়ে যাবে।
বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে গত ৮ মে ‘ক্রলিং পেগ’ চালুর পর ডলারের দর এক লাফে ৭ টাকা বেড়ে মধ্যবর্তী দর ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ফলে দুই মাসের বেশি সময় ধরে ডলারের দর ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় স্থিতিশীল ছিল। এখন এটি বাড়তে শুরু করেছে।
এদিকে রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বেশি দামে রেমিট্যান্স আনতে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংস্থাটির এক প্রভাবশালী ডেপুটি গভর্নর রোববার বেশি রেমিট্যান্স আহরণ করে এমন ১২টির মতো বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) এ নির্দেশ দিয়েছেন। ক্রলিং পেগ চালুর পর ব্যাংকগুলোতে ডলার রেট সর্বোচ্চ ১১৮ টাকা হলেও রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মৌখিক নির্দেশের পর বেশ কয়েকটি ব্যাংক রেমিট্যান্স কেনার রেট ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৮ টাকা ৭০ পয়সা অফার করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সেদিন একটি বেসরকারি ব্যাংকের এমডি জানান, গত এক সপ্তাহ দেশে ইন্টারনেট ছিল না। ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম হয়নি। সারা বিশ্বের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন প্রায় বন্ধ ছিল। রেমিট্যান্স সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। তাই ডলারের রেট বাড়িয়ে দিয়ে রেমিট্যান্স সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ থেকে ২৪ জুলাই দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৭ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। এর আগে ১ থেকে ১৮ জুলাই এসেছিল ১৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার; অর্থাৎ চলতি মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রতিদিন গড়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ হিসাব বলছে ১৯ থেকে ২৪ জুলাই সময়ে দেশে রেমিট্যান্স আসা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। এর আগে ডলারের দাম বাড়ানোর পর গত মে মাসে ২২৫ কোটি ডলার এবং জুন মাসে ২৫৪ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসে; একক মাস হিসেবে যা ৪৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে জুন মাসে।
এদিকে কোটা সংস্কার নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে তৈরি হওয়া সাম্প্রতিক পরিস্থিতির আগেও নগদ ডলার বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায়। ব্যাংকগুলোও রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত দরে ডলার কিনছে। এর আগে রেমিট্যান্স কেনায় দর ছিল ১১৭ টাকা।
মতিঝিল এলাকার একটি এক্সচেঞ্জের এক কর্মকর্তা বলেন, সোমবার তারা ১২১ টাকা ৫০ থেকে ৭০ পয়সায় ডলার কিনেছেন। বিক্রি হচ্ছে ১২২ থেকে ১২২ টাকা ৫০ পয়সা দরে। তিনি বলেন, কয়েক দিন অফিস বন্ধের পর ডলারের বাড়তি চাহিদা তৈরি হয়েছে। সে তুলনায় সরবরাহ কম। বন্ধের আগে ১২১ টাকায় কিনে বিক্রি করেন ১২১ টাকা ৩০ পয়সায়। একই চিত্র দেখা গেছে দিলকুশা, ফকিরাপুল ও পল্টন এলাকায়।
একই কথা বলছেন পল্টন এলাকার মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ীরা। এলাকাটির এক ব্যবসায়ী জানান, এর আগে ১২১ থেকে ১২১ টাকা ৪০ পয়সার মধ্যে কেনাবেচা হয়েছে। এখন বন্ধের পর তারাও ডলার সংগ্রহ করতে পারেননি। আবার চাহিদাও বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সংকট থাকলে দর বাড়ে। এখন ১২২ থেকে ১২৩ টাকার মধ্যে বিক্রি চলছে। তবে দর বেশি চাইলেও ১২২ টাকা ৫০ পয়সাতেই বিক্রি বেশি হচ্ছে। যেখানে কেনার দামও বেড়েছে।
চলতি বছরের মে এবং জুন মাসে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। ডলারের দর বাড়ানোর পর মে মাসে আসে ২২৫ কোটি ডলার এবং জুন মাসে ২৫৪ কোটি ডলার। চলতি মাস জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্যাংকিং চ্যানেলে ভালো রেমিট্যান্স আসে। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আর তিন কার্যদিবস সাধারণ ছুটিসহ পাঁচ দিন ব্যাংক বন্ধের পর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহে ধীরগতি চলে আসে।
বিকালের মধ্যে চালু হচ্ছে ফেসবুক-টিকটকসহ সব সামাজিক মাধ্যম: পলক
চলতি মাস জুলাইয়ের ১৯ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত ১০ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ২ কোটি ৩৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। জুলাই মাসের ১ থেকে ১৮ তারিখ পর্যন্ত এসেছিল ১৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার। সে হিসাবে জুলাই মাসের প্রথম ১৮ দিনে প্রতিদিন গড়ে ৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে। শুরুর ১৮ দিনের ধারা বজায় থাকলে পুরো মাসে আড়াই বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স আসার কথা ছিল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।