জুমবাংলা ডেস্ক : চীনের স্বশাসিত দ্বীপ তাইওয়ানের মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ৩৯ লাখ ২৩ হাজার ২৭৬ জন। অন্যদিকে, আফ্রিকার অষ্টম বৃহত্তম দেশ মালির মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ৩২ লাখ ৯৩ হাজার ৬৯৮ জন। আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারের সর্বশেষ তথ্য বলছে, মোট জনসংখ্যা আড়াই কোটির নিচে আছে এমন দেশের সংখ্যা পৃথিবীতে মোট ১৭৮টি (স্বীকৃতি দেশসহ)। তবে জনসংখ্যায় বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনবহুল দেশ বাংলাদেশে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭৮ দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। সংখ্যা হিসেবে সেটি দাঁড়ায় ২ কোটি ৫৭ লাখ (২৫.৭ মিলিয়ন)।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) বিকেলে রাজধানী ঢাকার গুলশানের একটি হোটেলের গণসাক্ষরতা অভিযানের উদ্যোগে জিপিই’র সহযোগিতায় ‘বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশু-কিশোরদের শিক্ষার চ্যালেঞ্জ: সমাধান কোন পথে’ শীর্ষক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে আলোচনাপত্র উপস্থাপনকালে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
সূত্র: গণসাক্ষরতা অভিযান
আলোচনাপত্র উপস্থাপনকালে গণসাক্ষরতা অভিযানের কার্যক্রম ব্যবস্থাপক মো. আব্দুর রউফ বলেন, বাংলাদেশ শিক্ষাক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করা সত্ত্বেও বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) (২০২৩) এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, ৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ২ কোটি ৫৭ লাখ শিশু-কিশোর-যুবরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে রয়েছে। যা বিশ্বের অনেক দেশে এত সংখ্যক জনগোষ্ঠীও নেই।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালের প্রতিবেদনে ৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৫৯ শতাংশ জনগোষ্ঠী শিক্ষার কাতারে কোনো না কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নাম লিখিয়েছে বলে উঠে এসেছে। কিন্তু বাকি ৪১ শতাংশ জনগোষ্ঠী পড়ালেখার বাইরে, সংখ্যার বিচারে সেটি ২ কোটি ৫৭।
“অর্থাৎ, ২ কোটি ৫৭ লাখ শিশু-কিশোর শিক্ষার বাইরে রয়েছে। আমি যদি বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করি দেখা যাবে পৃথিবীর অনেক দেশে এত সংখ্যক জনগোষ্ঠীও নেই, আমাদের দেশের যত জনগোষ্ঠী শিক্ষার বাইরে রয়েছে।”
ওয়ার্ল্ডোমিটারের বর্তমান তথ্য বলছে, বিশ্বে মোট দেশ রয়েছে ২৩৪টি। এর মধ্যে বৃহত্তম জনবহুল দেশ ভারতের মোট জনসংখ্যা ১৪২ কোটি ৮৬ লাখ ২৭ হাজার ৬৬৩ জন। আর সর্বনিম্ন জনসংখ্যার দেশের নাম হলি সি, সেখানকার মোট জনসংখ্যা ৫১৮ জন।
সরকারিভাবে তৈরি করা এক পরিসংখ্যান তুলে ধরে এসময় তিনি বলেন, সর্বশেষ ২০২২ সালে প্রাথমিকে প্রায় ১৪ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে প্রায় ৩৬ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। ঝরে পড়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার ইতিমধ্যে অনেকগুলো কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
“সরকার গত এক দশকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য অনেকগুলো প্রকল্প হাতে নিয়ে। এসব প্রকল্প শেষও হয়েছে। বর্তমানে সেকেন্ড চান্স এডুকেশন কর্মসূচি না একটি প্রকল্প চালু রয়েছে। এটিও গত ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা কিন্তু আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে।”
‘বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশু-কিশোরদের শিক্ষার চ্যালেঞ্জ: সমাধান কোন পথে’ শীর্ষক অনুষ্ঠান
তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে এনজিও এবং কমিউনিটি পর্যায়ে অনেকগুলো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য। সাক্ষরতা বাড়ার জন্য তারা অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। তারপর অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এসডিজি-৪-এর বলা হয়েছে সকলের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক সমতাভিত্তিক মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা ও জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ তৈরি করতে হবে। সেখানে কেউ বাদ যাবে না। তাহলে ২ কোটি ৫৭ লাখ স্কুলের বাইরে রয়েছে এটা একটা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এর অন্যতম কারণ অতি দরিদ্রতা, এজন্য অনেকে স্কুলে ভর্তি হচ্ছে না আবার ভর্তি হয়ে ঝরে পড়ছে।
“তবে সরকার ইতোমধ্যে ১০ লাখ ঝরে পড়া শিশুদের শিক্ষায় ‘দ্বিতীয় সুযোগ’ কার্যক্রমের আওতায় ‘আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন’ প্রকল্প উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাধারায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কিন্তু প্রকল্পভিত্তিক স্বল্পমেয়াদি এই কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা থাকে না বলে এ শিক্ষা প্রায়শ টেকসই হয় না এবং অধিকাংশ শিক্ষার্থীর তেমন কোনো কাজে আসে না। সেকারণে এটিকে প্রকল্পভিত্তিক না রেখে পিইডিপি-৫ পরিকল্পনায় মূলধারার কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”
সভায় সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোছা. নূরজাহান খাতুন, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ এবং চাকমা রাজা দেবাশীষ রায়।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধূরী। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক তপন কুমার দাশ। মতবিনিময় সভায় সারাদেশ থেকে আসা শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ, গবেষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দেড়-শতাধিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করে নিজেদের প্রশ্ন ও সুপারিশ তুলে ধরেন এবং অতিথিরা সেসব প্রশ্নের উত্তর দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশের ঝরে পড়ার প্রধান কারণ দরিদ্রতা। তাছাড়া রয়েছ অনিশ্চয়তা, বাড়ি থেকে স্কুল দূরে হওয়া, বই উপকরণের না দেয়া, শিক্ষায় আনন্দ না থাকা।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় আনন্দ ছাড়া সব কল্পনা করা যায়। এসব থেকে পরিত্রাণ কীভাবে পাবো আমরা? এসব চিন্তার সময়ে এসেছে।
উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, পৃথিবী যতদিন আছে এই ঝরে পড়া শিক্ষার্থী থাকবে। কিন্তু কিছু কিছু (সরকারের) বিভাগ আছে তারা সেটা স্বীকার করে না। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা (অধিদপ্তর) বলে দেশে ঝরে পড়া কোনো শিক্ষার্থী নেই। অথচ আদমশুমারি বলছে ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। তবে আমি মনে করি এখনও ২৫ শতাংশ শিশু শিক্ষার বাইরে রয়েছে।
সভায় অন্যান্য বক্তারা বলেন, বিদ্যালয় বহির্ভূত শিশু-কিশোরদের শিক্ষার জন্য অতিরিক্ত বাজেট বরাদ্দ করা, উপবৃত্তির সংখ্যা এবং পরিমাণ বাড়ানো, মিড ডে মিল সর্বজনীনভাবে চালু করা অতীব জরুরি। এছাড়াও শুধুমাত্র শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটে ২০ শতাংশ বরাদ্দ দিতে হবে। সেইসাথে কারিগরি শিক্ষাকে আরো বেশি বাজার উপযোগী করে প্রশিক্ষিত দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার উপরও জোর দেন বক্তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।