লাইফস্টাইল ডেস্ক : বইয়ের পাতায় হোক, বা ক্যুইজে, টিভি স্ক্রিনে অথবা লোকমুখে, জীবেন একবার না একবার এই প্রশ্নের মুখে পড়েছি আমরা সকলেই। কী বলছে বিজ্ঞান, জানুন। ছবি: পিক্সাবে।
ছোট থেকে রহস্য গল্প হয়ত গুলে খেয়েছেন। বিজ্ঞান, কল্পবিজ্ঞান, ইতিহাস, গোগ্রাসে গিলেছেন। কিন্তু জীবনে কোনও না কোনও সময়, কোনও না কোনও মুহূর্তে, কোনও একটি প্রশ্নে হোঁচট খেতে হয়েছে।
সাধারণ মানুষ তো বটেই, তাবড় বোদ্ধারাও উত্তর দিতে গিয়ে থতমত খেয়ে যান। হাতিঘোড়া কোনও ব্যাপার নয়, প্রশ্ন একটাই, পৃথিবীর বুকে কার আবির্ভাব আগে, মুরগি না ডিমের!
ধাঁধায় ভরা দুনিয়ায় বইয়ের পাতা, টেলিভিশন, লোকমুখে, কোথাও না কোথাও এই প্রশ্ন একবার হলেও কানে এসেছে আমাদের। কিন্তু যুৎসই উত্তর মেলেনি। আমাদের মতো সাধারণ মানুষ তো কোন ছাড়, জবাব নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি জ্ঞানীগুণীরাও।
যুগ যুগ ধরে বার বার ঘুরেফিরে উঠে এসেছে এই একই প্রশ্ন। তা নিয়ে গবেষণাও হয়েঠছে বিস্তর। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গিয়েছে কি! মুরগি না ডিম, কার আবির্ভাব আগে, সেই নিয়ে বিজ্ঞান কী বলছে জেনে নিন।
প্রাণী বিজ্ঞানীদের অধিকাংশেরই মত, আগে ডিমের আবির্ভাব ঘটেছে পৃথিবীতে। এর সরল ব্যাখ্যা হিসেবে তাঁরা জানিয়েছেন, ডিম স্ত্রীর যৌন কোষ ব্যাতীত কিছু নয়। মাটিতে পাড়া যায় এমন ডিমের সৃষ্টিতেই উত্তর লুকিয়ে বলে মত তাঁদের।
মেরুদণী প্রাণীর বিবর্তনের ইতিহাসে ডিমের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মত প্রাণী বিজ্ঞানীদের। তাঁদের মতে, জলের থেকে বেরিয়ে স্থলভূমিতে প্রাণেরসঞ্চার ঘটার সঙ্গে ডিমের সংযোগ রয়েছে।
জীবাশ্মবিদদের মতে, শক্ত খোসার আবরণ যুক্ত ডিমের আগে, মেরুদণ্ডী প্রাণীরা প্রজননের ক্ষেত্রে জলের উপর নির্ভরশীল ছিল। উভচর প্রাণীরা আজও এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আঠালো ডিমকে বাঁচিয়ে রাখতে সেটিকে আর্দ্র রাখতে হয় তাদের।
এখনও পর্যন্ত উদ্ধার জীবাশ্ম থেকে জুরাসিক যুগের আগে ‘ট্রু বার্ড’ (এখনকার পাখির আদি বংশ)-এর অস্তিত্বের প্রমাণ মেলেনি, যারা কিনা আধা জলজ ছিল। তবে খোসা সুদ্ধ ডিমের আবির্ভাব তার আগেই বলে মত বিজ্ঞানীদের, আনুমানিক ৩৩ কোটি বছর আগে। সেই নিরিখে মুরগির আগে ডিমের আবির্ভাব ঘটে। তবে সেই সময় বাইরে শক্ত খোসার আবরণ নয়, ডিমের গঠন নরম রবারের বলের মতো ছিল হয়ত, বর্তমানে সরীসৃপের ডিম যেমন হয়।
পার্মিয়ান এবং জুরাসিক যুগের মধ্যবর্তী সময়ে ডায়নোসরের অস্তিত্ব ছিল পৃথিবীতে। এখনও পর্যন্ত ডায়নোসরের প্রাচীনতম ডিমের যে নমুনা পাওয়া গিয়েছে, তা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ওই সব ডিমের বাইরের আস্তরণ অত্যন্ত পাতলা ছিল। মেরে কেটে ১০০ মাইক্রন, মানুষের চুলের মতো সূক্ষ্ম। তবে আকার দেখে বলা যায়, সেগুলো যথেষ্ট অনমনীয় ছিল।
আস্তরণের সূক্ষ্মতা দেখে ধন্দও রয়েছে। তাঁদের মতে অত সূক্ষ্ম আস্তরণের অম্ল মাটির সংস্পর্শে এসে বিলীন হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। সে ক্ষেত্রে চুন সম্বলিত ওই ডিমের খোসা সংরক্ষিত থাকত না। তাই ডায়নোসরের ডিম হয়ত নরম খোসাতেই আবৃত ছিল, জীবাশ্মে তার সঠিক সংরক্ষণ হয়নি বলেও মনে করেন কেউ কেউ। তা হলেও, মুরগির আগে ডিমের আবির্ভাব ঘটে বলে ধরে নেওয়া যায়।
তবে বিতর্কের শেষ এখানেই নয়। কারণ প্রশ্ন এখানে ডায়নোসরের ডিম নিয়ে নয়, মুরগির ডিম নিয়ে। বর্তমানে যে প্রাণীকে মুরগি বলে চিনি আমরা, তার বিবর্তন ঘটেছে লাল বনমুরগির উপপ্রজাতি থেকে, আজ থেকে প্রায় ৫ কোটি বছর আগে। দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ প্রথম সেগুলিকে পুষতে শুরু করেন, ১৬৫০ থেকে ১২৫০ খ্রিস্টপূর্বের মধ্যে। তার শেষ পূর্বপুরুষের ডিমের ভ্রূণ ছিল ভিন্ন। সেই ভ্রূণ পূর্ণতা পেয়ে যে ডিম পাড়ে, সেটিই শক্ত খোসাযুক্ত প্রথম ডিম বলে মনে করেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। এই তত্ত্ব সঠিক হলে, ডিমের আগে মুরগিরই আবির্ভাব ঘটে পৃথিবীতে।
তবে বিবর্তনের ইতিহাস মোটেই সোজাসাপটা নয়। আজ থেকে হাজার হাজার বছর আগে, ভারত এবং ওশিয়ানিয়ায় মুরগি প্রতিপালনের চল ছিল। বিবর্তনের পরও মুরগি এবং বনমোরগের মধ্যে সঙ্গম ঘটে। তার পর ধাপে ধাপে স্বতন্ত্র প্রজাতি হিসেবে আজকের মুরগির আবির্ভাব। তাই কোন মুরগি আদি, তা নিয়েও ধন্দ রয়েছে বইকি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।