স্পোর্টস ডেস্ক : ‘এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান’। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল সুকান্ত ভট্টাচার্যের এই উক্তিতে বিশ্বাসী। তাইতো দলের প্রয়োজনে নিজের জায়গা ছাড়তে পিছপা হলেন না তিনি। অধিনায়কত্ব ছেড়ে তামিম যেন জানান দিলেন, ‘এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি।’
বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) বাংলাদেশ ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়কত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তামিম ইকবাল। এর আগে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও ক্রিকেট পরিচালনা কমিটির প্রধান জালাল ইউনুসের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন তিনি। অধিনায়কত্ব ছাড়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও কথা বলেন তামিম।
দলের নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণার সময়ে তামিম ইকবাল বলেন, ‘সাধারণত ৯০ ভাগ মানুষ স্বার্থপরের মতো সিদ্ধান্ত নেয়। আমার যে খারাপ লাগছে না তা বলব না। কিন্তু সেই খারাপ লাগার চেয়ে দল আমার কাছে বড়। এতদিন দলের নেতৃত্বের জায়গায় ছিলাম, সেই জায়গা থেকে সরে আসা সহজ নয়। এখানে খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। আমি যদি বলি যে, আমি নাখোশ না, তাহলে মিথ্যা বলা হবে।’
তামিম ইকবাল চাইলে বিশ্বকাপ পর্যন্ত অধিনায়কত্ব ধরে রাখতে পারতেন। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে হয়তো তাতে কেউ আপত্তিও করতেন না। কিন্তু সুযোগ থাকার পরেও বাংলাদেশি ওপেনার সেটি করলেন না। তামিম নেতৃত্ব ছাড়ার সময়ে বলেন, ‘চোটের কথা বিবেচনায় রেখে দলের ভালোর জন্য আমি নেতৃত্ব ছাড়ছি। সুস্থ হয়ে ক্রিকেটার হিসেবে দলে ফিরতে চাই। আশা করি এশিয়া কাপের পরে নিউজিল্যান্ড সিরিজে ফিরতে পারব। অবশ্য জোর করে এশিয়া কাপে খেলা যেত, কিন্তু সকলেই চাচ্ছেন আমি যেন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরি। এ কারণেই একটু বেশি সময় নিতে চাই।’
সবমিলিয়ে সুযোগ থাকার পরেও তামিম অধিনায়কত্ব ছাড়ার মতো সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি হয়তো ভেবেছেন, মাঠে থাকতে না পারলে অধিনায়কের জায়গাটি ধরে রেখে কী লাভ? ফলে আসন খালি করে দিয়েছেন বাকিদের জন্য। আর তাতে দেশের ক্রীড়াজগতে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো। অতীতেও অবশ্য বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় এমন সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন। এবার তামিমের এমন সিদ্ধান্ত তরুণ প্রজন্মের কাছে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেবে, এমনটাই ধারণা ভক্তদের। সেইসঙ্গে এই চর্চা ধরে রাখতে পারলে দেশের ক্রিকেট এগিয়ে যাবে বহুদূর।
মূলত দীর্ঘদিন ধরে পিঠের সমস্যায় ভুগছেন তামিম ইকবাল। এর মধ্যে গত ৬ জুলাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে আবারও জাতীয় দলে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। এরপরে দেড় মাসের ছুটি নিয়ে দুবাই ঘুরে লন্ডনে গিয়ে চিকিৎসা করান। যেখানে দুটি ইনজেকশন নিতে হয়েছে তামিমকে। এরপরে মাঠে ফিরতে সময় লাগবে আরও কয়েক সপ্তাহ।
ফলে আগামী ৩০ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া এশিয়া কাপে তামিমের খেলা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তাতে এশিয়ার সর্বোচ্চ এই টুর্নামেন্টে দল যেন পিছিয়ে না থাকে, সেটিই ভেবেছেন তামিম। দল যেন নেতৃত্বের অভাবে না ভোগে এটিও ভেবেছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ওয়ানডে দলে নতুন অধিনায়ক দেখার জন্য আসন খালি করে দিলেন। দলের স্বার্থে এমন ত্যাগ নিশ্চয়ই মনে রাখবে টাইগার বাহিনী।
এদিকে বিসিবির প্রধান চিকিৎসক ড. দেবাশীষসহ ফিজিও বায়োজিদ ও বোর্ডের সবাই মিলে তামিমের বিষয়ে দীর্ষ আলোচনা করেছেন। সেখানে সবাই মিলে তামিমের সুস্থ হয়ে ওঠার ওপরে গুরুত্বারোপ করেছেন। ফলে ফিট হওয়ার আগে এশিয়া কাপে না খেলার সিদ্ধান্ত নেন তামিম ইকবাল। এই আসর শেষে নিউজিল্যান্ড সিরিজে তামিম ফিরতে পারবেন বলে আশা করেছেন বিসিবির সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।