জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীর যানজট নিরসনে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প। এটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে শুরু হয়ে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও হয়ে মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকায় গিয়ে শেষ হবে এই প্রকল্প।
যানজট নিরসনে নেয়া সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পের সংযোগ সড়কসহ দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েটিতে ১১টি টোল প্লাজা থাকবে। যার পাঁচটিই এক্সপ্রেসওয়ের উপরে। এর উপর দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে বিকল্প সড়ক হিসেবে কাজ করবে।
সরকারি-বেসরকারি যৌথ বিনিয়োগে (পিপিপি) তিন ধাপে উড়াল সড়ক প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথম ধাপ হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত। দ্বিতীয় ধাপ বনানী রেলস্টেশন থেকে মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত। তৃতীয় ধাপ মগবাজার রেলক্রসিং থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত।
উড়াল সড়কের রুট হচ্ছে—কাওলা, কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। পুরো পথই রেললাইন ঘেঁষে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। পুরো প্রকল্প শেষ হলে রাজধানীকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের (কুতুবখালী) সঙ্গে যুক্ত করবে এক্সপ্রেসওয়েটি।
মহাসড়কে চলাচলে নানা বিড়ম্বনা থেকে মুক্ত হয়ে বিরামহীনভাবে যান চলাচলের সুযোগ করে দিকেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ধারণা।
বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশের মহাসড়কগুলো একটানা চলাচলের উপযোগ নয়। রয়েছে অসংখ্য মোড় আর হাটবাজার ও দখলদারিত্ব।
এসব থেকে পরিত্রাণ পেতেই দেশের কয়েকটি মহাসড়কে করা হবে এক্সপ্রেসওয়ে। এর প্রথমটি ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে। তবে এটি মাটির ওপর নির্মিত। এমন সড়ক যখন মাটি থেকে উপরে পিলারের উপর নির্মিত হবে, তখন সেটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বলা হবে।
এক্সপ্রেসওয়েতে সব ধরনের যানবাহন চলবে না, দ্রুতগতির যানবাহন চলবে। এসব যানবাহন কোথাও থামবে না। থামলেও ব্যবহার করতে হবে একটি নির্দিষ্ট লেন, যা মূল এক্সপ্রেসওয়ের বাইরে। এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন চলবে একটি নির্দিষ্ট গতিতে।
এক্সপ্রেসওয়ের সুবিধা নিতে যানবাহন কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণ টোল। আর এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী যানবাহন গন্তব্যে পৌঁছে যাবে অন্য যানবাহনের তুলনায় কম সময়ে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা শহরের যানজট অনেকাংশে কমে যাবে এবং ভ্রমণের সময় ও খরচ কমে যাবে। সার্বিকভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজিকরণ, আধুনিকায়ন হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণ পাশ থেকে বনানী রেলস্টেশন পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটারের প্রথম অংশের কাজ শেষ পর্যায়ে। ইতোমধ্যে মূল কাজ শেষ হয়েছে। অগ্রগতি ৯৩ শতাংশ, শেষ মুহূর্তের ফিনিশিংয়ের কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। রাস্তার বাতি বসানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। রাস্তার দুই পাশে রেলিং বসানোর কাজও চলছে। কয়েক দিনের মধ্যে কাওলা থেকে বনানী অংশ পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে।
ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারে দিতে হবে টোল
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প থেকে বিনিয়োগকারীরা তাদের অর্থ তুলবে যানবাহন থেকে টোল আদায়ের মাধ্যমে। এজন্য তারা আলাদা টোল প্লাজা স্থাপন করা হচ্ছে। এই এক্সপ্রেসওয়ের জন্য সর্বনিম্ন টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। প্রাইভেট কার, জিপ, মাইক্রোবাস, ট্যাক্সির মতো হালকা শ্রেণীর যানবাহনের জন্য টোলের এ হার ধার্য করা হয়েছে। অন্যদিকে সর্বোচ্চ ৬২৫ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে বড় ট্রাকের (ছয় চাকার বেশি) জন্য।
এক্সপ্রেসওয়েটিতে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি নির্ধারণ করা হয়েছে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। মোটর সাইকেল ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মতো দুই ও তিন চাকার কোনো যানবাহন এই উড়াল সড়কে চলতে পারবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলের জন্য যানবাহনের চারটি শ্রেণী নির্ধারণ করা হয়েছে, যার প্রথমটি হালকা যানবাহন। এ শ্রেণীর যানবাহনের জন্য সর্বনিম্ন টোল ১০০ টাকা। এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার পর শেষ পর্যন্ত না গেলে হালকা শ্রেণীর যানবাহন থেকে এ পরিমাণ টোল আদায় করা হবে।
অন্যদিকে, এক্সপ্রেসওয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ব্যবহার করা হালকা যান থেকে টোল আদায় করা হবে ১২৫ টাকা। হালকা শ্রেণীর যানবাহনকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায়ের ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে। এ ভিত্তি টোলের দ্বিগুণ আদায় করা হবে বাস থেকে। এ হিসাবে এক্সপ্রেসওয়ের কিছু অংশ ব্যবহারের জন্য বাসের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০ টাকা। আর পুরো এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে চাইলে গুনতে হবে ২৫০ টাকা।
একইভাবে ভিত্তি টোলের চার গুণ নির্ধারণ করা হয়েছে মাঝারি (ছয় চাকা পর্যন্ত) আকারের ট্রাকের জন্য। এ হিসাবে এক্সপ্রেসওয়ের কিছু অংশ ব্যবহার করলে ৪০০ টাকা এবং পুরো অংশ ব্যবহার করলে মাঝারি ট্রাক থেকে টোল আদায় করা হবে ৫০০ টাকা।
আর বড় ট্রাকের জন্য (ছয় চাকার বেশি) টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ভিত্তি টোলের পাঁচ গুণ। সেই হিসাবে কিছু অংশ ব্যবহারের জন্য ৫০০ টাকা; পুরো এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের জন্য ৬২৫ টাকা টোল আদায় করা হবে বড় ট্রাক থেকে। বিনিয়োগকারীরা এ অবকাঠামো থেকে সাড়ে ২১ বছর টোল আদায় করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।