জুমবাংলা ডেস্ক : স্বৈরাচার সরকারের পতনের একদিন আগে কুমিল্লায় গুলিতে প্রাণ হারান আবদুর রাজ্জাক রুবেল। পেশায় তিনি ছিলেন বাস চালক। যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) রাজনীতির সঙ্গে। গত ৪ আগস্ট দেবিদ্বার উপজেলা সদরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ওই সময় দেবিদ্বার আজগর আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালালে ঘটনাস্থলে নিহত হন রুবেল।
নিহত রুবেল দেবিদ্বার পৌরসভার বারেরা গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। এ ঘটনায় পরিবার ও দলীয়ভাবে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। এদিকে ঘটনার সময় রুবেলের স্ত্রী হ্যাপী আক্তার ছিলেন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। রুবেল শহিদ হওয়ার এক মাস ছয় দিন পর ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক পুত্র সন্তান। কিন্তু সেই পুত্র সন্তানের সৌভাগ্য হলো না তার জন্মদাতা পিতাকে দেখার। এ নিয়ে শহিদ রুবেলের পরিবারের সদস্যদের বিলাপ যেন আর শেষ হয় না।
অন্যদিকে ঘর আলোকিত করে নতুন অতিথি এলেও পাহাড়সম দুশ্চিন্তা যেন পিছু ছাড়ছে না তাদের, কারণ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি রুবেল যে রয়েছেন না ফেরার দেশে। শহিদ রুবেলের সন্তানদের জীবন যখন অনিশ্চয়তায় ঠিক এ সময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে উপজেলা বিএনপি।
কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এএফএম তারেক মুন্সীর পক্ষ থেকে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল সদ্য ভূমিষ্ঠ সন্তানের দায়িত্ব নিতে হাসপাতালে ছুটে যায়। তারা শহিদ রুবেলের সন্তান ও পরিবারের খোঁজখবর নেন এবং উপহার সামগ্রী প্রদান করেন।
কুমিল্লা উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম ভিপি শাহীন বাসসকে বলেন, শহিদ রুবেলের বড় মেয়ে নৌফা ও সদ্য ভূমিষ্ঠসহ দুই সন্তান বড় না হওয়া পর্যন্ত লেখাপড়ার যাবতীয় খরচসহ সব দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এএফএম তারেক মুন্সী। আমরা তার পক্ষ থেকে রুবেলের স্ত্রী ও সন্তানদের খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে এসেছি। ভবিষ্যতেও যে কোনো সময় বিএনপি তার পরিবারের পাশে দাঁড়াবে।
এ ছাড়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) শহিদ রুবেলের বাড়িতে যান এবং দুই লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করেন। এ সময় তিনি রুবেলের নবজাতক সন্তানকে কোলে তুলে নেন এবং পরিবারের অন্যদের খোঁজখবর নেন। শহিদ পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
শহিদ রুবেলের স্ত্রী হ্যাপি আক্তার বলেন, আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমে তারা আগেই জানতে পেরেছিলেন তাদের কোলজুড়ে আসছে একটি ছেলে সন্তান, তাই আগে থেকেই ছেলের নাম রাইয়ান রাখার সিদ্ধান্ত নেন রুবেল। তার নির্ধারিত নামেই নবজাতক সন্তানের নাম রাখা হয় রাইয়ান। হ্যাপি আরও বলেন, সন্তানকে ঘিরে আমার স্বামীর অনেক স্বপ্ন ছিল। সন্ত্রাসীরা আমার স্বামীকে হত্যা করে আমার সন্তানদের এতিম করে দিয়ে গেল। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।রুবেলকে হারিয়ে দুর্বিষহ জীবন পার করছি আমরা।
রুবেলের স্ত্রীর সিজার অপারেশন ও ওষুধপত্রের যাবতীয় দায়িত্ব গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেবিদ্বার উপজেলা শাখা। এ বিষয়ে কুমিল্লা উত্তর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম শহীদ বলেন, দেশের জন্য শহিদ রুবেলের আত্মত্যাগ বিফলে যায়নি। তাঁর আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বৈরাচারী হাসিনার পতন হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চেষ্টা করেছে শহিদ রুবেলের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর। এরই অংশ হিসেবে তাঁর স্ত্রীর সিজার অপারেশন ও ওষুধপত্রের যাবতীয় খরচ বহন করেছে।
সূত্র: বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।