জুমবাংলা ডেস্ক : সময় বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলাচ্ছে কাজের ধরন। তাই কর্মক্ষেত্রে কিংবা চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে তরুণরা নিত্যনতুন দক্ষতা অর্জনে মনোযোগ দিচ্ছে।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, আগামী ১৫ বছরে তরুণদের জন্য অন্তত ৬০০ মিলিয়ন নতুন কাজের সুযোগ তৈরী হবে, যার অনেকগুলোই হয়তো এখন আমরা কল্পনাও করতে পারছি না। তরুণদের সেদিকে উৎসাহ দিতেই জাতিসংঘ প্রতিবছরের ১৫ জুলাই পালন করে ‘ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ স্কিলস ডে’।
স্কিল দু’রকমের হয়ে থাকে। হার্ড স্কিল ও সফট স্কিল। হার্ড স্কিল মূলত নির্দিষ্ট চাকরিকে টার্গেট করে বিষয়ভিত্তিক কারিগরি স্কিল। যেমন– কম্পিউটার, সাধারণ জ্ঞান, ভাষা শিক্ষা ইত্যাদি। আর সফট স্কিল হল ব্যক্তিগত আবেগ, অনুভূতি ও বুদ্ধিমত্তা নির্ভর। যেমন– সৃজনশীলতা, নেতৃত্বগুণ, টিমওয়ার্ক, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা ইত্যাদি।
বাংলাদেশে হার্ড স্কিলের দিকে ঝোঁক বেশি থাকলেও সাম্প্রতিককালে তরুণরা সফট স্কিল শিখতেও মনোযোগী হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে ২০২২ সালে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ছিল ৪.৭ শতাংশ। কিন্তু তরুণদের মধ্যে (১৫-২৪ বছর) বেকারত্বের হার অনেক বেশি ১২.৯ শতাংশ।
এর আগের বছর ‘স্কিলস গ্যাপ ও ইয়ুথ এমপ্লয়মেন্ট’ এই শিরোনামে জার্মানভিত্তিক সংস্থা এফইএসের সঙ্গে মিলে একটা গবেষণা চালায় বাংলাদেশের সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ–সিপিডি। এতে দেখা যায় চাকরির বিজ্ঞাপন দেয়ার পর নিয়োগ দিতে গিয়ে কোম্পানিগুলো সবচেয়ে বেশি অসুবিধায় পড়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতাসম্পন্ন আবেদনকারী খুঁজে পেতে।
তাই এমন পরিস্থিতিতে তরুণরা চাকরির বাজারে নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে যেসব বিষয়ের উপর জোর দিচ্ছেন।
ডিজিটাল লিটারেসি
ডিজিটাল লিটারেসি মানে হল প্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যমকে বোঝা ও সেগুলো ব্যবহার করতে পারার জ্ঞান। যে জ্ঞান অর্জন বর্তমান সময়ের তরুণদের প্রথম পছন্দ। ডিজিটাল লিটারেসি স্কিল একইসাথে হার্ড ও সফট স্কিলের সমন্বয়। একদিকে ডিজিটাল ডিভাইস ও ডিজিটাল মিডিয়া বোঝা, যাতে এগুলোর সঠিক ব্যবহার করে অনলাইনে তথ্য বিশ্লেষণ ও আপলোড করা যায়।
আবার অন্যদিকে কি করে বিপদ এড়িয়ে প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে ও নিরাপদে কাজে লাগানো যায় সেই উপায় খুঁজে বার করা। আর ডিজিটাল লিটারেসি স্কিলের জন্য অবশ্যই দরকার পড়ে প্রাথমিক পর্যায়ের কম্পিউটার জ্ঞান।
তবে যুবকদের স্কিল নিয়ে কাজ করা তাসমিয়া রহমান বলেন, বাংলাদেশে ডিজিটাল এক্সেস সবার জন্য সমান না হওয়াটা এই দক্ষতা অর্জনে বাঁধা।
ফ্রিল্যান্সিং
ফ্রিল্যান্সিং হল কোনো নির্দিষ্ট চাকরিতে না থেকে নিজের পায়ে দাঁড়ানো। এটি মূলত প্রথাগত চাকরির ধারণা ভেঙে দিয়েছে। কারণ এর জন্য সবসময় কোনো অফিসের দরকার পড়ে না, কাজের কোনো নির্দিষ্ট সময়ও থাকে না, কখনো কখনো স্বল্পকালীন কোনো ফ্রিল্যান্সিং ঘরে বসেই করা যায়।
এই ধারণা অনেক আগে থেকে সারা বিশ্বে থাকলেও ডিজিটাল মাধ্যম ফ্রিল্যান্সিংয়ের এক নতুন জগত খুলে দিয়েছে। এক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং হয়ে পড়েছে অনেক বেশি প্রযুক্তি নির্ভর সব কাজ।
আপনি সফটওয়্যার বা প্রোগ্রামিং জানেন, গ্রাফিক্স ডিজাইন বা কোডিংয়ে দক্ষ হলে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আপনি নিজেই কাজ খুঁজে নিতে পারেন। এছাড়া ডেটা এন্ট্রি, এসইও, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডিজিটাল মার্কেটিং, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি কাজেরও চাহিদা আছে।
বাংলাদেশে এখন অনেক ফ্রিল্যান্সিং প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যারা ‘অনলাইন মার্কেটপ্লেস’ থেকে কাজ খুঁজে আনছে এবং দেশের তরুণদের সেসব কাজে যুক্ত করছে। এ কাজে যুক্ত হতে কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও চলে, তাইতো ফ্রিল্যান্সিংয়ে দক্ষতা অর্জনে মনোযোগ তরুণদের।
ভাষা শিক্ষা
বাড়তি স্কিল হিসেবে ভাষা শিক্ষা সবসময় আগ্রহের শীর্ষে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী লিটন আহমেদ ১ম বর্ষে পড়ার পাশাপাশি একটা ইংরেজি ভাষা শিক্ষার কোর্সে ভর্তি হয়েছেন।
“আসলে আমাদের জীবনে সবখানে এখন ইংরেজির দরকার পড়ে। নিজের আত্মবিশ্বাসের জন্যই আমি আসলে এই কোর্সটা করছি।”
লিটনের মতো এরকম অনেক তরুণ ছাত্রজীবনেই একটা ২য় ভাষা শিখতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এক্ষেত্রে ইংরেজি চাহিদার শীর্ষে থাকলেও অন্যান্য ভাষার প্রতিও তরুণদের আগ্রহ বাড়ছে।
যা সিভিতে একটা বাড়তি যোগ্যতা যোগ করে আবার চাকরির ক্ষেত্রে এগিয়ে দেয়। একইসাথে অনুবাদ বা দোভাষীর মতো নতুন কাজের সুযোগ তৈরী করে এই স্কিল।
বাংলাদেশে এখন ইংরেজির পাশাপাশি ফ্রেঞ্চ, জার্মান, চীনা ভাষা শিক্ষার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এছাড়া অনেকে অনলাইন টুল ব্যবহার করেও নতুন ভাষা শিখে থাকেন।
উদ্যোক্তা হবার দক্ষতা
অন্ট্রাপ্রেনারশিপ মানে হল আর্থিক ঝুঁকি নিয়ে একটা নতুন ব্যবসা শুরু করা। চাকরির বাইরে এদিকে এখন বেশ আগ্রহ তরুণদের। নিজের কোনো ভাবনা বা অভিনব কোনো পণ্য সবার সামনে তুলে ধরে চান তরুণরা।
তবে সেজন্য দক্ষতা অর্জনে মনোযোগ তাদের। কীভাবে নতুন ব্যবসা শুরু করা যায়, ঝুঁকিগুলো কী, মার্কেটিং কিভাবে করতে হবে, মুনাফা অর্জনে কোনদিকে নজর দিতে হবে, ফান্ড কীভাবে পাওয়া যায়, এসব নানা বিষয় শিখতে চান তারা।
উদ্যোক্তা মাকসুমা সুরভী মনে করেন তরুণদের ভাবনার জগতটা বদলে যাচ্ছে। “এখন আর কেউ টিউশনি করাতে চায় না, নিজে কিছু করতে চায়। নানা আইডিয়া শেয়ার করে তারা, অনলাইনেও এসব নিয়েই ঘাঁটাঘাঁটি করে।”
কমিউনিকেশন
বর্তমান বিশ্বে আপনি এখন যে কাজই করতে যান, ভালোভাবে কথা বলতে পারা বা প্রেজেন্টেশনটা খুব জরুরি। অনেকের অনেক যোগ্যতা বা সার্টিফিকেট থাকা সত্ত্বেও কমিউনিকেশন স্কিলের অভাবে পিছিয়ে পড়েন তারা। এ কারণেই এদিকটাতে নজর এখন তরুণদের।
অনলাইনে-অফলাইনে কমিউনিকেশন বা যোগাযোগে দক্ষতা বাড়াতে নানান কোর্সও করানো হয় এখন।
তাসমিয়া রহমান বলেন, “ডিজিটাল স্কিল শিখতে এখন অনেকেই আগ্রহী, তবে আমার মনে হয় তাদের এই অন্যান্য যোগ্যতার দিকেও নজর দেয়া উচিত। যেমন কমিউনিকেশন, প্রেজেন্টেশন, কিভাবে চাইতে হবে কিছু, অনার্স-মাস্টার্স করেও আমাদের ছেলেমেয়েরা এগুলো শেখে না।”
সূত্র: বিবিসি বাংলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।